মেয়ের সঙ্গে এইচএসসি পরীক্ষা দিয়ে উত্তীর্ণ হয়েছেন নাটোরের বাগাতিপাড়ার মাসুমা খাতুন। তিনি চলতি বছর কারিগরি শিক্ষাবোর্ডের অধীনে পরীক্ষায় অংশ নিয়ে পেয়েছেন জিপিএ ৪ দশমিক ১৩। আর মেয়ে জান্নাতুল ফেরদৌস রাজশাহী সরকারি মহিলা কলেজ থেকে বিজ্ঞান বিভাগ থেকে পেয়েছেন জিপিএ ৫।
বুধবার সকাল ১০টায় গণভবনে শিক্ষামন্ত্রী দীপু মনি ও সব বোর্ডের চেয়ারম্যানরা এবারের এইচএসসি পরীক্ষায় নিজ নিজ বোর্ডের ফলাফল প্রধানমন্ত্রীর হাতে তুলে দেন।
মাসুমা খাতুন জানান, ১৯৯৭ সালের এসএসসি পরীক্ষার্থী ছিলেন তিনি। কিন্তু পরীক্ষার আগেই পরিবার থেকে তার বিয়ে দিয়ে দেয়। এরপর আর পরীক্ষা দিতে পারেননি। কিন্তু বুকের ভেতরের লালন করা ইচ্ছা পূরণে নতুন করে শুরু করেন লেখাপড়া। এরপর ২০১৭ সালে মেয়ের সঙ্গে এসএসসি পাশ করেন তিনি। এবার মেয়ের সঙ্গে এইচএসসি পরীক্ষা দিয়ে উত্তীর্ণ হলেন।
মা-মেয়ের পাসের খবরে আনন্দে মেতে ওঠেন পরিবারের সবাই। ভালো ফল করায় তাদের বাহবা দেন সহপাঠী ও কলেজের শিক্ষকরা। মাসুমা খাতুনের বাবার বাড়ি বাগাতিপাড়া উপজেলার বারইপাড়া গ্রামে। বিয়ে হয় বাগাতিপাড়া উপজেলা সদরে। স্বামী আব্দুল মজিদ আনসার ব্যাটালিয়নে সিপাহী (প্রশিক্ষক) পদে চাকরি করেন। তাঁর কর্মস্থল গাজীপুরে। মাসুমা খাতুনের দুই সন্তানের বড় ছেলে বনি আমিন বাগাতিপাড়া সরকারি ডিগ্রি কলেজের স্নাতক শ্রেণীর ছাত্র।
মাসুমা খাতুন আরো বলেন, বিয়ের ১৮ বছর পেরিয়ে গেছে। পিঠাপিছি দুই ছেলে-মেয়েকে মানুষ করতে গিয়ে নিজের পড়ালেখার সুযোগ হয়নি। এক পর্যায়ে ছোট মেয়ে জান্নাতুল ফেরদৌসের সঙ্গে নবম শ্রেণীতে ভর্তি হয়ে নতুন করে পড়ালেখা শুরু করি। সমাজে আর দশটা মানুষের মতো যাতে নিজেকে একজন শিক্ষিত মানুষ হিসেবে পরিচয় দিতে পারি, সে কারণেই এই বয়সে কষ্ট করে লেখাপড়া করছি।
মাসুমা খাতুনের স্বামী আব্দুল মজিদ বলেন, আমার জন্য একটু কষ্ট হলেও আমি ওর ইচ্ছাটার মর্যাদা দিয়েছি। সে যতদূর পড়াশোনা করতে চায় পড়বে। আমার সহযোগিতা থাকবে তার প্রতি। মা ও মেয়ে একই শ্রেণীতে এক সঙ্গে পাশ করায় বেশ আনন্দ অনুভব করছি।