শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ০৭:৩৩ অপরাহ্ন




বাগেরহাটে শিশু ধর্ষণের মামলায় মান্নানের যাবজ্জীবন কারাদন্ড

বাগেরহাট প্রতিনিধি
  • প্রকাশ: সোমবার, ১৯ অক্টোবর, ২০২০

বাগেরহাটের মোংলায় আশ্রয়ন প্রকল্প এলাকায় পিতৃহীণ সাত বছর বয়সী এক শিশু ধর্ষণ মামলায় আসামী আব্দুল মান্নান সরদারকে(৫০) যাবজ্জীবন কারাদন্ড দিয়েছে আদালত। সোমবার দুপুর ১২ টায় জনাকীর্ন আদালতে আসামির উপস্থিতিতে এই রায় ঘোষনা করেন নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল আদালত-২ এর বিচারক মো. নূরে আলম। রায়ে তিনি আসামীকে ২০ হাজার টাকা জরিমান অনাদায়ে আরও এক বছরের কারাদন্ড ঘোষনা করেন। মাত্র সাত কর্মদিবসে আদালত এই রায় ঘোষনা করলো। এর আগে রোববার দুপুর দুইটা থেকে বিকেল পাঁচটা পর্যন্ত টানা তিন ঘন্টা বাগেরহাট নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল-২ আদালতের বিচারক জেলা ও দায়রা জজ মো. নূরে আলম এই চাঞ্চল্যকর মামলার বাদী বিবাদী পক্ষের যুক্তিতর্ক শোনেন। বাগেরহাটের ষ্পর্শকাতর একটি ফৌজদারি মামলায় এতো কম সময়ে বিচার কাজ শেষ করার নজির বাংলাদেশে এই প্রথম বলে দাবী করছেন সংশ্লিষ্টরা। দন্ডপ্রাপ্ত আব্দুল মান্নান সরদার(৫০) মোংলা উপজেলার মাকোড়ডোন গ্রামের ভূমিহীন আশ্রয় প্রকল্প এলাকার প্রয়াত আহম্মদ সরদারের ছেলে।

এদিকে, বাগেরহাটের বিচার বিভাগ নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনের একটি মামলার বিচার কাজ  কম সময়ের শেষ করায় ন্যায় বিচার প্রতিষ্ঠার উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত স্থাপন হতে যাচ্ছে বলে মন্তব্য করেছেন নারী উন্নয়ন ফোরাম। এই রায়ের মধ্যে দিয়ে বিচার কার্যের যে দীর্ঘসূত্রিতা ছিল  তা অনেকাংশে দূর হবে বলে মত তাদের।

মামলার বিবরণে জানা গেছে, বাগেরহাটের মোংলা উপজেলার মাকোড়ডোন গ্রামের আশ্রয় প্রকল্প এলাকায় পিতৃহীন সাত বছর বয়সী এক শিশু তার মামা বাড়িতে থেকে বড় হচ্ছিল। গত ৩ অক্টোবর বিকেলে ওই আশ্রয় প্রকল্পের পঞ্চাশোর্ধ প্রতিবেশি আব্দুল মান্নান সরদার তাকে বিস্কুট খাওয়ার প্রলোভন দিয়ে নিজের ঘরে ডেকে নেই। এরপর শিশুটিকে জোরপূর্বক ধর্ষণ করে মান্নান। পরে এই ঘটনা জানাজানি হলে ওইদিন রাতেই মেয়েটির মামা মোংলা থানায় আব্দুল মান্নানের বিরুদ্ধে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে একটি মামলা করলে পুলিশ মান্নানকে গ্রেপ্তার করে।

মামলার তদন্ত কর্মকর্তা মোংলা থানার উপপরিদর্শক (এসআই) বিশ্বজিত মুখার্জ্জী ধর্ষণের  সত্যতা পেয়ে আটদিনের মাথায় আব্দুল মান্নানের বিরুদ্ধে ১১ অক্টোবর আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করেন।

