বৃহস্পতিবার, ২১ মার্চ ২০২৪, ০৯:৪৪ অপরাহ্ন




বাজারে কমতে শুরু করেছে পেঁয়াজের দাম

নিজস্ব প্রতিবেদক
  • প্রকাশ: সোমবার, ১৮ নভেম্বর, ২০১৯

মিসর থেকে কার্গো বিমানে করে পেঁয়াজ আমদানি করছে একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠান। সরকার তাকিয়ে আছে এই বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের পেঁয়াজের দিকে। প্রতিষ্ঠানটি পেঁয়াজ আমদানি করার পর সেটি টিসিবির মাধ্যমে ঢাকার পাশাপাশি সারা দেশে বিক্রি করবে সরকার। তবে কবে আসবে কার্গো বিমানের পেঁয়াজ সে বিষয়ে খোদ টিসিবির কর্মকর্তারাই আছেন ধোঁয়াশার মধ্যে। বাণিজ্য মন্ত্রণালয় ও টিসিবি সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।

অন্যদিকে আমদানি করা পেঁয়াজ আসার পর যাতে নির্বিঘ্নে ট্রাকে করে ন্যায্যমূল্যে ঢাকার পাশাপাশি সারা দেশে বিক্রি করা যায় তার জন্য প্রয়োজনীয় সহযোগিতা চেয়ে রোববার সব জেলা প্রশাসককে চিঠি দিয়েছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। পেঁয়াজ বিক্রির সময় বা আনা-নেওয়ার সময় যাতে পেঁয়াজ ছিনতাই না হয় এবং যাতে সুশৃঙ্খলভাবে পেঁয়াজ বিক্রি করা যায় তা নিশ্চিত করতে বলা হয়েছে চিঠিতে।

এ বিষয়ে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিব একেএম আলী আহাদ খান রোববার বলেন, পেঁয়াজের দাম কমাতে সরকার বিভিন্ন রকম উদ্যোগ নিয়েছে। তার মধ্যে অন্যতম একটি হচ্ছে টিসিবির মাধ্যমে বিক্রি বাড়ানো। এখন কেবল ৪৫ টাকা কেজি দরে রাজধানীতে বিক্রি করা হচ্ছে। মিসরের পেঁয়াজ হাতে আসার পর সারা দেশে বিক্রি করা হবে টিসিবির মাধ্যমে। এ বিষয়ে নিরাপত্তা নিশ্চিত করাসহ প্রয়োজনীয় সহযোগিতা করতে জেলা প্রশাসক ও সব জেলার এসপিকে রোববার (গতকাল) চিঠি দেওয়া হয়েছে। আসলে আমরা পূর্বপ্রস্তুতির অংশ হিসেবে এসব পদক্ষেপ নিচ্ছি।

বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, দেশে পেঁয়াজের সরবরাহ ও মূল্য স্বাভাবিক রাখতে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে টিসিবির মাধ্যমে সরাসরি তুরস্ক থেকে, এস আলম গ্রুপ মিসর থেকে, বেশ কয়েকটি প্রতিষ্ঠান আফগানিস্তান ও সংযুক্ত আরব আমিরাত থেকে জরুরি ভিত্তিতে কার্গো উড়োজাহাজে পেঁয়াজ আমদানির উদ্যোগ নিয়েছে। প্রয়োজনীয় আনুষ্ঠানিকতা ইতোমধ্যে সম্পন্ন হয়েছে। অল্প সময়ের মধ্যে পর্যাপ্ত পেঁয়াজ বাজারে সরবরাহ করা সম্ভব হবে। এছাড়া সমুদ্রপথে আমদানি করা পেঁয়াজ বাংলাদেশের পথে রয়েছে, শিগগিরই বড় পেঁয়াজের চালান বাংলাদেশে এসে পৌঁছবে।

তাছাড়া দেশের গোয়েন্দা সংস্থা ও আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী এ বিষয়ে তৎপর রয়েছে। কেউ পেঁয়াজ অবৈধ মজুদ করলে, কারসাজি করে অতি মুনাফা অর্জনের চেষ্টা করলে বা অন্য কোনো উপায়ে বাজারে পেঁয়াজের সঙ্কট সৃষ্টির চেষ্টা করলে তাদের বিরুদ্ধে আইন মোতাবেক কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। বাজার মনিটরিং করার জন্য বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের বেশ কয়েকটি টিম কাজ করছে। জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদফতর বাজার অভিযান জোরদার করেছে।

