শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ০৪:২৫ অপরাহ্ন




বাড়িওয়ালার দায়িত্ব-কর্তব্য সম্পর্কে যা বলে ইসলাম

নতুনবার্তা ডেস্ক
  • প্রকাশ: বৃহস্পতিবার, ২৪ অক্টোবর, ২০১৯

বসবাস বা ব্যবসার প্রয়োজনে বাড়ি বা দোকান ভাড়া নেওয়া নতুন কোনো বিষয় নয়। এটি যুগ যুগ ধরে চলমান একটি ব্যবস্থা। ভাড়া বাসায়ই সারাটি জীবন পার করে দিচ্ছে এমন মানুষের সংখ্যাও অনেক। আজকের নাগরিক সভ্যতায় এটি খুবই স্বাভাবিক একটি বিষয়ে পরিণত হয়েছে।

জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে ইসলামের রয়েছে গুরুত্বপূর্ণ দিকনির্দেশনা ও বিধি-বিধান। ভাড়া দেওয়া-নেওয়াও এর ব্যতিক্রম নয়। তাই শরিয়তে যেমন ভাড়া প্রক্রিয়ার স্বীকৃতি রয়েছে, তেমনি সুস্পষ্টভাবে বর্ণনা করা হয়েছে এর বিধি-বিধান। এখানে ইসলামের দৃষ্টিতে বাড়িওয়ালার দায়িত্ব-কর্তব্য সম্পর্কে জানা যাক।

বাড়িওয়ালার কর্তব্য

১. বাড়িভাড়া কত তা নির্ধারণ করে জানানো। গ্যাস, পানি ও বিদ্যুৎ বিল কি ভাড়ার অন্তর্ভুক্ত, না এর বাইরে তা-ও জানানো উচিত। তা ছাড়া নাইট গার্ড ও বাড়ির দারোয়ানের বেতন, ময়লা ফেলার বিল কিংবা অ্যাপার্টমেন্টগুলোর সার্ভিস ফি ইত্যাদি মিলে প্রতি মাসে সাধারণত কত টাকা হয়, তা চুক্তির সময়ই বলে দেওয়া আবশ্যক।

২. প্রতি মাসের ভাড়া কত তারিখের মধ্যে দিতে হবে তা চুক্তির সময়ই জানিয়ে দিতে হবে।

৩. বাড়ির সুবিধা-অসুবিধা সম্পর্কে ভাড়াটিয়াকে আগেই অবহিত করা আবশ্যক। বিশেষত এমন ত্রুটি, যা জানতে পারলে সে হয়তো ভাড়াই নেবে না বা যেটির কারণে ভাড়া আরো কম হবে; যেমন—পানি নিয়মিত বা সার্বক্ষণিক না থাকা বা নিয়ম করে পানি দেওয়া। গ্যাসের সমস্যা থাকা বা দারোয়ান না থাকার কারণে গেট নিয়ন্ত্রণের সমস্যা ইত্যাদি। কোনো কোনো বাসার লাইনে এক-দুইবার পানি ছাড়া হয় আর সবাই তখন নিজ নিজ পাত্রে জমা করে রাখে। এমন হলে ভাড়া চুক্তির সময়ই বলে দিতে হবে।

৪. বাড়ির মূল ফটক রাত কয়টায় বন্ধ করা হবে তা নির্ধারিত থাকলে চুক্তির সময়ই বলে দিতে হবে। যেন এ নিয়ে পরবর্তী সময়ে দ্বন্দ্ব না হয়।

৫. প্রতিটি ফ্ল্যাটে পৃথক বিদ্যুৎ মিটার লাগানো উচিত, যেন প্রতিটি পরিবার নিজ খরচ অনুযায়ী বিল পরিশোধ করতে পারে। কোনো কোনো বাড়িতে সব ফ্ল্যাটের জন্য একটিমাত্র মিটার থাকে। ফলে সব ফ্ল্যাটের হিসাব একত্রে হয় এবং এক মিটারে অতিরিক্ত খরচ হওয়ার কারণে ইউনিটপ্রতি খরচ অনেক বেড়ে যায়। এ ক্ষেত্রে আরেকটি ত্রুটি হলো, মিটার একটি হওয়ার কারণে সবার ওপর সমহারে বিল চাপানো হয়। এতে বিদ্যুতের স্বল্প ব্যবহারের কারণে যাদের বাস্তব খরচ কম হয়, তাদের ওপর জুলুম হয়ে যায়। এ জন্য প্রতিটি ফ্ল্যাটে ভিন্ন ভিন্ন মিটার লাগানো দরকার।

