বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ০৪:২৫ পূর্বাহ্ন




তারার মেলায় সাকিবও

নতুনবার্তা ডেস্ক
  • প্রকাশ: সোমবার, ১৫ জুলাই, ২০১৯

বিশ্বকাপের ফাইনালে না থেকেও ছিল বাংলাদেশ। ব্যক্তিগত পুরস্কারের দৌড়ে লাল-সবুজের এ লড়াই। দেশের প্রতিনিধি হয়ে বিশ্বকাপের সেরা খেলোয়াড় হওয়ার লড়াইয়ে শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত ভালোভাবেই টিকে ছিলেন সাকিব আল হাসান। দেশের ক্রিকেটের সবচেয়ে বড় বিজ্ঞাপন বাঁহাতি এ অলরাউন্ডার ক্যারিয়ারসেরা বিশ্বকাপ পারফর্ম করেন ইংল্যান্ডে। আট ম্যাচ খেলে ৬০৬ রান ও ১১ উইকেট নিয়ে প্রশংসা কুড়ান তিনি। গতকাল লর্ডসে রুদ্ধশ্বাস ফাইনাল শেষে পুরস্কার বিতরণ মঞ্চেও উচ্চারিত হলো বাংলাদেশের এ ক্রিকেটারের নাম। উপস্থাপক সাবেক ইংলিশ অধিনায়ক নাসের হুসেইন টুর্নামেন্টসেরার নাম ঘোষণার আগে সাকিবের কৃতিত্বের কথা স্মরণ করিয়ে দেন বিশ্বকে। বিশ্বকাপের সেরা খেলোয়াড় হওয়ার দৌড়ে শেষ পর্যন্ত নিউজিল্যান্ড অধিনায়ক কেন উইলিয়ামসনের জয় হয়।

বাংলাদেশের ক্রিকেটের ‘অ্যাম্বাসাডর’ সাকিব বিশ্বকাপে রেকর্ডের পর রেকর্ড উপহার দিয়ে গেছেন লীগ রাউন্ডে নিজেদের শেষ ম্যাচ পর্যন্ত। এ অলরাউন্ডার বিশ্বকাপ শুরুই করেন রেকর্ড দিয়ে, টানা চার বিশ্বকাপের প্রথম ম্যাচে পঞ্চাশ-ছোঁয়া ইনিংস খেলে। আফগানিস্তানের বিপক্ষে হাফ সেঞ্চুরি (৫১) ও পাঁচ উইকেট নিয়ে নাম লেখান ভারতের যুবরাজ সিংয়ের পাশে। দ্বিতীয় ক্রিকেটার হিসেবে বিশ্বকাপে এ রেকর্ড গড়েন তিনি। পাকিস্তানের বিপক্ষে লর্ডসে পেলেন হাফ সেঞ্চুরি (৬৪), সেইসঙ্গে ইতিহাসেও ঢুকে যান ক্রিকেটের মহানায়ক শচীন টেন্ডুলকারের পাশে। এক বিশ্বকাপে পঞ্চাশ-ছোঁয়া সাত ইনিংস কেবল এই দুই তারকার। যদিও অলরাউন্ডার হিসেবে একাই নায়ক তিনি।

নিজের আগের তিন বিশ্বকাপে কোনো সেঞ্চুরি ছিল না সাকিবের। এবার টানা দুই ম্যাচে পেলেন সেঞ্চুরি। কার্ডিফে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে ১২১ রান করে প্রশংসিত হলেন। টনটনে পরের ম্যাচে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে খেলেন ১২৪ রানের হার না মানা ইনিংস। লিটন কুমার দাসকে নিয়ে ১৮৯ রানে অপরাজিত জুটি গড়ে ম্যাচ জিতে মাঠ ছাড়েন টাইগার সহঅধিনায়ক। অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে হাফ সেঞ্চুরি না পাওয়ার ম্যাচেও করেন ৪১ রান। মূলত সাকিবের অলরাউন্ড পারফরম্যান্সেই দক্ষিণ আফ্রিকা, উইন্ডিজ ও আফগানিস্তানকে হারায় বাংলাদেশ। আর এই তিন ম্যাচেই সেরার পুরস্কার ওঠে সাকিবের হাতে। ম্যাচসেরার পুরস্কার প্রাপ্তির দিক থেকে অস্ট্রেলিয়ান ওপেনার ডেভিড ওয়ার্নারের সঙ্গে যৌথভাবে দ্বিতীয় তিনি। ভারতের রোহিত শর্মার দখলে গেছে চারটি ম্যাচসেরার পুরস্কার।

