মঙ্গলবার, ২৩ এপ্রিল ২০২৪, ১১:০৩ অপরাহ্ন




হজ্ব পরবর্তী হাজিদের তাক্বওয়াভিত্তিক জীবন অপরিহার্য

নতুনবার্তা ডেস্ক
  • প্রকাশ: শনিবার, ১৪ সেপ্টেম্বর, ২০১৯

পাঁচটি স্তম্ভের মধ্যে লা-ইলাহা ইল্লালাহু, সালাত, রোজা হলো দৈহিক উপাসনা। হজ্ব এবং জাকাত অর্থনৈতিক উপাসনা। তবে হজ্বের ক্ষেত্রে মুমিনদের দেহের পাপাত্মাসমূহ পরিস্কার হয়ে যায়। রাছূলাল্লাহ (সা:) বলেন, মানুষ গোসল করলে যেমন শরীরের ময়লা আবর্জনা সমুহ দূর হয়ে যায় তেমনি হজ্ব করলে মানবজাতির পাপাচারসমূহ মুছে যায়। হজ্বের সাথে দৈহিক এবং অর্থনৈতিক উপাসনা এর সংমিশ্রণ, আর জাকাত শুধু ধন-সম্পদের পবিত্রতার খাজনা। পাপ মানুষকে জাহান্নামের উপযুক্ত করে তোলে, কিন্তু হজ্ব মানবজাতির অতীতের সব পাপসমূহকে মুছে দেয়। তাই হজ্বে মাবরুর (মাক্ববুল হজ্ব) শেষে সকল হাজীদের ইহজগতের সব দৃশ্যপট পাল্টে যায়।

হজ্ব করার পর হাজীরা মহান রাব্বুল আলামীনের ভয়ে তাক্বওয়া, এর জ্ঞান আসে তখন বায়তুল্লাহ তত্তয়াফের কারণে আল্লাহপাক হাজীদেরকে রহমতের চাঁদরে পরিবেষ্টিত করে তোলেন। হজ্বের দ্বারা বান্দা আল্লাহর নিকট জান এবং মাল দিয়ে সাদা কাপড় পরে আত্মসমর্পন করে, মহান রবের মেহমান হওয়ার পূর্ণাঙ্গ সুযোগ লাভ করে। আল্লাহর ঘর এবং রাসূল (সা:) এর রওজা মোবারক তাওয়াফ শেষে বান্দা দুনিয়া বিমুখ হয়ে যায়। অনেকেই নিয়ত করেন যে, পৃথিবীর সকল ঝামেলা- ঝড় -ঝঞ্ঝা মুক্ত হয়ে হজ্ব ব্রত পালন করা চাই। কেননা হজ্বের আনুষ্ঠানিকতা বান্দার মাঝে বিশাল আমানতের জিম্মাদারী তৈরি করে ঈমানকে মজুবত করে ফেলে। ফলে হাজীরা হজ্ব পূর্ব অবস্থার চেয়ে প্রকৃত মুমিন হিসেবে পরহেজগারি নিয়ে চলতে সক্ষম হয়। ঐ কারণে অনেক সময়ে জীবন ভাটির সন্ধিক্ষণে অনেকেই হজ্ব করতে চায়, যাতে করে সে হজ্ব থেকে ফিরে এসে জগতে-সংসার অর্থাৎ দুনিয়া বিমুখ হয়ে যেতে পারে।

