শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ০৫:৪৭ পূর্বাহ্ন




থানায় নির্যাতনের রোমহর্ষক বর্ণনা দিলেন মিন্নি

নতুনবার্তা ডেস্ক
  • প্রকাশ: সোমবার, ৫ আগস্ট, ২০১৯

বরগুনায় চাঞ্চল্যকর রিফাত শরীফ হত্যা মামলার প্রধান সাক্ষী ও প্রত্যক্ষদর্শী তার স্ত্রী আয়েশা সিদ্দিকা মিন্নিকে আটকের পর প্রচণ্ড শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন করা হয়েছে। বরগুনার পুলিশলাইনসে একটি কক্ষে নিয়ে তাকে টানা ১০-১২ ঘণ্টা নির্যাতন করা হয়। এমনকি তাকে ইয়াবা মিশ্রিত পানি খাইয়ে জোর করে স্বীকারোক্তি নেয়া হয়। রাতভর আটকে রেখে পুলিশের লিখে দেয়া স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি তাকে মুখস্ত করানো হয়। বাবা-মাকে আটক ও নির্যাতনের হুমকি দিয়ে তাকে দিয়ে আদালতে জবানবন্দি দেয়ানো হয়।

রোববার মিন্নির মা-বোনসহ তার স্বজনরা কারাগারে তার সঙ্গে দেখা করতে গেলে তাদের কাছে নৃশংস এই নির্যাতনের বর্ণনা দেন মিন্নি।

মেয়ের মুখ থেকে শোনা নৃশংস নির্যাতনের ঘটনা সাংবাদিকদের বলতে গিয়ে কান্নায় ভেঙে পড়েন মিন্নির মা জিনাত জাহান।

মিন্নির সঙ্গে সাক্ষাতের পর তার পরিবারের সদস্যরা জেল গেটে সাংবাদিকদের জানান, রোববার কারাগারে পরিদর্শনে এসে জেলা প্রশাসক মোস্তাইন বিল্লাহ মিন্নির খোঁজখবর নেন। এ সময় মিন্নি তার ওপর যে নির্যাতন চালানো হয়েছে সে কথা ডিসিকে জানান।

মিন্নির মা জিনাত জাহান মনি বলেন, আমার মেয়ে আমাকে বলেছে- ১৬ জুলাই পুলিশ মিন্নিকে বাড়ি থেকে তুলে নিয়ে এসে ১২-১৩ ঘণ্টা শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন চালায়। পুলিশলাইনে একটি কক্ষে এএসআই রিতার নেতৃত্বে ৪-৫ পুলিশ সদস্য তাকে শারীরিক নির্যাতন করেছে এবং মারধর করেছে। এ সময় পানি পান করতে চাইলে তাকে পানিটুকুও দেয়া হয়নি।

মিন্নির বরাত দিয়ে তার মা আরও জানান, ১৬ জুলাই রাতে মিন্নিকে গ্রেফতার দেখানোর পর ওই রাতেই পানির সঙ্গে ইয়াবা ট্যাবলেট মিশিয়ে তাকে পানি খেতে দেয়া হয়।একটি সাদা কাগজে লিখিত বক্তব্য দিয়ে তাকে মুখস্থ করতে পুলিশ বারবার চাপ দিয়েছে। যতক্ষণ মুখস্থ বলতে না পেরেছে ততক্ষণ পর্যন্ত রিতা ও তার সহযোগীরা তাকে নিপীড়ন করে। পুলিশ মিন্নিকে ভয় দেখিয়ে বলে লিখিত বক্তব্য আদালতে না বললে তার বাবা-মা ও চাচাদের ধরে আনা হবে।

এ সময় মিন্নির মা জানান, মিন্নির আত্মীয়স্বজনদের বাড়িতে গিয়ে তার বাবাকে পুলিশ খুঁজছে। নিজেদের নিরাপত্তাহীনতার কথাও সাংবাদিকদের তুলে ধরে মিন্নির মা বলেন, আমার ছোট্ট ছেলেমেয়েরা আজ স্কুলে যেতে পারছে না। সন্ত্রাসীরা বাড়ির আশপাশে ঘুর ঘুর করছে।

এর আগে মিন্নির বাবাও মেয়ের পুলিশ হেফাজতে নিপীড়নের অভিযোগ করেছেন।

প্রসঙ্গত ২৬ জুন রিফাতকে প্রকাশ্য সড়কে কুপিয়ে হত্যা করা হয়। সে সময় স্বামীকে বাঁচাতে মিন্নির চেষ্টার ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে সারা দেশে তোলপাড় সৃষ্টি হয়। পর দিন রিফাত শরীফের বাবা দুলাল শরীফ ১২ জনকে আসামি করে যে মামলাটি করেন, তাতে মিন্নিকে প্রধান সাক্ষী করা হয়েছিল।

