শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ০৫:৫৮ অপরাহ্ন




কমলাপুরে ব্যবসায়ীর স্বর্ণ ছিনতাই : তিন দিনেও উদ্ধার হয়নি ৯৫ ভরি স্বর্ণ

নিজস্ব প্রতিবেদক
  • প্রকাশ: সোমবার, ২৩ মার্চ, ২০২০

রাজধানীর কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশনে ডিবি পরিচয়ে এক স্বর্ণব্যবসায়ীর ১৩০ ভরি স্বর্ণ ছিনিয়ে নিয়েছে একদল সংঘবদ্ধ ডাকাতদল।

গত গত  বৃহস্পতিবার  (১৯ মার্চ ) দুপুর সাড়ে তিনটার দিকে এ ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় মামলা হলে পুলিশ ৪ আসামীকে গ্রেফতার করে তাদের কাছ থেকে ৩৫ ভরি স্বর্ণ উদ্ধার করে । কিন্তু এখনও বাকি ৯৫ ভরি স্বর্ণ উদ্ধার না হওয়ায় উদ্বিগ্ন অবস্থায় দিন পার করছেন ব্রাহ্মণবাড়িয়ার গহনার মালিক সুজন বণিক।

জানা যায়,গত ১৯ মার্চ বিকাল সাড়ে তিনটা নাগাদ ব্রাহ্মণবাড়িয়ার প্রতিষ্ঠিত স্বর্ণব্যবসায়ী গহনা জুয়েলার্সের মালিক সুজন বণিকের ভাই প্রীতম বণিক ও সুমন চৌধুরী ব্যবসায়িক প্রয়োজনে রাজধানীর তাঁতি বাজার থেকে ১৩০ ভরি স্বর্ণালঙ্কার ক্রয় করে ট্রেনযোগে ব্রাহ্মণবাড়িয়া যাবার উদ্দেশ্যে কমলাপুর রেলস্টেশনে পৌঁছায়। ট্রেশনে গিয়ে তারা দেখতে পায় তাদের গন্তব্যের ট্রেন যথাসময়ে আসেনি। তখন তারা রেল স্টেশনের ভেতরে একটি ফাস্টফুডের দোকানে কিছু খাবারের জন্য অপেক্ষা করতে থাকে। এমন সময় প্লার্টফরমে উপস্থিত শত শত মানুষের সামনে আনুমানিক বেলা সাড়ে তিনটায় তিন-চারজন দুষ্কৃতিকারী ফাস্টফুডের দোকানে অপেক্ষমান থাকা প্রীতম বণিক ও সুমন চৌধুরীর দিকে তেড়ে এসে ফাস্টফুডের দোকানে প্রবেশ করে জোরপূর্বক তাদের নিকট গহনা রক্ষিত ব্যাগটি দিতে বলে। এসময় তারা নিজেদের আইনশৃংখলা বাহিনীর ডিবি পুলিশ পরিচয় দেয়। তখন কিছু বুঝে উঠার আগেই তারা ব্যাগ ভর্তি থাকা ১৩০ ভরি স্বর্ণালংকার নগদ ৪ লাখ ৮০ হাজার টাকা ও তাদের ব্যবহৃত দুটি মোবাইল ফোন ছিনিয়ে নিয়ে পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করে। । এসময় প্রীতম বণিক ও সুমন চৌধুরীর সন্দেহ হয় তারা ছিনতাইকারী। এসময় দু-তিনজন দ্রুত ব্যাগ নিয়ে পালিয়ে যায় । কিন্তু পেছনে এজন ছিল । তাদের চিৎকারে আশেপাশের লোকজনের সহায়তায় ইমন ওরফে লাক মিয়া (২৮) নামে এক ছিনতাই কারীকে আটক করে ফেলে । অন্যান্যরা লুণ্ঠিত সকল মালামাল ও টাকা পয়সা নিয়ে পালিয়ে যায়।

পরে গহনা জুয়েলার্সের মালিকের ভাই প্রীতম বণিক আসামি গ্রেফতার ও লুণ্ঠিত মালামাল উদ্ধার করতে রেলওয়ে থানায় ওই দিন বিকেলে ১৭০/৩৯২/৩৪ ধারা মোতাবেক মামলা করে পুলিশের সহযোগিতা চান।পরে রেলওয়ে পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা ডিসি ডিবি (সিরিয়াস ক্রাইম ইনভেস্টিগেশন) বিভাগকে বিষয়টি অবগত করেন।এরপর ডিবি অনুসন্ধান ও অভিযান শুরু করে। ছিনতাইয়ের ঘটনার যাবতীয় ভিডিও রেলওয়ে স্টেশনের সিসিটিভিতে ধরা পড়েছে। ঘটনার কয়েক ঘন্টা পর ডিবি (সিরিয়াস ক্রাইম ইনভেস্টিগেশন) বিভাগের অর্গানাইজড ক্রাইম প্রিভেনশন টিমের সিনিয়র সহকারী পুলিশ কমিশনার মো. নাজমুল হকের নেতৃত্বে একটি দল টানা তিনদিন ঢাকা মহানগরীর বিভিন্ন এলাকায় অভিযান পরিচালনা করে চারজনকে গ্রেফতার করে। আর তাদের হেফাজত হতে ৩৫ ভরি স্বর্ণালংকার, ১ লাখ ২৬ হাজার টাকা এবং ১টি ছিনতাইকৃত মোবাইল উদ্ধার করা হয়।তবে এখনও ছিনতাই হওয়া বাকী ৯৫ ভরি স্বর্ণ উদ্ধার হয়নি। গ্রেফতারকৃতরা হলেন- মো. মোছলেম (৩৫); আছীব চৌধুরী ওরফে ফিরোজ ( ৫৪); মো. জাফর ইকবাল (৫৫) এবং মো. মাসুম হাসান (৩২)।