হজ্বে যাবার আগে একজন হজ্বযাত্রী রাফাছ অর্থাৎ অশ্লীলতা, ফুছুক অর্থাৎ পাপাচার এবং জিদাল অর্থাৎ ফিৎনা, ফ্যাসাদ থেকে মুক্ত থেকে তাকওয়া অর্জনের অনুশীলন করবে। হজ্বে মাবরুর কবুল হজ্বের জন্য যেমন তাক্বওয়া বা খোদাভীতি অপরিহার্য, তেমনি একজন সফল ও স্বার্থক হাজীর-হজ্ব-পরবর্তী আগামী জীবন যাত্রা সম্পূর্ণ ইসলামী শরীয়ত মোতাবেক চলা-অপরিহার্য! হাজী উপাধি নিয়ে আল- কোরআন এবং সুন্নত বিরোধী কর্মকান্ডে জড়িত হওয়ার কোন সুযোগ নেই! (বাকারাহ আয়াত,২০৩-২০৬) রাসূল (সা:) এরশাদ করেন যে, হজ্ব শেষে হাজীরা নিষ্পাপ মাছুম শিশুর মত হয়ে যায়! নিজেকে সিবগাতাল্লাহ অর্থাৎ আল্লাহর রঙে রঙিন হয়ে যায়।

আল্লাহর প্রিয়বান্দা হিসেবে পরিণত হয়, যা মৃত্যুকাল পর্যন্ত কখনো মুছে যায় না। হজ্বের ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপট, আরাফাতে অবস্থান, তাওয়াফে জিয়ারাহ সহ রাসূল (সা:) এর স্মৃতি বিজড়িত পূত-পবিত্রস্থান সমূহ প্রত্যক্ষ করার ফলে হাজীদের চিন্তা-চেতনা, চরিত্র ও কর্ম এবং জীবন বৈশিষ্ট্য ইতিবাচকভাবে পরিবর্তন হয়ে যায়। শয়তান কে পাথর মারার পর হাজীর অন্তরে তাবৎ শয়তানি শক্তি দুর হয়। কালো কাপড় হলো শোকের প্রতিক, দুঃখের প্রতিক। আর সাদা কাপড় হলো পবিত্রতার প্রতিক। মানুষ মারা গেলে সাদা কাপড়ে কবরে যায়। আর হজে গেলে হাজিরা ইহরাম নামক সাদা কাপড় পড়ে আল্লাহর সান্নিধ্য লাভের আশায়। আমি যখন সাদা কাপড় পড়ে আল্লাহকে বললাম, হে আল্লাহ-আমাকে ক্ষমা করে দাও। তাহলেতো আর পাপাচার করার প্রশ্নই আসে না।

রাসুল (সা:) কে জনৈক সাহাবী জিজ্ঞাসা করলেন ইয়া রাসূল্লালাহ (সা:) গোনাহ বা পাপের রং কি রকম? রাসূল (সা:) উত্তরে বললেন গোনাহ বা পাপের রং হলো কালো, কেননা হাজরে আসওয়াদ কালো পাথরটি ভিত্তিপ্রস্থর কালীন সময়ে হাজরে আবইয়াজ (সাদা পাথর) ছিলো। ঐ পাথরে মানবজাতি চুমু এবং চুম্মন খেতে খেতে পাথরটি মানুষের গোনাহ সমুহ চুম্বকের মত নূরের আলো দ্বারা মানুষের পাপসমূহ চুষতে চুষতে পাথরটি কালো হয়ে যায়। এবং মানবজাতি গোনাহ মুক্ত হয়ে আল্লাহর জমিনে প্রত্যাবর্তন করে। হজ পরবর্তী সময়ে সকল হাজীদের তাক্বওয়া ভিত্তিক জীবন একমাত্র পাথেয়। অনেকে হজ থেকে ফিরে এসে হালাল-হারাম যাচাই বাছাই না করে সেই অতীতের জীবন চলে যায়। সাফা-মারওয়াতে সায়ী হাজীর মনে দৃঢ় আশা ও মহান আল্লাহর রহমতের অবারিত প্রত্যাশা বৃদ্ধি করে।