বাগেরহাট নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল-২ আদালতের বেঞ্চ সহকারি গোপাল চন্দ্র পাল জানান, মামলাটি স্পর্শকাতর হওয়ায় জুডিশিয়াল আদালত মামলাটি নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল-২ আদালতে পাঠায়। আদালতের বিচারক গত ১১ অক্টোবর মামলাটি আমলে নিয়ে পরদিন চার্জ গঠন করে। ১৩ অক্টোবর বাদী পক্ষের মোট ১৬ জন স্বাক্ষীর সাক্ষ্য গ্রহণ করেন। ১৪ অক্টোবর মামলার সংশ্লিষ্ট স্বাক্ষী চিকিৎসক, জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট, নারী পুলিশ সদস্য এবং মামলার তদন্ত কর্মকর্তার স্বাক্ষ্য গ্রহণ করেন। ১৫ অক্টোবর আসামীর আত্মপক্ষ সমর্থনে সাফাই স্বাক্ষী সাক্ষ্য নেন। রোববার বিকালে বিচারক দীর্ঘ সময়  বাদী ও বিবাদী পক্ষের যুক্তিতর্ক শুনানি শেষে আজ সোমবার রায় ঘোষণা করেন। এই ধরনের ফৌজদারি মামলায় দেশের কোন নিন্ম আদালতে এতকম সময়ে বিচারকাজ শেষ হয়নি বলেও জানান এই কর্মকর্তা।

রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী বাগেরহাট নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের বিশেষ সহকারি কৌসুলি (এপিপি) রনজিৎ কুমার মন্ডল বলেন, অতি অল্প সময়ের ভিতর এই রায়ে আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা হয়েছে। রায়ে বাদী পক্ষসহ এলাকাবাসি খুশি।  মামলাটি পুলিশ গুরুত্ব দিয়ে তদন্ত করেছে। ঘটনার পরপরই আসামীকে গ্রেপ্তার, ধর্ষিতার ডাক্তারি পরীক্ষা, স্বাক্ষী হাজির এবং অভিযোগপত্র দাখিল যথা সময়ে করেছে পুলিশ। আইন মেনে ধর্ষিতা শিশুটির ২২ ধারা ও ১৬১ ধারায় জবানবন্দি গ্রহণ করা হয়েছে। এসব কারনে ট্রাইব্যুনালের বিচারকের বিচার কাজ শেষ করতে সময়ক্ষেপন হয়নি। রোববার টানা তিন ঘন্টা বাদী বিবাদির যুক্তিতর্কের উপর শুনানি করেছেন।  সোমবার এই আলোচিত মামলার রায় ঘোষণার দিন ধার্য করেন। বাগেরহাটের আদালতের এই সক্ষিপ্ত সময়ে রায় ঘোষণার মধ্যে দিয়ে একটা দৃষ্টান্ত স্থাপন হয়ে থাকবে। বিগত দিনে এতো কম সময়ে বাগেরহাট কি দেশের কোন আদালতে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে কোন রায় ঘোষণা হয়নি বলেও তিনি জানান।

নারী উন্নয়ন ফোরামের খুলনা ও বরিশাল বিভাগের আঞ্চলিক সমন্বয়কারি  ও সদর উপজেলা পরিষদের মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান উন্নয়নকর্মী রিজিয়া পারভীন তার প্রতিক্রিয়ায় বলেন, সম্প্রতি বাগেরহাটের মোংলা দরিদ্র পরিবারের একটি শিশু যৌন নির্যাতনের শিকার হয়। নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল ৭ কার্যদিবসের মধ্যে বিচার কাজ শেষ করেছে। এই রায়ের মধ্যে দিয়ে বিচার কার্যের যে দীর্ঘসূত্রিতা ছিল বা সাধারণ বিচারপ্রার্থীদের বিচার না পাওয়ার যে ভ্রান্ত ধারণা ছিল  তা অনেকাংশে দূর হবে। দেশের সকল আইন প্রয়োগকারি সংস্থা নারী ও শিশু নির্যাতনের মামলাগুলো গুরুত্বের সাথে বিবেচনা করবে বলে মত দেন এই নারী নেত্রী।

তবে আসামী পক্ষের আইনজীবি লেয়াকত আলী সল্প সময়ে বিচার কাজ শেষ করতে গিয়ে আসামী ন্যায় বিচার পাইনি বলে দাবী করেন। ন্যায় বিচারের সার্থে আসামী পক্ষ উচ্চ আদালতে যাবে বলে তিনি জানান।

image_pdfimage_print




সংবাদটি ভাল লাগলে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published.

এই বিভাগের আরো সংবাদ










© All rights reserved © 2019 notunbarta24.com
Developed by notunbarta24.Com
themebazarnotunbar8765