শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ০৫:১৫ অপরাহ্ন




দ্বীনে হক জিন্দা রাখাই কারবালার শিক্ষা

নতুনবার্তা ডেস্ক
  • প্রকাশ: শনিবার, ৭ সেপ্টেম্বর, ২০১৯

তারাকতু ফী কুম আমরাইন ফা ইন তামাসসাকতুম বিহিমা লান তাদ্বিল্লু কিতাবাল্লাহি ওয়া ইতরাতি, নবীজি (সা.) বিদায় হজ শেষে মদিনা ফেরার পথে মাওলা আলীর অভিষেকের ভাষণে বলেছিলেন মান কুনতু মাওলাহু ফা হাজা আলীউন মাওলাহু, আমি যার অভিভাবক এই আলীও তার অভিভাবক।

আর তোমাদের কাছে আমি দুটি জিনিস আমানত রেখে যাচ্ছি তোমরা যদি এগুলো আঁকড়ে থাক তোমরা পথভ্রষ্ট হবে না, আর তা হল আল্লাহর কিতাব আর সেই কিতাবের বাস্তব শিক্ষা লাভের জন্য আমার আহলে বায়েত বা নিকটাত্মীয়। ইমাম হোসাইন মা ফাতেমার কলিজার টুকরা এবং জান্নাতি যুবকদের সর্দার। ৬১ হিজরি সনের ১০ মহররমের পর থেকে সেই ইমাম হোসাইনের মর্মন্তুদ শাহাদাতের ঘটনা ঘিরে বিশ্ব মুসলিম জাহানে আবর্তিত হচ্ছে শোকাবহ অনুষ্ঠান।

মহররমের তাৎপর্য ও গুরুত্ব ইসলামী বিশ্বে অপরিসীম। শাবান রমজানে যেমন আছে শবেবরাত শবেকদর, তেমনি মহররম মাসে রয়েছে আশুরা। আশুরা হচ্ছে ১০ মহররম। অনেক নবী রাসূলের উম্মতের কাছে এটি রহমত হিসেবে আবির্ভূত হলেও ৬১ হিজরি সনের ১০ মহররমের পর থেকে উম্মতে মোহাম্মদীর কাছে এ দিবসটি এসেছে হৃদয়বিদারক ও শোকের দিন হিসেবে, এটি শাহাদাতে কারবালা দিবস।

নবীজি (সা.)-এর দৌহিত্র ইমাম হোসাইন এ দিনে ইয়াজিদের অনৈসলামিক ও বিদাতি কর্মকাণ্ডের প্রতিবাদে দ্বীনে হক্ব প্রতিষ্ঠার জিহাদে শামিল হয়ে কারবালার প্রান্তরে সঙ্গী সাথী এবং পরিবারবর্গ নিয়ে শাহাদাতবরণ করেছেন। তাই মুসলিম বিশ্বের কাছে এটি বিষাদের দিন এবং সত্য প্রতিষ্ঠার সংগ্রামে জীবন বাজি রেখে লড়ে যাওয়ার শপথের দিন। ইয়াজিদ বাহিনী এ যুদ্ধে জয়ী হলেও ইমাম হোসাইনের আত্মত্যাগ দুনিয়ার বুকে ইসলামকে আরও সুদৃঢ় করেছে। এবং ইমাম হোসাইন অমর হয়ে আছেন।

ব্রিটিশবিরোধী স্বাধীনতা সংগ্রামী মাওলানা মোহাম্মদ আলী জওহার যথার্থই বলেছেন ক্বতলে হোসাইন দর আসল মর্গে ইয়াজিদ হ্যায়। অন্যদিকে ইয়াজিদ হয়েছে কুখ্যাত। মানুষ তার নামে সন্তানের নামকরণও করে না। এমনকি মৃত্যুর আগে ইয়াজিদ আপনজনদের ওসিয়ত করে যায় মৃত্যুর পর তাকে যেখানে কবর দেয়া হবে তা যেন কেউ জানতে না পারে। কারণ ইয়াজিদ বুঝতে পেরেছিল যে, কেবল মৃত্যুই তাকে রেহাই দেবে না। মৃত্যুর পর মুসলিম জাহানসহ বিশ্বের বিবেকবান মানুষের ঘৃণা তার কবরেও বর্ষিত হবে।