এবিষয়ে ডিবি (সিরিয়াস ক্রাইম ইনভেস্টিগেশন) বিভাগের অর্গানাইজড ক্রাইম প্রিভেনশন টিমের সিনিয়র সহকারী পুলিশ কমিশনার মো. নাজমুল হক বলেন আসামীদের মধ্যে কয়েকজনকে গ্রেফতার করা গেলেও এখনও কয়েকজনকে গ্রেফতার করা যায়নি। ছিনতাই হওয়া মালামালগুলো ১৩টি ভাগে ভাগ করেছিল আসামীরা। তাদের মধ্যে চারজনকে গ্রেফতার করে মোট পাঁচ ভাগ উদ্ধার করেছি। বাকী আসামিদের গ্রেফতার করতে পারলে বাকী ৮ ভাগ উদ্ধার করা সম্ভব। তিনি বলেন মামলাটি আজ সোমবার আদালতে উঠবে। এরপর আসামীদের আদালতে তোলা হবে। কোর্ট যেভাবে অর্ডার করবে পরবর্তীতে সেভাবে মামলা পরিচালিত হবে। তিনি বলেন নিশ্চয়ই নতুন তদন্ত কর্মকতা নির্বাচন করবেন আদালত। তারা আসামীদের গ্রেফতার করবে এমন আশাবাদ আমার।

সিনিয়র সহকারী পুলিশ কমিশনার (এসি) মো. নাজমুল হক আরো বলেন, এটি ১০/১২ জনের একটি সংঘবদ্ধ ডাকাত চক্র। তারা মূলত তিনটি দলে বিভক্ত। প্রথম দল তাঁতি বাজার থেকে কে কখন স্বর্ণালঙ্কার ক্রয় করে কোথায় যাবে এর তথ্য সংগ্রহ করে। পরে দ্বিতীয় দলের কাছে তথ্য সরবরাহ করে। তথ্য প্রাপ্তির পর দ্বিতীয় দল কারা টার্গেটের কাছ থেকে মাল ছিনিয়ে নিবে তা ঠিক করে। এভাবে তিন দলের সমন্বয়ে পরিকল্পিতভাবে তারা এ ধরনের ডাকাতি সংঘটিত করে থাকে এবং ডাকাতির পর তারা সবাই একত্রিত হয়ে হোটেলের রুম ভাড়া নিয়ে লুণ্ঠিত মালামাল সমহারে বণ্টন করে নিয়ে যায়।

এবিষয়ে গহনা জুয়েলার্সের মালিক সুজন বণিক বলেন, আমার ছিনতাই হওয়া গহনার মধ্যে কিছু উদ্ধার হলেও এখনও ৯৫ ভরি স্বর্ণ ও ছিনতাই হওয়া নগদ টাকাগুলোর বেশীর ভাগই উদ্ধার না হওয়ায় হতাশ আমি । কারণ আমার ব্যবসার পুজিঁই ছিলো এগুলো। তিনি বলেন ,আমি মনে করি ঠিক মতো আসামীদের ধরতে অভিযান চালালে আমার ছিনতাই হওয়া মালামাল আমি পেতে পারি। ডিবির নাজমূল স্যারের আন্তরিক অভিযানে আমি মুগ্ধ। উনাকে তদন্তভার দিলে আমার বিশ্বাস তিনি আসামীদের গ্রেফতার করতে সক্ষম হবে। আজ মামলা কোর্টে উঠবে। আমরা সেভাবেই প্রস্ততি নিচ্ছি। তিনি বলে এ চক্রের হাত অনেক লম্বা। এ চক্রটিকে সনাক্ত করা গেলে আমার মতো অনেককেই আর পথে বসতে হবে না।

উল্লেখ্য একই কায়দায় কয়েকমাস আগে একই ব্যবসায়ীর নগদ ২৭ লক্ষ ছিনতাই হয় কমলাপুর স্টেশনে। এখনও সে টাকা উদ্ধার ও মামলার কোন কূলকিনারা হয়নি।

image_pdfimage_print




সংবাদটি ভাল লাগলে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published.

এই বিভাগের আরো সংবাদ










© All rights reserved © 2019 notunbarta24.com
Developed by notunbarta24.Com
themebazarnotunbar8765