তেমনি পানির মিটারও ভিন্ন হওয়া উচিত, যেন যার যার খরচ অনুযায়ী বিল নেওয়া যায়। শোনা গেছে যে ওয়াসা এভাবে প্রতি ইউনিটের জন্য আলাদা মিটার দেয় না। তাই এ ক্ষেত্রে নিম্নোক্ত দুটি পদ্ধতির কোনো একটি অবলম্বন করা যেতে পারে—

১. প্রতি মাসের পানির বিল সব ফ্ল্যাটের ভাড়াটিয়াদের মাঝে বণ্টন করে দেবে।

২. বাড়িওয়ালা পানির বিল বাসাভাড়ার অন্তর্ভুক্ত করে নেবে। পানির নামে ভিন্ন বিল নেবে না। এ ক্ষেত্রে বাড়িওয়ালা পূর্ণ ভাড়ার মালিক হবে। আর পানির বিল সে-ই আদায় করবে।

দ্বিতীয় পদ্ধতিটি প্রথমটির চেয়ে নিরাপদ ও উত্তম। কিন্তু বর্তমানে কোনো কোনো বাসায় প্রতিটি ফ্ল্যাটের জন্য ৩০০ বা ৪০০ টাকা পানির বিল নেওয়া হয়। কোনো কোনো এলাকায় এর চেয়েও বেশি নেওয়া হয়। ফলে কখনো কখনো এই টাকা দ্বারা মোট পানির বিল দিয়েও আরো উদ্বৃত্ত থেকে যায়। বাড়িওয়ালাকে নিজের ফ্ল্যাটে ব্যবহৃত পানির বিল দিতে হয় না। উপরন্তু কখনো তা আরো অতিরিক্ত থেকে যায়। অথচ বাড়িওয়ালার জন্য পানির বিলের ক্ষেত্রে ব্যবসা করা বা অতিরিক্ত নেওয়া ঠিক নয়। কারণ সরকারের পক্ষ থেকে ওয়াসার পানি দ্বারা ব্যবসা করার অনুমতি নেই। আর এটি ভাড়াটিয়াকে জানিয়েও করা হয় না। বরং কেউ কেউ তো খরচ অনুযায়ী নেওয়ার দাবি করে খরচের চেয়ে বেশি নিয়ে থাকে। তাই এভাবে অতিরিক্ত নেওয়া বৈধ হবে না।

৬. বাড়ি ছেড়ে দিতে হলে কত দিন আগে জানাতে হবে তা-ও চুক্তির সময় জানিয়ে দিতে হবে। কেউ কেউ দুই মাস আগে জানানোর শর্ত করে। চলতি মাসে বা আগের মাসে জানানোর শর্ত করা দূষণীয় নয়। সুতরাং বাড়ি ছাড়ার সময় চূড়ান্ত করা হলে ভাড়াটিয়া ও বাড়িওয়ালা উভয়ের জন্যই তা পালনীয় হবে।

লক্ষণীয় হলো, অনেক ক্ষেত্রে দেখা যায় চলতি মাসের ৫ তারিখের মধ্যে জানানোর শর্ত থাকে। তবে ভাড়াটিয়া যদি এর এক বা দুই দিন পরে জানায় তাহলেও পরবর্তী মাসের ভাড়া আদায় করা হয়। কখনো দুই মাস আগে জানানোর কথা থাকে। কিন্তু ভাড়াটিয়া হয়তো সময়মতো জানাতে পারেনি। তখন সে বাসা ছেড়ে দেওয়ার পরও তার থেকে দুই মাসের ভাড়া কেটে রাখা হয়। এ ক্ষেত্রে বাড়িওয়ালা বাস্তবেই অন্যত্র ভাড়া দিতে না পারলে পূর্বশর্ত অনুযায়ী ভাড়াটিয়া থেকে নির্ধারিত টাকা নেওয়া বৈধ হতে পারে।

তবে বাড়ির মালিকের কর্তব্য অন্যত্র ভাড়া দেওয়ার চেষ্টা করা। বাসাটি ভাড়া হয়ে গেলে আগের ভাড়াটিয়া থেকে অতিরিক্ত যা নেওয়া হয়েছে তা তাকে ফেরত দেওয়া জরুরি। নতুন ভাড়াটিয়া পেয়ে গেলে আগের ভাড়াটিয়া থেকে এ সময়ের ভাড়া রেখে দেওয়া জায়েজ হবে না।

image_pdfimage_print




সংবাদটি ভাল লাগলে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published.

এই বিভাগের আরো সংবাদ










© All rights reserved © 2019 notunbarta24.com
Developed by notunbarta24.Com
themebazarnotunbar8765