শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ০৩:২৮ অপরাহ্ন




ফ্রিডম পার্টি থেকে যুবলীগে খালেদের উত্থান যেভাবে

স্টাফ রিপোর্টার
  • প্রকাশ: শুক্রবার, ১৮ অক্টোবর, ২০১৯

ঢাকায় ক্লাব ব্যবসার আড়ালে অবৈধ ক্যাসিনো পরিচালনার দায়ে গ্রেফতার যুবলীগ ঢাকা মহানগর দক্ষিণের বহিষ্কৃত সাংগঠনিক সম্পাদক খালেদ মাহমুদ ভূঁইয়া একসময় ফ্রিডম পার্টি করতেন। চতুর খালেদ ফ্রিডম পার্টি থেকে যোগ দেন বিএনপির অঙ্গ সংগঠন যুবদলে। বিএনপি ক্ষমতায় থাকাকালে ঢাকায় সন্ত্রাসের রাজত্ব করে বেড়ান। ক্ষমতার পালাবদলের সঙ্গে সঙ্গে পল্টি নেন খালেদ। বনে যান যুবলীগের দোর্দণ্ড প্রতাপশালী নেতায়। ফ্রিডম পার্টি থেকে যুবলীগ নেতা হিসেবে খালেদের উত্থান অনেকটা সিনেম্যাটিক। যুবলীগে যোগ দেয়ার পর তাকে আর পিছু তাকাতে হয়নি। মহানগর দক্ষিণ যুবলীগের তৎকালীন সভাপতি ইসমাইল হোসেন সম্রাটের ছত্রছায়ায় গড়ে তোলেন বিশাল বাহিনী। রাজধানীর পুরানা পল্টন, মতিঝিল, ফকিরাপুল, কাকরাইল এলাকার ক্যাসিনোগুলো নিয়ন্ত্রণে নিয়ে নেন। কামিয়ে নেন কাড়ি কাড়ি টাকা। এই টাকার ভাগ পেতেন যুবলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির শীর্ষ নেতারাও। এ কারণে সহজেই যুবলীগের শীর্ষ নেতাদের ছায়া পেয়ে যান খালেদ।

এই খালেদই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে হত্যার চেষ্টায় সরাসরি জড়িত ছিলেন। ১৯৮৯ সালে ফ্রিডম পার্টির নেতাদের নেতৃত্বে শেখ হাসিনার ধানমণ্ডির ৩২ নম্বর বাড়িতে হামলা হয়। ওই হামলায় শীর্ষ সন্ত্রাসী জাফর আহম্মদ মানিক, সৈয়দ নাজমুল মাহমুদ মুরাদ এবং তাদের ঘনিষ্ঠ সহযোগী খালেদ সরাসরি অংশ নেয়। পরে কৌশলে চার্জশিট থেকে খালেদের নাম বাদ দেয়া হয়। এই তথ্য জানিয়েছেন খালেদের দীর্ঘদিনের সহযোগী মোহাম্মদ আলী।

র‌্যাবের এক কর্মকর্তা বলেন, ১৯৯১ সালে বিএনপি ক্ষমতায় আসার পর খালেদের বাবা আবদুল মান্নান ভূঁইয়া সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেল হিসেবে নিয়োগ পান। তখন তিনি ধীরে ধীরে শেখ হাসিনা হত্যাচেষ্টা মামলার অনেক নথি নষ্ট করে ফেলেন। এই প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়েই এক সময় খালেদের নামটিও কৌশলে অভিযোগপত্র থেকে বাদ যায়।

আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর একাধিক দায়িত্বশীল সূত্র জানায়, শীর্ষ সন্ত্রাসী মানিক ও মুরাদের মাধ্যমেই খালেদ ফ্রিডম পাটির রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত হয়। ওই সময় মুরাদের সঙ্গে একাধিক মামলার আসামিও ছিল খালেদ। মানিকের ছায়াতেই বেড়ে ওঠে সে।

দায়িত্বশীল সূত্র জানায়, মানিক এখন দেশের বাইরে পলাতক। তবে খালেদ কখনও পলাতক ছিল না। ফ্রিডম পার্টি থেকে তিনি যুবদলের রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত হয়। চারদলীয় জোট সরকার ক্ষমতায় থাকাকালীন তিনি রাজপথে বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করে। তবে ২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর সে ভোল পাল্টে যুবলীগের রাজনীতিতে নাম লেখান।

যুবলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির এক নেতা বলেন, ‘২০১২ সালে শাহজাহানপুর থানা যুবলীগের পদের জন্য তদবির শুরু করে খালেদ। শীর্ষ সন্ত্রাসী মানিক আমাকে ফোন করে খালেদকে শাহজাহানপুর থানা কমিটিতে পদ দেয়ার কথা বলেন। যখন মানিক আমাকে ফোন করেছিলেন তখন খালেদ আমার সামনেই বসা ছিলেন। আমি সরাসরি বলেছি, শীর্ষ সন্ত্রাসীর কথায় কাউকে পদ দেয়া যাবে না।’

ওই নেতা আরও বলেন, ‘২০১৩ সালে ঢাকা মহানগর দক্ষিণ যুবলীগে ইসমাইল হোসেন সম্রাট সভাপতি হওয়ার পর খালেদ সাংগঠনিক সম্পাদক হন। মোটা অঙ্কের অর্থের বিনিময়ে তিনি যুবলীগে পদ পান। তারপর থেকে তিনি বেপরোয়া হয়ে ওঠে। শাহজাহানপুর, মতিঝিল, খিলগাঁও, সবুজবাগ, রামপুরা ও রমনা এলাকায় মূর্তিমান আতঙ্ক হয়ে ওঠেন।’

আইনশৃঙ্খলা বাহিনী এবং স্থানীয় বিভিন্ন সূত্রে জানা গেছে, ২০১৩ সালের পর খালেদের ভয়ংকর উত্থান ঘটে। তার কথার অবাধ্য হলেই আর রক্ষা নেই। এমনকি ক্ষমতাসীন দল এবং অঙ্গসংগঠনের অনেক নেতাকর্মী তার হাতে চরম নির্যাতনের শিকার হয়েছেন। অনেকে এলাকা পর্যন্ত ছেড়ে গেছেন। বিভিন্ন এলাকায় সে টর্চার সেল গঠন করে বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষকে নির্যাতন করতেন।

টেন্ডারবাজি, চাঁদাবাজি, অবৈধ ক্যাসিনো ব্যবসার অন্যতম হোতাও ছিলেন খালেদ। এসব অভিযোগে ১৮ সেপ্টেম্বর র‌্যাবের হাতে গ্রেফতার হয় খালেদ মাহমুদ ভূঁইয়া।

প্রসঙ্গত ১৪ সেপ্টেম্বর আওয়ামী লীগের কার্যনির্বাহী কমিটির এক সভায় চাঁদা দাবির অভিযোগে ছাত্রলীগের সভাপতি-সাধারণ সম্পাদকের পদ থেকে রেজওয়ানুল হক চৌধুরী শোভন ও গোলাম রাব্বানীকে অপসারণের নির্দেশ দেন আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। পাশাপাশি যুবলীগ নেতাদের বিষয়েও চরম ক্ষোভ প্রকাশ করেন তিনি। বলেন, যুবলীগের এক নেতা অস্ত্র উঁচিয়ে চলে। আরেকজন প্রকাশ্যে চাঁদাবাজি করে বেড়ায়।

এর পর গণমাধ্যমে যুবলীগ নেতাদের সংশ্লিষ্টতায় ঢাকার ৬০টি জায়গায় ক্যাসিনো পরিচালনার খবর প্রকাশ হয়। ১৮ নভেম্বর ফকিরাপুলের ইয়াংমেনস, ওয়ান্ডারার্স এবং গুলিস্তানে মুক্তিযোদ্ধা ক্রীড়া সংসদে অভিযান চালিয়ে ক্যাসিনোর সরঞ্জাম, বিপুল পরিমাণ মদ ও ৪০ লাখের বেশি টাকা উদ্ধার করে র্যা ব। ক্যাসিনো পরিচালনার অভিযোগে ওই দিনই যুবলীগের ঢাকা মহানগর দক্ষিণের সাংগঠনিক সম্পাদক খালেদ মাহমুদ ভূঁইয়াকে গ্রেফতার করা হয়, যিনি ইয়াংমেনস ক্লাবের সভাপতি ছিলেন।

image_pdfimage_print




সংবাদটি ভাল লাগলে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published.

এই বিভাগের আরো সংবাদ










© All rights reserved © 2019 notunbarta24.com
Developed by notunbarta24.Com
themebazarnotunbar8765