শনিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ০৫:৪৯ পূর্বাহ্ন




১৯ শিক্ষার্থীর জন্য ৪ জন শিক্ষক!

লালমণিরহাট প্রতিনিধি
  • প্রকাশ: শনিবার, ১৯ অক্টোবর, ২০১৯

জেলার আদিতমারী উপজেলার নামুড়ী বালিকা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে মাত্র ১৯ জন শিক্ষার্থীর জন্য শিক্ষক রয়েছে ৪ জন। ৩১ বছর ধরে একই চেয়ারে রয়েছেন প্রধান শিক্ষক। আর এ খবর জানে না শিক্ষা বিভাগ।

শনিবার বেলা ১২টায় ওই বিদ্যালয়ে গিয়ে দেখা যায়, তৃতীয় শ্রেণিতে মাত্র ৬জন, চতুর্থ শ্রেণিতে ৫জন ও পঞ্চম শ্রেণিতে ৮জন মিলে মোট ১৯জন শিক্ষার্থী উপস্থিত রয়েছে। তবে তারা সবাই ক্লাস বাদ দিয়ে মাঠে খেলছিল। প্রধান শিক্ষক হাজিরা খাতায় স্বাক্ষর করে চলে গেছেন। বাকি তিনজন শিক্ষকের একজন অফিস কক্ষে ঘুমাচ্ছেন অন্য দুইজন বাইরে গল্প করছেন। এমন সময় সাংবাদিকদের উপস্থিতি টের পেয়ে শিক্ষকরা দ্রুত শিক্ষার্থীদের নিয়ে ক্লাসে ফিরে যান।

স্থানীয় একাধিক ব্যক্তি জানান, পাশেই রয়েছে একাধিক বিদ্যালয়। এছাড়া চারিদিকে আবাদী জমির মধ্যখানে বাঁশ ঝাড়ের ভেতর স্কুলটি। ক্ষুদে শিক্ষার্থীরা গ্রীষ্মকালে ক্ষেতের আইল (রাস্তা) দিয়ে বিদ্যালয়ে যেতে পারলেও বর্ষাকালে যেতে হয় পানি পেরিয়ে। তবুও বিদ্যালয়টির অনুমোদন দেয়া হয়েছে।

জানা গেছে, উপজেলার পলাশী ইউনিয়নের নামুড়ী গ্রামে ১৯৮৮ সালে ওই বিদ্যালয়টি প্রতিষ্ঠা করেন স্থানীয় শিক্ষানুরাগী ব্যক্তিরা। প্রতিষ্ঠাকালীন সময় পড়াশোনার মান ভাল থাকায় শিক্ষার্থীর সংখ্যা ছিল অনেক । পরবর্তীতে প্রধান শিক্ষক বীরেন্দ্র নাথ সরকার দায়িত্ব পাওয়ার পর থেকে শিক্ষার মান নষ্ট হতে থাকে। এক পর্যায়ে বাধ্য হয়ে অভিভাবকরা তাদের সন্তানদের অন্য বিদ্যালয়ে ভর্তি করেন। বর্তমানে কাগজ কলমে ১৩৭ জন শিক্ষার্থী থাকলেও বাস্তবে রয়েছে মাত্র ১৬ থেকে ২০ জন। অভিযোগ উঠেছে, প্রধান শিক্ষক ক্ষমতাসীন দলের নেতা হওয়ার সুযোগে বিদ্যালয়টি রেজিস্ট্রেশন করেন এবং তার স্ত্রী সুজাতা রানীকে সহকারী শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ দেন। পরবর্তীতে ২০১৩ সালে বিদ্যালয়টি জাতীয়করণ হয় । জাতীয়করণের পর প্রতিষ্ঠাকালীন ৩জন শিক্ষকের বদলি হলেও প্রধান শিক্ষক বীরেন্দ্রনাথ সস্ত্রীক রয়েছেন বহাল তবিয়তে। ফলে তাদের নিজস্ব গড়া নিয়ম নীতিতেই চলছে বিদ্যালয়ের পাঠদান। বিদ্যালয় টিকিয়ে রাখতে পাশের বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের নাম দিয়ে হাজিরা খাতা তৈরি করেছেন এবং সে অনুযায়ী ভোগ করেছেন যাবতীয় সরকারি সুযোগ সুবিধা। ধান ক্ষেত পেরিয়ে বাঁশ ঝাড়ের ভেতর বিদ্যালয়ের অবস্থান। নেই মূল ফটক। তথ্যের ডিসপ্লে বোর্ড থাকলেও নেই কোনো তথ্য। প্রবেশ পথেই বিপদজনক টয়লেটের খোলা ম্যানহোল। সেখানে প্রায়ই ঘটছে দুর্ঘটনা।
কয়েকজন অভিভাবক অভিযোগ করে বলেন, প্রধান শিক্ষক ও তার স্ত্রীর একক সিদ্ধান্তে চলে বিদ্যালয়টি। সবাই বদলি হলেও তাদের বদলি হয় না। আওয়ামী লীগের প্রভাবশালী নেতা, এমপি, মন্ত্রীদের সঙ্গে তার বেশ সখ্যতা থাকায় শিক্ষা অফিস থেলে বিদ্যালয়টি পরিদর্শন করা হয় না।
তবে প্রধান শিক্ষকের স্ত্রী বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক সুজাতা রানী বলেন, আগের তুলনায় পাঠদান ভালো হলেও যোগাযোগ ব্যবস্থা ভালো না থাকায় শিক্ষার্থীরা আসে না। শিক্ষার্থীরা বিলম্বে আসায় ছুটির আগে হাজিরা নেওয়া হয়।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক উপজেলা শিক্ষা অফিসের এক কর্মচারী বলেন, ওই বিদ্যালয়ের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নিলে বড় নেতাদের ফোন আসে। তাই কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয় না।

প্রধান শিক্ষক বীরেন্দ্র নাথ বলেন, পাঠদানের মানের জন্য নয়, রাস্তার অভাবে শিক্ষার্থী নেই। এখানে ভুয়া শিক্ষার্থী নেই। তবে যারা অনুপস্থিত তারা সবাই পরিবারের সঙ্গে কাজের সন্ধানে এলাকার বাইরে থাকে। বাড়ির পাশে হলেও বদলির চেষ্টা করেছি। কিন্তু কর্তৃপক্ষ বদলি না করায় একই চেয়ারে কাটছে প্রায় ৩১ বছর।
আদিতমারী উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার এনএম শরীফুল ইসলাম খন্দকার বলেন, বিদ্যালয়টির এমন করুণ পরিস্থিতি আমার জানা নেই। দ্রুত পরিদর্শন করে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

 

image_pdfimage_print




সংবাদটি ভাল লাগলে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published.

এই বিভাগের আরো সংবাদ










© All rights reserved © 2019 notunbarta24.com
Developed by notunbarta24.Com
themebazarnotunbar8765