শনিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১০:০১ পূর্বাহ্ন




চাকরি বাঁচাতে জরায়ু কেটে ফেলছেন কর্মজীবি নারীরা

নতুনবার্তা ডেস্ক
  • প্রকাশ: শনিবার, ৬ জুলাই, ২০১৯

ভারতের কিছু রাজ্য আছে যেখানে গ্রামের পর গ্রাম খুঁজেও একজন নারী পাওয়া যায় না যার জরায়ু আছে। পেটের দায়েই এই পথ বেছে নিয়েছে সেসব অঞ্চলের নিম্ন আয়ের নারী শ্রমিকরা।

বেশির ভাগেরই বয়স ২০ থেকে ২২-এর কোটায়। অনেকেই দুই বা ততোধিক সন্তানের মা। ঋতুচক্রের সময়ে মালিকের নানা গঞ্জনা শুনতে হয়, বেতন কাটা যায়।

জরিমানা হয়। তাই পেটের তাগিদে, অভাবের তাড়নায় অপারেশন করে জরায়ু ফেলে দেন এই দরিদ্র নারী শ্রমিকরা। বিবিসি

জরায়ু কেটে ফেলা মানে একজন নারীর শরীরটাকে বিকলাঙ্গ করে ফেলা। জরায়ু কেটে ফেললে সেই নারী শারীরিক যন্ত্রণা যত না ভোগ করেন, তার চেয়ে মানসিক যন্ত্রণা কোনো অংশেই কম না।

সভ্যতার শুরু থেকেই পিরিয়ডের সময়টাতে নারীকে অস্পৃশ্য অশূচি বলে গণ্য করে ভারতীয়রা। তাকে হয় ঘরের কোণে আবদ্ধ থাকতে হয় অথবা একা থাকতে হয় সবাইকে এড়িয়ে।
সামাজিক বা ধর্মীয় অনুষ্ঠানে সেই নারীদের যাওয়া একদম নিষেধ। হাজার বছর ধরে এটা চলে আসছে। সম্প্রতি ধর্মীয় গোঁড়ামি ও অসভ্যতার প্রাচীর ভাঙতে শুরু করেছেন শহরের শিক্ষিত কর্মজীবী নারীরা। এর ফলে চিত্রটা একটু একটু করে পালটাচ্ছে।

কিন্তু শহরের শিক্ষিত মানুষের মাঝে সামান্য পরিবর্তন আনা সম্ভব হলেও লাখ লাখ গ্রামের চিত্র ভয়াবহ। কোটি কোটি গরিব মানুষ ভারতে। যেসব পরিবারে নারী পুরুষ উভয়েই কাজ করে।

দিনমজুর হিসেবে শিল্প বা কৃষি খাতে। সাম্প্রতিক সময়ে যে ঘটনাগুলো আলোড়ন তুলেছে, তার একটি মহারাষ্ট্রে। হাজার হাজার তরুণী স্বেচ্ছায় জরায়ু কেটে ফেলছেন হাসপাতালে গিয়ে।

এর ফলে কিছু গ্রাম এখন জরায়ুহীন নারীদের গ্রাম হিসেবে পরিচিত হয়ে গেছে। যারা এই অপারেশন করিয়ে নিচ্ছেন, তারা কৃষি শ্রমিক। ক্ষেত থেকে আখ কাটেন।

মহারাষ্ট্র ভারতে আখের উর্বর ক্ষেত্র। বছরে ৬ মাস এসব আখ খেতে কাজ করতে আসেন হাজার হাজার শ্রমিক। এই নারী-পুরুষরা একটানা ছয় মাস আখ কাটার কাজ করেন।
গেল মাসে মহারাষ্ট্রের রাজ্যসভায় নারীদের এই অবমাননাসূচক শারীরিক ক্ষতির প্রসঙ্গ উত্থাপন করেন বিধায়ক নীলম ঘোরে। তার কথার সাথে একমত হয়ে রাজ্যের স্বাস্থ্যমন্ত্রী একনাথ সিন্ধে।

মন্ত্রী জানান, ৩ বছরে বীদ জেলায় চার হাজার ৬০৫টি হাইসটেরেকটমি সার্জারি হয়েছে। এই সার্জারিতে অনেক সময় নারীর প্রজননতন্ত্রের প্রায় সব কিছুই কেটে ফেলা হয়।

যদিও মন্ত্রী বলেন, সব অপারেশন আখ শ্রমিক নারীদের করা হয়েছে, তা নয়। তবে বিষয়টিকে গুরুত্ব দিয়ে ব্যবস্থা নেয়ার জন্য একটি তদন্ত কমিটি করার ঘোষণা দেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী।

বিবিসির মারাঠি প্রতিবেদক বীদ জেলার একটি গ্রামের নাম উল্লেখ করে জানান, এই গ্রামবাসীর ৮০ ভাগই অক্টোবর থেকে মার্চ মাস পর্যন্ত আখ চাষের এলাকায় চলে যান। তাদের মধ্যে যারা মহিলা, তাদের অর্ধেকেরই জরায়ু ও প্রজননতন্ত্রের বিভিন্ন অংশ কেটে ফেলা হয়।
বলাবাহুল্য, এই অপারেশন নারীর শরীরে মারাত্মক ক্ষতিকর প্রভাব ফেলে। কথা বলে জানা গেছে, সার্জারি করা নারীরা শরীরে ব্যথাবেদনা, শক্তিহীনতাসহ অনেক সমস্যায় ভোগেন।

খুব দ্রুত বুড়িয়ে যান, কর্মক্ষমতা হারিয়ে ফেলেন। পাশবিক এই আচরণের আরেক উদাহরণ দেখা গেছে তামিলনাড়ু রাজ্যে। সেখানের কাহিনী আরও ভয়াবহ। কোটি ডলারের গার্মেন্টস বাণিজ্য, বিশাল বিশাল কারখানা।

অনেক মেয়ে কাজ করে। পিরিয়ডের সময় কাহিল লাগে অনেকের, অনেকের পেইন হয়, সে ক্ষেত্রে তাদের যেখানে এক বা দু’দিন ছুটি দেয়া উচিত, তা দূরে থাক, উল্টো করে কী, ব্যথা কমানোর জন্য নাম না জানা ওষুধ খেতে দেয়। থমসন রয়টার্স ফাউন্ডেশন এ বিষয়টি নিয়ে কাজ করেছে।

image_pdfimage_print




সংবাদটি ভাল লাগলে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published.

এই বিভাগের আরো সংবাদ










© All rights reserved © 2019 notunbarta24.com
Developed by notunbarta24.Com
themebazarnotunbar8765