বাস্তবে তাই ঘটেছে, ইয়াজিদ আজ বিশ্বের বিবেকবান মানুষের কাছে ঘৃণিত। অপরদিকে নবীজির দৌহিত্র ইমাম হোসাইন জাতি, ধর্ম ও বর্ণ নির্বিশেষে মানুষের কাছে সত্য প্রতিষ্ঠার সংগ্রামে আপসহীন নেতা হিসেবে পরিচিত। মুসলিমরা তাকে স্মরণ করে শ্রদ্ধার সঙ্গে ব্যথিত চিত্তে। ইমাম হোসাইনের আত্মত্যাগ কেবল অন্যায়ের বিরুদ্ধে সাধ্যমতো প্রতিবাদ করার শিক্ষাই দেয় না বরং ইসলাম যে রাজতন্ত্রের ওপর নির্ভরশীল হয়ে পৃথিবীতে টিকে থাকতে আসেনি তার দিকেও ইঙ্গিত দেয়।

ইসলাম এসেছে জালিমের শাসনকে হটিয়ে মাজলুমের অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য, যা নবীজি (সা.) বাস্তবে দেখিয়ে গেছেন। দ্বীন বেঁচে থাকবে নবীজির সুন্নাহর আলোকে। সুন্নাহবহির্ভূত হলে তা বর্জন করা হবে তা ব্যক্তিক ইবাদতে হোক বা রাষ্ট্রিক ইবাদতে হোক, এটিই ইমাম হোসাইনের মাকসাদ ছিল।

আজ আমরা ব্যক্তিক ইবাদতে বেদাত খুঁজে ফিরি কিন্তু রাষ্ট্রিক ইবাদতে কায়সার কিসরার নীতি চলছে, সে ব্যাপারে টুঁ শব্দটি করছে না কেউ। আজ হিকমতের উসিলায় যাদের এ বিষয় গর্জে উঠার কথা তারা পার্থিব স্বার্থ বিঘ্নিত হবে বলে হুজরানশীন হয়ে বসে আছেন। সনদের মূল্যায়ন এবং হজ উমরার দাওয়াত পেয়ে জুলুমের প্রতিবাদ না করে শাসকের মোসাহেব হয়ে আছেন।

ইমাম হোসাইন কিন্তু মদিনা থেকে হজের সফরেই যাত্রা করেছিলেন। পথে শুনলেন হুদুদে হেরেমে তিনি অতর্কিতে হামলার শিকার হতে পারেন। আহলে বায়েতের খুনে হেরেম লাল হবে তা তিনি চাননি। তাই তিনি হজের সফর বাদ দিয়ে জালিমের প্রতিবাদে উম্মতকে সংঘবদ্ধ করতে কুফার পথ ধরেন। বিশেষ মুহূর্তে ফরজ ইবাদত কসর বা কাজা বৈধ। যারা ইমাম হোসাইনের এ সিদ্ধান্তের ব্যাপারে প্রশ্ন উঠায় তারা আর যাই হোক হোসাইনি বন্ধু নয় ইয়াজিদী বন্ধু।

খাজা আজমেরী বলেন, দ্বীনাস্ত হোসাইন দ্বীঁ পানাহ আস্ত হোসাইন হাক্কাকেহ বেনায়ি লা ইলাহা আস্ত হোসাইন। হোসাইন দ্বীন, দ্বীন উদ্ধারকারীও হোসাইন, সর্বোপরি লা ইলাহার ভিত্তিও হোসাইন। এর পরিপ্রেক্ষিতে বলতে পারি হোসাইনের প্রেম ছাড়া যে ইসলাম সেটা ইসলাম নয় তা মেকি বা হাইব্রিড ইসলাম। আর হোসাইনি ইসলাম মূল বা অর্গানিক ইসলাম। আল্লাহ আমাদের হোসাইনি প্রেমে উদ্ভাসিত হয়ে দ্বীন বোঝার তৌফিক দান করুন।

 

image_pdfimage_print




সংবাদটি ভাল লাগলে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published.

এই বিভাগের আরো সংবাদ










© All rights reserved © 2019 notunbarta24.com
Developed by notunbarta24.Com
themebazarnotunbar8765