শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ০৫:৫১ অপরাহ্ন




খাচ্ছেন না খাবার, রিফাতের ঘরে কাঁদছেন মিন্নি

বরগুনা প্রতিনিধি
  • প্রকাশ: বৃহস্পতিবার, ৫ সেপ্টেম্বর, ২০১৯

বরগুনার বহুল আলোচিত রিফাত শরীফ হত্যা মামলায় গ্রেপ্তার তাঁর স্ত্রী আয়শা সিদ্দিকা ওরফে মিন্নি শারীরিক ও মানসিকভাবে ভেঙে পড়েছেন। উন্নত চিকিৎসার জন্য মিন্নিকে কয়েক দিনের মধ্যে রাজধানী ঢাকা অথবা বিভাগীয় শহর বরিশালে নিয়ে যাওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছেন বলে জানিয়েছেন তার পরিবারের সদস্যরা।
আইনি প্রক্রিয়া শেষে মঙ্গলবার (৩ সেপ্টেম্বর) বিকেলে কারাগার থেকে মুক্তি পান তিনি। কারাফটক থেকে বের হয়ে বাবা মোজাম্মেল হোসেন কিশোরসহ পরিবারের অন্য সদস্যদের সঙ্গে সরাসরি বরগুনা শহরের নয়াকাটা-মাইঠা এলাকার বাবার বাড়িতে চলে যান তিনি। হাইকোর্ট থেকে পাওয়া জামিনের শর্তানুযায়ী গণমাধ্যমের সঙ্গে কোনো ধরনের কথা বলতে পারবেন না মিন্নি।

বৃহস্পতবিার (৫ সেপ্টেম্বর) তার বাবার বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, আত্মীয়-স্বজন ও পাড়া-প্রতিবেশীরা দলে দলে মিন্নির সঙ্গে দেখা করতে আসছেন। তবে তাদের সঙ্গে কোনো ধরনের কথা বলছে না তিনি। চুপচাপ হয়ে নিজের রুমের মধ্যেই বসে থাকছেন। খুব একটা খাওয়া-দাওয়াও করছেন না। শুধু মিন্নি আর নিহত রিফাত এই বাড়িতে এলে যে কক্ষে থাকতেন সেখানে গিয়ে বারবার হাউমাউ করে কাঁদছেন।

মেয়ের সম্পর্কে জানতে চাইলে মিন্নির বাবা মোজাম্মেল হোসেন কিশোর কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেন, ‘আমার মেয়ে শারীরিক ও মানসিকভাবে খুবই অসুস্থ হয়ে পড়েছে। মেয়েটির খাওয়া-দাওয়া বন্ধ হয়ে গেছে। একা একা থাকে, কারও সঙ্গে কথা পর্যন্ত বলে না। বারবার ওর ছোট ভাই ও বোনকে জড়িয়ে ধরে হাউমাউ করে কেঁদে ওঠে। কখনো আবার রিফাতের রুমের পাশে গিয়ে কেঁদে ওঠে। দিন দিন মেয়েটা অসুস্থ হয়ে পড়ছে। তাই খুব শিগগিরই ওকে ঢাকা অথবা বরিশাল নিয়ে উন্নত চিকিৎসা করাব।’

মোজাম্মেল বলেন, ‘আমার মেয়ে নিরপরাধ। তাকে জোর করে ফাঁসানোর চেষ্টা করা হয়েছিল। আমার মেয়ে নির্দোষ, তাই তাকে হাইকোর্ট জামিন দিয়েছে। আমার মেয়েকে দীর্ঘদিন পর আমাদের কাছে পেয়েছি, এটাই আমাদের কাছে ঈদের আনন্দের মতো লাগছে। আমরা খুশি যে আমার মেয়েকে জামিনে মুক্ত করতে পেরেছি। রিফাত আমার ছেলের মতো ছিল, সে যাতে পরপারে ভালো থাকে তার জন্য বাড়িতে আজ দোয়া করিয়েছি।’

জামাই রিফাতের বাবা দুলাল শরীফ তার ছেলের খুনিদের সঙ্গে হাত মিলিয়েছে এমনটা আক্ষেপ করে মোজাম্মেল বলেন, ‘শুধু একটাই খারাপ লাগছে, আমার ছেলের মতো জামাইটা আজ আর আমাদের মাঝে নেই। আর ওর খুনিদের সঙ্গে যোগসাজশে আমার মেয়েকে ফাঁসাতে মরিয়া হয়ে উঠছে আমার বেয়াই। ছেলের রক্তের ওপর পাড়া দিয়ে কীভাবে দুলাল শরীফ এভাবে করতে পারল আমি ভেবে পাই না।’

অন্যদিকে মিন্নির মা মিলি আক্তার বলেন, ‘আমার মেয়ে আমার কাছে ফিরে এসেছে। আমি আর কিছুই চাই না। আমার মেয়েকে কতদিন দেখিনি। এবার দুই চোখ ভরে দেখব। আমার মেয়ে শুকিয়ে কাঠ হয়ে গেছে। মেয়েটার দিকে চোখ তুলে তাকানো যায় না।’

মিন্নির চাচা আবু সালেহ বলেন, ‘সত্যের জয় হয়েছে। ষড়যন্ত্রকারীরা মিন্নিকে ফাঁসিয়ে খুনিদের আড়াল করার যে পরিকল্পনা করেছিল মিন্নির জামিনে মুক্ত হওয়ার মধ্য দিয়ে কিছুটা হলেও তা লাগব হয়েছে। আমরা আশা করছি সুষ্ঠু তদন্তের মাধ্যমে রিফাতের সব হত্যাকারীকে আইনের আওতায় আনা হোক।’

গত ২৬শে জুন সকালে বরগুনা জেলা শহরের কলেজ রোডে রিফাত শরীফকে তার স্ত্রীর সামনেই কুপিয়ে জখম করে একদল লোক। পরে হাসপাতালে নেয়ার পথে তার মৃত্যু হয়। ঐ ঘটনার একটি ভিডিও ইন্টারনেটে ছড়িয়ে পড়লে দেশজুড়ে চাঞ্চল্য সৃষ্টি হয়।

এরপর রিফাত হত্যা মামলায় বরগুনার পুলিশ মিন্নিকে গত ১৬ই জুলাই গ্রেপ্তার দেখায়। অথচ এর আগে এই হত্যাকাণ্ডের একজন প্রত্যক্ষদর্শী সাক্ষী হিসেবেই মামলায় নাম ছিল মিন্নির।

এর আগে হত্যা মামলাটির বাদী, নিহত রিফাত শরীফের বাবা, আবদুল হালিম দুলাল শরীফ গত ১৩ই জুলাই এক সংবাদ সম্মেলন করে অভিযোগ করেন, তার পুত্রবধূ (মিন্নি) এই হত্যাকাণ্ডে জড়িত বলে তিনি সন্দেহ করেন।

পুলিশ এই রিফাত হত্যা মামলায় আদালতে চার্জশিট দাখিল করেছে গেল রোববার। সেই চার্জশিটে মিন্নিকে অভিযুক্ত দেখানো হয়েছে। সেই চার্জশিট গ্রহণ করা না করার প্রশ্নে শুনানি হবে ১৮ই সেপ্টেম্বর।

image_pdfimage_print




সংবাদটি ভাল লাগলে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published.

এই বিভাগের আরো সংবাদ










© All rights reserved © 2019 notunbarta24.com
Developed by notunbarta24.Com
themebazarnotunbar8765