শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ০৮:০১ অপরাহ্ন




২১ শাখাতেই সোনালী ব্যাংকের খেলাপি ঋণ ৯ হাজার কোটি টাকা

স্টাফ রিপোর্টার :
  • প্রকাশ: শুক্রবার, ৫ জুলাই, ২০১৯

হলমার্ক কেলেঙ্কারিতে অভিযুক্ত সোনালী ব্যাংকের লাগামহীনভাবে বাড়ছে খেলাপির ঋণের পরিমাণ। এছাড়া কৃষি ঋণ বিতারণ সহ সবধরণের সূচকে পিছয়ে পড়ছে সোনালী ব্যাংক। কোনভাবেই আগাতে পারছেনা রাষ্ট্রায়ত্ত সোনালী ব্যাংক। ২০১৮ সালের বার্ষিক হিসাব বিবরণী অনুযায়ী ব্যাংকের মোট শাখার সংখ্যা ১ হাজার ২১৪টি। খেলাপি ঋণের পরিমাণ ১২ হাজার ১৮৮ কোটি টাকা। এর মধ্যে ৯ হাজার ৮৯ কোটি টাকাই আবার মাত্র ২১টি শাখায়। যা মোট খেলাপি ঋণের ৭৪ দশমিক ৫৭ শতাংশ।

সোনালী ব্যাংকের ঢাকা স্থানীয় কার্যালয়ের মোট খেলাপি ঋণের পরিমাণ ২ কোটি ৯১ লাখ টাকা। এর মধ্যে খেলাপি হওয়া একটি প্রতিষ্ঠানের নাম অলটেক্স ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড। ৩০ মাস মেয়াদ উত্তীর্ণ হওয়ায় কোম্পানিটির দুইটি ঋণ খেলাপিতে পরিণত হয়েছে। বিশ্বাসের ঋণ বা লোন এগেইনস্ট ট্রাস্ট রিসিপ্টের (এলটিআর) প্রকৃতির প্রথম ঋণটির পরিমাণ ১ কোটি ৪৪ লাখ টাকা এবং অন্যটির পরিমাণ ৫৩ লাখ টাকা।

বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউ করপোরেট শাখার খেলাপি ঋণের পরিমাণ ১ কোটি ৮৮ লাখ টাকা। পুরো টাকাটাই খেলাপি হয়ে আছে মৌসুমী নিট কম্পোজিট লিমিটেডের কাছে। সোনালী ব্যাংকের কাছে টাকাটা অশ্রেণিকৃত হলেও বাংলাদেশ ব্যাংকের পরিদর্শনের মাধ্যমে এটিকে নিম্নমানের খেলাপি হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে।

চট্টগ্রাম লালদীঘি শাখার মোট খেলাপি ঋণের পরিমাণ ২৫ কোটি ৪৯ লাখ টাকা। মাত্র দুই গ্রুপের মাধ্যমেই খেলাপি হয়েছে এ টাকা। একটি প্রতিষ্ঠানের নাম আরেফিন টেক্সটাইল মিলস লিমিটেড এবং অন্যটি মেসার্স চিটাগং টেক্সটাইল লিমিটেড। চার থেকে পাঁচ বছর পর্যন্ত কিন্তি পরিশোধ করতে না পারায় খেলাপির তালিকার অন্তর্ভুক্ত হয়েছে আরেফিন টেক্সটাইল লিমিটেড। এছাড়া ১৫৯ মাস ধরে কোন কিন্তি পরিশোধ করেনি চিটাগং টেক্সটাইল।

খুলনা করপোরেট শাখায় মোট খেলাপি ঋণের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ১৫ কোটি ৯০ লাখ টাকা। পুরোটাই জয় জুট মিলস লিমিটেডের কাছে। নাটোর শাখার মোট খেলাপি ঋণের পরিমাণ ৪৩ কোটি ৩৮ লাখ টাকা। এই শাখায় সবচেয়ে বড় ঋণ খেলাপির নাম নাটোর সুগার মিলস লিমিটেড। ২৪ কিন্তি পরিশোধ না করায় ৪৩ কোটি ২৭ লাখ টাকার শীর্ষ খেলাপিতে পরিণত হয়েছে নাটোর সুগার মিল।

