বুধবার, ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ০৮:১৬ অপরাহ্ন




গোপালগঞ্জের কাশিয়ানী হাসপাতালে হাজিরা দিয়েই চলে যান চিকিৎসকরা

গোপালগঞ্জ প্রতিনিধি
  • প্রকাশ: সোমবার, ২২ জুলাই, ২০১৯

‘দাক্তার দ্যাহাইয়ে তাড়াতাড়ি বাড়ি যাবো। তাই অনেক সকালে হাসপাতালে আইছি। কিন্তু দুপুর শেস হইয়া গ্যাছে এহনো দাত্তার আসে নাই। আমি গ্যাছে মঙ্গোলবারও হাসপাতালে আইসা দাক্তাররে পাই নাই।’ কথাগুলো বলছিলেন কাশিয়ানী উপজেলার পরানপুর গ্রাম থেকে চিকিৎসা নিতে আসা বিলকিস বেগম (৬০)। তিনি দীর্ঘ দিন ধরে মাজার ব্যথায় ভূগছেন। অর্থোপেডিকস চিকিৎসক আর কে দাসকে দেখানোর জন্য কাশিয়ানী উপজেলা হাসপাতালে এসেছেন তিনি। সারাদিন অপেক্ষা করেও চিকিৎসকের দেখা পাননি।
হাসপাতালটিতে বর্তমান ১৪ জন চিকিৎসক কর্মরত থাকলেও চিকিৎসা সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন রোগীরা। সকালে চিকিৎসকরা হাসপাতালে এসে হাজিরা খাতায় স্বাক্ষর এবং ইলেকট্রনিক্স মেশিনে হাজিরা দিয়ে ব্যক্তিগত কাজে চলে যান বাইরে। সারাদিনও দেখা মেলে না অনেক চিকিৎসকের। রোগীরা ঘন্টার পর ঘন্টা চিকিৎসকের অপেক্ষায় দাঁড়িয়ে থাকেন কাউন্টারের সামনে। ফলে দূর-দূরান্ত থেকে চিকিৎসা সেবা নিতে আসা রোগীরা ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন। চিকিৎসা সেবা না পেয়ে নির“পায় হয়ে বাড়িতে ফিরে যান।
জানা গেছে, ২০১১ সালে হাসপাতালটিকে ৩৫ শয্যা থেকে ৫০ শয্যায় উন্নীত করা হয়। ২০১৮ সালে এটি ১শ’ শয্যায় উন্নীত করা হয়। যার কাজ এখনও চলমান রয়েছে। ৫০ শয্যায় হাসপাতালে ১৮ জন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকে পদ থাকার কথা। সেখানে রয়েছে ১৪ জন চিকিৎসক।
রবিবার সকাল ৮ টায় সরেজমিনে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপে­ক্সে গিয়ে দেখা গেছে, টিকেট কাউন্টারে সামনে ২৫/৩০ লোক টিকেটের জন্য লাইনে দাঁড়িয়ে আছেন। কিন্তু টিকেট কাউন্টারে ঝুলছে তালা। সাড়ে ১০টার দিকে এক লোক এসে টিকিট কাউন্টার খুলে বসলেন। চোখের সমস্যার জন্য বোয়ালমারী উপজেলার টেংরাইল গ্রাম থেকে আসা ষাটোর্ধ্ব আশীষ বিশ্বাস একটি টিকিট কিনে জমা দিলেন। দেড় ঘন্টা পর চিকিৎসকের ক¶ে প্রবেশের ডাক পেলেন। ভিতরে প্রবেশের পর টিকিটের ওপর তারিখ লিখে বিদায় করলেন কর্মরত নার্সরা। অভিযোগ রয়েছে, হাসপাতালে চক্ষু চিৎসকের পদ শূন্য থাকায় স্টাফ নার্সরা রোগী দেখেন। আবার প্রতিদিন ১০ জনের বেশি রোগী দেখেন না তারা। দশ জনের বেশি হলে ১৫ দিন পর আসার জন্য তারিখ লিখে দিয়ে বিদায় করেন।
এ ব্যাপারে নার্স অঞ্জনা খানম বলেন, আমরা এখানে রোগী দেখি এবং মাঝে-মধ্যে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে গোপালগঞ্জ চক্ষু হাসপাতাল থেকে ডাক্তাররা দেখেন। তবে আমরা এখান থেকে সব কিছুই ঠিক করে ওষুধ লিখে দেই আর স্যারেরা স্বাক্ষর করে দেন।
চারতলা ভবনের প্রথম তলায় জর“রি বিভাগের পাশের কক্ষটিতে বসে আছেন আবাসিক মেডিকেল অফিসার (আরএমও) মোহাম্মাদ ইকবাল খান। একই সারির শেষের দিকের কক্ষে বসেন মেডিকেল অফিসার (ইউনানী) মৌসুমি ইসলাম। তিনি সকাল ৮ টায় ইলেট্রনিক্স হাজিরায় উপস্থিত দেখিয়ে বেলা ১১ টায় হাসপাতালে এসেছেন। এছাড়াও তিনি ইউনানী চিকিৎক হয়েও ওষুধ কোম্পানীর উৎকোচের বিনিময় অধিকাংশ সময় চিকিৎসাপত্রে এ্যালোপ্যথিক ওষুধ লিখেন বলে অভিযোগ রোগীদের।
মেডিকেল অফিসার ডা. দিদার হোসেন। তিনি সকাল ৮টা দশ মিনিটে হাজিরা দিয়ে চলে গেছেন বাইরে। সাড়ে ১০ টায় কর্মস্থলে আসেন তিনি। হাজিরা খাতায় স্বাক্ষর থাকা বাকি চারজনের মধ্যে জুনিয়র কনসালটেন্ট সবুজ কুমার পাত্রের দেখা দুপুর দেড়টায় মিললেও আর কারও দেখা মেলেনি সারাদিন।
দ্বিতীয় তলায় অর্থোপেডিকস চিকিৎসক আর কে দাসের (রামকৃষ্ণ) কক্ষে গিয়ে দেখা যায়, তার চেয়ারের উপর একটি বিড়াল বসে আছে। কক্ষের বাহিরে অনেক লোক দাঁড়িয়ে আছেন। সকাল ৮টায় হাজিরা খাতায় স্বাক্ষর করে চলে গেছেন তিনি। সারাদিন তিনি কর্মস্থলে আসেননি।
উপজেলার ছিলছড়া গ্রামের তাজুল মোল্যা ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, কাজীর গরু কিতাবে আছে, গোয়ালে নেই। ডাক্তার নামে থাকলেও সারাদিন দেখা পাওয়া যায় না। টাকা ও সময় ব্যয় করে এসে ডাক্তার না পেয়ে বাড়ি ফিরে চলে যেতে হয়।
উপজেলা স্বাস্থ্য পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা মো: কাইয়ুম তালুকদারে সাথে মুঠোফোনে কথা হলে তিনি বলেন, আমাদের স্বাস্থ্য কমপে­ক্স শতভাগ ভাল চলছে বলবো না। তবে অন্যান্য স্থানের চেয়ে ভালই চলছে। আর কোন কোন ডাক্তার হাজিরা দিয়ে চলে গেছেন আমার জানা নেই। খোঁজ নিয়ে যথাযথ ব্যবস্থা নেয়া হবে।

image_pdfimage_print




সংবাদটি ভাল লাগলে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published.

এই বিভাগের আরো সংবাদ










© All rights reserved © 2019 notunbarta24.com
Developed by notunbarta24.Com
themebazarnotunbar8765