ডেঙ্গু ছড়িয়ে পড়েছে সারা দেশে। এ বছর বর্ষার শুরুতেই ঢাকায় মশাবাহিত ডেঙ্গুজ্বরের প্রাদুর্ভাব ঘটলেও এখন ৬৩ জেলায়ই এই রোগে আক্রান্তরা চিকিৎসা নিচ্ছেন। গতকাল মঙ্গলবার পর্যন্ত দেশে রোগটিতে আক্রান্তের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১৫ হাজার ৩৬৯ জনে। বিপুলসংখ্যক এই রোগীকে সেবা দেওয়ার জায়গা নেই হাসপাতালগুলোতে। যে কারণে পরিস্থিতি আরও ভয়াবহ হয়ে উঠেছে। ডেঙ্গুর এই ভয়াবহতা বাংলাদেশ ছাড়াও দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া, দক্ষিণ ও মধ্য আমেরিকাসহ অনেক দেশে ছড়িয়ে পড়েছে। এই অবস্থায় এডিস মশার বংশ বিস্তার প্রতিরোধ ও মশা থেকে বাঁচতে নানা ধরনের উদ্যোগ নেওয়ার পরামর্শ দিচ্ছেন বিশেষজ্ঞরা। বিশেষজ্ঞদের বরাতে মসকিটো ম্যাগনেট নামে একটি ওয়েবসাইটে কয়েকটি উদ্ভিদের কথা বলা হয়েছে, যেগুলো ঘরবাড়ি থেকে মশা দূরে রাখতে সহায়তা করে। মসকিটো ম্যাগনেট যে উদ্ভিদগুলোর কথা বলা হয়েছে তার বেশ কয়েকটি পাওয়া যায় আমাদের দেশেও। ডেঙ্গু প্রাদুর্ভাবের এই সময়ে ঘরের আশপাশে সেই উদ্ভিদগুলো লাগিয়ে আমরাও মশার কামড় থেকে বাঁচতে পারি।
তুলসী : তুলসী আমাদের সবার পরিচিত চিরহরিৎ গুল্মজাতীয় উদ্ভিদ। এই গাছ কীটপতঙ্গ নিবারক হিসেবে খুবই কার্যকর। এর ঝাঁজালো গন্ধের কারণে মশা ও মাছি কাছেই আসতে পারে না। তাই মশার হাত থেকে বাঁচতে ঘরের পাশে লাগাতে পারেন গাছটি। এ ছাড়া মশা, মাছি তাড়াতে তুলসী পাতার রসের স্প্রেও ব্যবহার করা হয়।
পুদিনা : বহু আগে থেকেই মানুষ পুদিনাকে ঘরের আবহাওয়া তাজা ও সুগন্ধময় করতে ব্যবহার করত। অষ্টাদশ শতক থেকে এটি ঔষধি গাছ হিসেবে পরিচিতি লাভ করেছে। উদ্ভিদটি মশা, মাছিসহ নানা ধরনের কীটপতঙ্গ তাড়াতে সক্ষম। এই উদ্ভিদকে অবিষাক্ত পতঙ্গ প্রতিরোধক বলা হয়। তাই ঘরের পাশে বা বারান্দায় পুদিনা গাছ লাগালে তার গন্ধে ঘরে মশার উপদ্রপ কমবে। এ ছাড়া এর পাতার রস ঘরে ছিটালেও মশার হাত থেকে বাঁচা যাবে।
গাঁদা ফুল : গাঁদা ফুলের গাছ ও ফুল সবার কাছেই অতি পরিচিত। বিভিন্ন উৎসব ও বিশেষ বিশেষ দিবসে এই ফুলের ব্যবহার লক্ষণীয়। তবে যদি কোথাও মশার উপদ্রব বেড়ে যায়, তবে এই ফুলগাছের টব সেখানে রাখলে মশা পালিয়ে যাবেই। তাই ঘরের বিভিন্ন খোলা স্থান, যেমনÑ দরজা, জানালা ইত্যাদির পাশে টব রেখে দিতে পারেন।
লেমন গ্রাস : উদ্ভিদটি ভিন্ন দেশের হলেও আমাদের দেশেও এখন দু®প্রাপ্য নয়। রেস্তোরাঁয় খাবারকে সুগন্ধময় করতে এটি প্রচুর পরিমাণে ব্যবহৃত হয়। রান্নায় ব্যবহার ছাড়াও এই গাছটি মশা তাড়াতে ব্যবহার করা যায়। লেমনÑ গাছ থেকে প্রাপ্ত সাইট্রোনেলা তেল মশাকে দূরে রাখে। এ ছাড়াও লেমন গ্রাস স্প্রে হিসেবে ব্যবহার করেও মশা তাড়ানো যায়। এজন্য একটি পাত্রে কিছু পানি ও লেমন গ্রাস নিয়ে সিদ্ধ করতে হবে। যখন পানির বর্ণ হলুদ হবে, তখন তা নামিয়ে সারারাত ঢেকে রাখতে হবে। অতঃপর মিশ্রণটি স্প্রে হিসেবে ব্যবহার করে মশা তাড়ানো যাবে।
কলস ফুল : কলস ফুল এক ধরনের মাংসাশী উদ্ভিদ। এই গাছের রূপান্তরিত পাতাগুলো এক ধরনের ফাঁদ হিসেবে কাজ করে। ছোট ছোট কলসি উদ্ভিদগুলো মাছি, গোবরে পোকা, পিঁপড়া ইত্যাদি পোকামাকড় শিকার করে। কলসের সঙ্গে আটকানো পাতাটি লম্বা নলের মতো কাজ করে। কলসের মতো দেখতে এই পাতাটির উজ্জ্বল রং আর ভেতরে জন্ম নেওয়া মধুর লোভে মশা-মাছি ভেতরে প্রবেশ করে। তখন কলসটির মুখে থাকা ঢাকনা আপনা-আপনি আটকে যায়। ফলে ভেতরে আটকে পড়া মশা বা মাছি মারা যায়।