হজ পরবর্তি দুনিয়া বিমুখ হাজিদেরকে আল্লাহর পক্ষ থেকে অনেক কঠিন পরীক্ষারও সম্মুখীন হতে হয়। মুসলিম জাতির আদি পিতা হযরত ইব্রাহিম (আ:) এর জন্য কঠিনতম পরীক্ষা, শিশুপুত্র হযরত ইসমাইল (আ:) আর হাজেরা (আ:) কে শুস্ক মরুপ্রান্তরে ক্ষুধার জ্বালা, প্রাণনাশের আশংকাসহ অনেক পরীক্ষা দিতে হয়েছে। সাফা-মারওয়াতে ‘ছায়ী’ প্রত্যেক হাজী ও উমরাহ পালনকারীকে পবিত্র কোরআনুল কারীমের সুরায়ে বাক্বারাহ এর ১৫১-১৫৭ আয়াতে বর্ণিত সকল অপশক্তির বিরুদ্ধে অগ্নিপরীক্ষা টিকে থাকতে নির্দেশ দেয়া হয়েছে। নিশ্চয় সাফা-মারওয়া আল্লাহর নিদর্শনগুলোর অন্তর্ভুক্ত (বাকারাহ ১৫৮)। অন্যত্র আল্লাহপাক বলেছেন, আর যারা আল্লাহকে স্মরণ করবে, আল্লাহপাকও তাদের স্মরণ করবেন (বাক্বারাহ আয়াত ১৫১)। মহান রাব্বুল আলামিন কে শুধু জিকির এর সাথে স্মরণ এবং তাঁর সাথে সকল ইসলাম বিরোধী অপশক্তির বিরুদ্ধে রুখে দাড়াতে হবে।

আল্লাহর রাস্তায় কার্যক্রম থাকা অবস্থায় বাকীদের পরীক্ষা করা হবে ভয়ভীতি, ক্ষুধা, অনাহার, জানমাল, ও ফসলাদির ক্ষতি সাধন করে (বাক্বারাহ আয়াত ১৫৫)। আর সত্যিকারের মুমিনরা বিপদে পতিত হলেও তাঁহারা কোন ভয়ভীতি না করে বরং তাঁহারা বলবে আমরা তো আল্লাহর জন্য, আর নিশ্চিত আমরা আল্লাহর নিকট ফিরে যাবো (বাক্বারাহ আয়াত ১৫৬)। আর এ পরীক্ষায় যারা টিকে থাকবে সেই দৃঢ়বিশ্বাসীরা মহান আল্লাহর সমগ্র দয়া, রহমত ও হেদায়ত প্রাপ্ত (বাক্বারাহ আয়াত ১৫৭)।

সুরায়ে বাক্বারাহ ১৫১-১৬৩ আয়াত থেকে বুঝা যায় যে, ছায়ীর তাৎপর্য মুসলিম উম্মাহ এর দায়িত্ববোধ ও কর্তব্য কতটুকু অপরিহার্য। সকল হাজীদের রহমতের চাদরে পরিবেষ্টিত জীবন হোক, চোখের গুনাহ মুক্ত, হাতের গুনাহ, পায়ের গুনাহ, কথার গুনাহ, সকল অঙ্গ প্রত্যঙ্গের পাপাচার মুক্ত জীবন। জঙ্গলে অনেক কাঁটা, কিন্তু চলা-ফেরা করতে যেন পায়ে কাঁটা না বিদে। তাহলে সৌভাগ্যময় হয়ে যাবে একজন হাজীর মৃত্যুর পূর্ব মূহুর্তের জীবন যাত্রা। ইসলামী জীবন ব্যবস্থার পঞ্চম স্তম্ভ বিশিষ্ট গৃহের মত চতুর্থ স্তম্ভ হজ্ব তাক্বওয়া ভিত্তিক জীবন যাত্রার সহায়ক ভূমিকা পালন করবে ইনশাল্লাহ।

লেখক : সাবেক ইমাম ও খতিব, বাংলাদেশ জাতীয় সংসদ

image_pdfimage_print




সংবাদটি ভাল লাগলে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published.

এই বিভাগের আরো সংবাদ










© All rights reserved © 2019 notunbarta24.com
Developed by notunbarta24.Com
themebazarnotunbar8765