চার বিশ্বকাপ খেলে সাকিবের রান ২৯ ম্যাচে ১১৪৬। আগের তিন বিশ্বকাপে তার রান ছিল ৫৪০। সেখানে এই বিশ্বকাপে ৮৬.৫৬ গড় ও ৯৬.০৩ স্ট্রাইকরেটে করেন ৬০৬ রান। ইতিহাসের পাতায় সর্বকালের অন্যতম সেরা অলরাউন্ডারের তালিকায় জায়গা করে নিতে এরই মধ্যে নিজেকে অনন্য উচ্চতায় নিয়ে গেছেন সাকিব। এ জন্যই তো তার বিশ্বকাপ পারফরম্যান্স দেখে উচ্ছ্বসিত প্রশংসা করতে দেখা গেছে অস্ট্রেলিয়ার সাবেক অধিনায়ক স্টিভ ওয়াহ, ভারতের কিংবদন্তি ব্যাটসম্যান শচীন টেন্ডুলকার, সৌরভ গাঙ্গুলী, ক্লাইভ লয়েডদের। এত ভালো খেলতে পেরে সাকিবও পেয়েছেন মুক্তির স্বাদ। গত ৬ জুলাই সাংবাদিকদের বাঁহাতি এ অলরাউন্ডার বলেন, এই পারফরম্যান্স করতে পেরে তিনি তৃপ্ত। এই পারফরম্যান্সের পর হয়তো তার মনের কোনো এক কোণে একচিলতে স্বপ্ন উঁকি দিয়েছিল সেরা খেলোয়াড়ের পুরস্কার জয়ের। বাংলাদেশ সেমিফাইনালে যেতে না পারলেও বিশ্বসেরা হওয়ার লড়াইয়ে ভারতের ওপেনিং ব্যাটসম্যান রোহিত শর্মা, অস্ট্রেলিয়ার পেসার মিচেল স্টার্ক, ইংল্যান্ডের জো রুট, নিউজিল্যান্ডের কেন উইলিয়ামসনদের নামের সঙ্গে সমানে উচ্চারিত হচ্ছিল তার নাম।

ভারতের ওপেনার রোহিত বিশ্বকাপের এক আসরে পাঁচ সেঞ্চুরি করে ইতিহাস গড়েন। অভাবনীয় এই পারফরম্যান্স দিয়ে দলকে সেমিফাইনালে তোলেন তিনি। ৮১ গড় আর ৯৮.৩৩ স্ট্রাইকরেটে ৯ ইনিংসে ৬৪৮ রান নিয়ে ইংল্যান্ড বিশ্বকাপে ব্যাটসম্যান তালিকায় সবার ওপরে রোহিত। পাঁচ সেঞ্চুরি করায় বিশ্বকাপসেরার পুরস্কারের দাবিটা তাই জোরালো ছিল তার দিকে।

অস্ট্রেলিয়ার ওপেনার ডেভিড ওয়ার্নার বিদায় নেন সেমিফাইনালে ইংল্যান্ডের কাছে হেরে। কিন্তু তিনি ১০ ইনিংসে ৬৪৭ রান করে টেবিলের দ্বিতীয় স্থানটি দখলে রাখেন। তিনটি করে সেঞ্চুরি আর হাফ সেঞ্চুরি তার। তবে সেরা হওয়ার দৌড়ে অসি ফাস্ট বোলার মিচেল স্টার্ক রেকর্ড ২৭ উইকেট নিয়ে সবার ওপরে থেকে বিশ্বের সেরা খেলোয়াড় হওয়ার সম্ভাবনার তালিকায় জোর দাবি ছিল তার দিকেও। এ ছাড়াও টুর্নামেন্টের সেরা হওয়ার দৌড়ে থাকা ইংলিশ জো রুট ১১ ইনিংসে করেন ৫৫৬ রান। রুটের সতীর্থ বেন স্টোকস ৪৬৫ রান ও সাত উইকেট শিকার করে রেসে ছিলেন। আর স্বাগতিক ইংল্যান্ডের তরুণ ফাস্ট বোলার জোফরা আর্চারকেও তো বাদ দেওয়া যায় না। ২০ উইকেট নিয়ে মুস্তাফিজুর রহমানের সঙ্গে যৌথভাবে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ উইকেট শিকারি তিনি। নিউজিল্যান্ড অধিনায়ক কেন উইলিয়ামসন ৯ ইনিংসে ৫৭৮ রান করেন, যেখানে দুটি করে সেঞ্চুরি ও হাফ সেঞ্চুরি ইনিংস রয়েছে। তার প্রায় সব ইনিংসই ম্যাচজয়ী। এর চেয়েও বড় গুরুত্বপূর্ণ অসাধারণ নেতৃত্ব দিয়ে কিউই দলটাকে ফাইনালে তোলেন তিনি।

image_pdfimage_print




সংবাদটি ভাল লাগলে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published.

এই বিভাগের আরো সংবাদ










© All rights reserved © 2019 notunbarta24.com
Developed by notunbarta24.Com
themebazarnotunbar8765