১৬ জুলাই মঙ্গলবার সকাল সাড়ে ৯টার দিকে বরগুনার মাইঠা এলাকার বাবার বাসা থেকে মিন্নিকে জিজ্ঞাসাবাদ ও তার বক্তব্য রেকর্ড করতে বরগুনা পুলিশলাইনসে নিয়ে যায় পুলিশ। এর পর দীর্ঘ ১০ ঘণ্টার জিজ্ঞাসাবাদ শেষে রাত ৯টায় মিন্নিকে গ্রেফতার করে পুলিশ।

পর দিন মিন্নিকে আদালতে হাজির করা হয়। আদালতে তার পক্ষে কোনো আইনজীবী ছিলেন না। আদালত মিন্নির পাঁচ দিনের রিমান্ড আবেদন মঞ্জুর করেন আদালতের বিচারক মো. সিরাজুল ইসলাম গাজী।

আরো পড়ুন : রিফাত হত্যায় জড়িত থাকার কথা স্বীকার করেছেন মিন্নি: এসপি

পর দিন বরগুনার পুলিশ সুপার মো. মারুফ হোসেন সংবাদ সম্মেলনে জানান, মিন্নি তার স্বামী রিফাত শরীফ হত্যাকাণ্ডে জড়িত থাকার কথা স্বীকার করেছেন। এ হত্যার পরিকল্পনার সঙ্গেও তিনি যুক্ত ছিলেন।

এর পর দিন বিকালে মিন্নি একই আদালতে তার স্বামী রিফাত শরীফ হত্যাকাণ্ডে জড়িত থাকার কথা স্বীকার করে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন। পরে আদালত তাকে জেলহাজতে পাঠানোর নির্দেশ দেন।

আরো পড়ুন : পুলিশের চাপে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিতে বাধ্য হয়েছে: মিন্নির বাবা

প্রসঙ্গত বরগুনা সরকারি কলেজের মূল ফটকের সামনের রাস্তায় ২৬ জুন সকাল ১০টার দিকে স্ত্রী আয়েশা সিদ্দিকা মিন্নির সামনে কুপিয়ে জখম করা হয় রিফাত শরীফকে। বিকাল ৪টায় বরিশালের শেরেবাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে তার মৃত্যু হয়।

এ হত্যার ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে দেশব্যাপী তোলপাড় শুরু হয়। হত্যাকাণ্ডের পরের দিন রিফাত শরীফের বাবা আবদুল হালিম শরীফ বরগুনা থানায় ১২ জনকে আসামি করে মামলা করেন। এ ছাড়া সন্দেহভাজন অজ্ঞাতনামা আরও চার-পাঁচজনকে আসামি করা হয়। এ মামলার প্রধান আসামি নয়ন বন্ড ২ জুলাই পুলিশের সঙ্গে বন্দুকযুদ্ধে নিহত হয়। মামলার এজাহারভুক্ত ছয় আসামিসহ এ পর্যন্ত ১৬ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। এর মধ্যে ১৪ জনই স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছে।

আরো পড়ুন > ‘মিন্নি নয়ন বন্ডের বাড়িতে গিয়ে রিফাত হত্যার পরিকল্পনা করে’

এদিকে মিন্নির বাবা মোজাম্মেল হক কিশোরের দাবি, মিন্নির কাছ থেকে জোর করে জবানবন্দি নেয়া হয়েছে। তিনি এ হত্যা মামলার এক নম্বর সাক্ষীকে (মিন্নি) আসামি করা ও রিমান্ডে নেয়ার জন্য স্থানীয় সংসদ সদস্য ধীরেন্দ্র দেবনাথ শম্ভুকে দায়ী করে আসছেন। গণমাধ্যমকে তিনি বলেছিলেন, ‘সবকিছুই শম্ভু বাবুর খেলা। তার ছেলে সুনাম দেবনাথকে রক্ষা করার জন্য আমার মেয়েকে বলি দেয়া হচ্ছে।’ শম্ভুর ছেলে সুনামের বিরুদ্ধে কিশোরের অভিযোগ, তার জন্যই এতদিন মিন্নির পক্ষে আদালতে দাঁড়াননি আইনজীবীরা। এ নিয়ে গণমাধ্যম ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে বহু সমালোচনার পর বরগুনা ও ঢাকার আইনজীবীদের একটি অংশ মিন্নির পক্ষে দাঁড়ানোর ঘোষণা দেন।

image_pdfimage_print




সংবাদটি ভাল লাগলে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published.

এই বিভাগের আরো সংবাদ










© All rights reserved © 2019 notunbarta24.com
Developed by notunbarta24.Com
themebazarnotunbar8765