রংপুর করপোরেট শাখার মোট খেলাপির পরিমাণ ২০ কোটি ৭৬ লাখ টাকা এবং জয়পুরহাট শাখার মোট খেলাপির পরিমাণ ১৮ লাখ টাকা। জয়পুরহাট শাখার বেশিরভাগই শস্য ঋণ বলে জানা গেছে।

এছাড়া ২০১৮ সালের ৩১ ডিসেম্বর শেষে সোনালী ব্যাংকের অনিরীক্ষিত আর্থিক বিবরণী অনুযায়ী মোট ঋণ ও অগ্রিমের পরিমাণ ছিল ৪৬ হাজার ৩৭২ কোটি ১ লাখ টাকা। এর বিপরীতে ব্যাংকের বিবেচনায় শ্রেণিকৃত বা খেলাপি ঋণের পরিমাণ ছিল ১২ হাজার ৯৩ কোটি ৩৭ লাখ টাকা। যা মোট ঋণ ও অগ্রিমের ২৬ দশমিক ০৮ শতাংশ। অপরদিকে বাংলাদেশ ব্যাংকের পরিদর্শন দল কর্তৃক হিসাব অনুযায়ী খেলাপির পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ১২ হাজার ১৮৮ কোটি ৩৪ লাখ টাকা। যা সোনালী ব্যাংকের হিসাবের তুলনায় ৯৪ কোটি ৯৭ লাখ টাকা বেশি।
বাংলাদেশ ব্যাংকের পরিদর্শন দল নয়টি শাখার মোট ৯৬টি অশ্রেণিকৃত ঋণ হিসাব নতুন করে শ্রেণিকরণ করে। যার মাধ্যমে ব্যাংকের হিসাবের চেয়ে শুন্য দশমিক ৭৯ শতাংশ খেলাপি বেড়েছে।

সোনালী ব্যাংকের হিসাবে নিম্নমানের ঋণ ছিল ৮১৪ কোটি ৫৯ লাখ টাকা কিন্তু বাংলাদেশ ব্যাংকের হিসেবে তা কমে দাঁড়ায় ৮০৫ কোটি ৮ লাখ টাকা। সোনালী ব্যাংকের হিসাবে অনিশ্চিত ঋণের পরিমাণ ছিল ৩৮২ কোটি ৪ লাখ টাকা, কিন্তু বাংলাদেশ ব্যাংকের পরিদর্শন দল কর্তৃক উল্লেখিত অনিশ্চিত ঋণের পরিমাণ বেড়ে দাঁড়ায় ৩৮৯ কোটি ৭৪ লাখ টাকা। এদিকে ক্ষতিজনক বা কুঋণের পরিমাণ ১০ হাজার ৮৯৬ কোটি ৭৪ লাখ টাকা দেখালেও বাংলাদেশ ব্যাংকের পরিদর্শনে তা বেড়ে দাঁড়ায় ১০ হাজার ৯৯৩ কোটি ৫২ লাখ টাকা।

এবিষয়ে সোনালী ব্যাংকের ঋণ বিভাগের ব্যবস্থাপক (জিএম) মো. নূরুল ইসলাম বলেন, এই ২১ শাখায় এখন পর্যন্ত যেসব ঋণ খেলাপিতে পরিণত হয়েছে তার বেশিরভাগই পুরাতন। ২০০০ থেকে ২০০৯ সালের খেলাপিঋণগুলো এখন পর্যন্ত আদায় করতে পারিনি। তাদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেওয়ার পরেও কোনো কাজ হচ্ছে না। বারবার আদালত থেকে স্থগিতাদেশের সুবিধা নিচ্ছে তারা। তবে ২০১০ সালের পর থেকে সকল ঋণের গুণগত মান যাচাইবাছাই করেই দেওয়া হয়েছে।

image_pdfimage_print




সংবাদটি ভাল লাগলে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published.

এই বিভাগের আরো সংবাদ










© All rights reserved © 2019 notunbarta24.com
Developed by notunbarta24.Com
themebazarnotunbar8765