অন্যদিকে বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি অস্ট্রেলিয়া সফরে থাকলেও বাণিজ্য সচিব জাফর উদ্দীনের নেতৃত্বে গতকাল দফায় দফায় মিটিং করা হয়েছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে। এ বিষয়ে বাণিজ্য সচিব গতকাল সময়ের আলোকে বলেন, মূলত পেঁয়াজ পরিস্থিতি নিয়েই আমরা এখন তৎপর। আমরা বিভিন্ন পক্ষকে নিয়ে সমন্বয় মিটিং করেছি।

গতকাল রাত ৮টায় যখন তার সঙ্গে কথা হয় তখনও তিনি মন্ত্রণালয়ে বৈঠকে ছিলেন।

টিসিবির এক কর্মকর্তা গতকাল নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, আমরা বেসরকারি প্রতিষ্ঠান এস আলম গ্রুপের দিকে তাকিয়ে আছি। সবার আগে হয়তো তাদের পেঁয়াজ আসবে মিসর থেকে। তাদের পেঁয়াজ আসার পর সেগুলো টিসিবির মাধ্যমে বিক্রি করা হতে পারে। তবে কী দামে কোম্পানিটির কাছ থেকে কেনা হবে বা কোন প্রক্রিয়ায় সবকিছু ঠিক করা হবে তা ঠিক করবে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। বিষয়টি নিয়ে আমরা একেবারে ধোঁয়াশার মধ্যে আছি।

বাজারে কমতে শুরু করেছে দাম : অন্যদিকে সারা দেশের পাইকারি ও খুচরা বাজারে কমতে শুরু করেছে পেঁয়াজের দাম। রোববার ১৫-২০ টাকা কমে দেশি পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে প্রতিকেজি ২৪০ টাকা। দেশি হাইব্রিড পেঁয়াজ ২০০ এবং মিসরের পেঁয়াজ প্রতিকেজি ১৮০ টাকায় বিক্রি হতে দেখা গেছে। রোববার রাজধানীর কারওয়ান বাজারসহ কয়েকটি বাজারে পেঁয়াজের দামে এমন চিত্র দেখা গেছে। কারওয়ান বাজারের পেঁয়াজ বিক্রেতা কবীর হোসেন বলেন, দেশি ভালোমানের পেঁয়াজ প্রতিকেজি ২৪০ টাকা দরে বিক্রি করেন, যা আগের দিন ছিল ২৬০ টাকা। মিসরের বড় বড় সাইজের পেঁয়াজ বিক্রি করছেন ১৮০ টাকায়, যা গতকাল বিক্রি করেছেন প্রতিকেজি ২০০ টাকায়। তিনি বলেন, শ্যামবাজার থেকে প্রতিকেজি ১৮ টাকা কমে কিনতে পেরেছি, তাই ২০ টাকা কমে বিক্রি করতে পারছি। তবে এতেও তিনিসহ ক্রেতারা কেউ সন্তুষ্ট নন। কারণ ৩০-৪০ টাকার পেঁয়াজ এখনও বিক্রি করতে হচ্ছে ২৪০ টাকায়।

কারওয়ান বাজারের আরেক খুচরা পেঁয়াজ বিক্রেতা হাবিব মোল্লা বলেন, সবধরনের পেঁয়াজের দাম ১৫-২০ টাকা কমেছে। গতকাল তিনি দেশি ভালোমানের পেঁয়াজ বিক্রি করছেন প্রতিকেজি ২৩০ টাকায়। আগের দিন যা বিক্রি করেছিলেন ২৫০ টাকায়। দেশি হাইব্রিড পেঁয়াজ বিক্রি করছেন ২০০ টাকায়, গতকাল যা ছিল ২২০ টাকা; পাকিস্তানি প্রতিকেজি পেঁয়াজ বিক্রি করছেন ১৮০ টাকায়, গতকাল ছিল ২০০ টাকা।

আর শ্যামবাজারের পেঁয়াজ ব্যবসায়ী হাফিজুর রহমান বলেন, পাইকারি পর্যায়ে কেজিপ্রতি ৪০-৫০ টাকা করে দাম কমেছে পেঁয়াজের। তার চেয়ে বড় কথা, পাইকারি বাজারে ক্রেতা কমে গেছে। বিভিন্ন ছোট বাজার ও মহল্লার খুচরা ব্যবসায়ীরা এখন শ্যামবাজারে পেঁয়াজ নিতে আসা কমিয়ে দিয়েছেন। তিনি আরও বলেন, আগামী এক সপ্তাহের মধ্যে সারা দেশে পেঁয়াজের দাম আরও কমে আসবে।

image_pdfimage_print




সংবাদটি ভাল লাগলে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published.

এই বিভাগের আরো সংবাদ










© All rights reserved © 2019 notunbarta24.com
Developed by notunbarta24.Com
themebazarnotunbar8765