চাঁদপুরে স্ত্রীকে হাতুড়ি দিয়ে হত্যার পর চলন্ত ট্রেনের নিচে ঝাঁপ দিয়ে আত্মহত্যা করেছেন স্বামী। আজ রবিবার চাঁদপুর সদরের গুলিশা গ্রামে ও শহরের মিশন রোড এলাকায় এই ঘটনা ঘটে। দুপুরে নিহতদের লাশ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য চাঁদপুর জেনারেল হাসপাতাল মর্গে পাঠিয়েছে পুলিশ। নিহত বেবী আক্তার ও তার স্বামী খোরশেদ আলম সদর উপজেলার বালিয়া ইউনিয়নের গুলিশা গ্রামের বাসিন্দা।
প্রাথমিকভাবে পুলিশ নিশ্চিত হয়েছে, পারিবারিক কলহের দ্বন্দ্ব থেকে মর্মান্তিক এই হত্যাকাণ্ড হয়েছে। তবে স্বজনরা বলেছেন, স্বামী স্ত্রীর মধ্যে কোনো বিরোধ ছিল না।
নিহত বেবী আক্তারের বড়ভাই সাবেক ব্যাংক কর্মকর্তা শেখ মফিজুল ইসলাম জানান, তার ভগ্নিপতি খোরশেদ আলম (৬০) ট্রেনের নিচে ঝাঁপ দিয়ে আত্মহত্যা করেছেন। এমন সংবাদ পেয়ে চাঁদপুর জেনারেল হাসপাতালে ছুটে যাই। পরে জানতে পারি বাড়িতে বোন বেবী আক্তার (৪৫) ও মারা গেছে। তিনি দাবি করেন, তার বোন ও ভগ্নিপতির মধ্যে কোনো ধরণের বিরোধ ছিল না।
তবে নিহতের মেয়ে আয়েশা আক্তার বলেন, পারিবারিক অভাব অনটনের কারণে বাবা মায়ের মধ্যে মাঝেমধ্যে ঝগড়াঝাটি হতো। তিনি আরো বলেন, তার বাবা তিনবার স্ট্রোক করেছে। তার আগে সিএনজি অটোরিকশা চালিয়ে সংসার চালাতো তার বাবা।
স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান তাজুল ইসলাম মিয়াজী বলেন, তিন মেয়েকে বিয়ে দিয়ে স্বামী স্ত্রী দুইজনই বাড়িতে থাকতেন। দরিদ্র হওয়ায় তাদেরকে চাল ও নগদ টাকা দিয়ে সাহায্য করা হতো। তবে পারিবারিক বিরোধ আছে, এমনটি তার জানা নেই।
এদিকে, ঘটনার পরই চাঁদপুর সদর মডেল থানার পুলিশ পরিদর্শক আব্দুল রব ঘটনাস্থলে ছুটে যান। তিনি নিহত বেবী আক্তারের রক্তাক্ত লাশ উদ্ধার করেন। এসময় লাশের পাশ থেকে একটি হাতুড়ি ও একটি স্ক্রু ড্রাইভার উদ্ধার করেন। ধারণা করা হচ্ছে, গত রাতে বা আজ সকালের কোনোর এক সময় হাতুড়ি দিয়ে পিটিয়ে অচেতন করে পরে স্ক্রু ড্রাইভার দিয়ে খুঁচিয়ে বেবী আক্তারকে হত্যা করা হয়।
দুপুরে চাঁদপুর সদর সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার জাহেদ পারভেজ চৌধুরী ও সদর মডেল থানার ওসি (তদন্ত) হারুনুর রশিদ ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন। এসময় অতিরিক্ত পুলিশ সুপার জানান, উদ্ধার হওয়া হাতুড়ি ও স্ক্রু ড্রাইভার এবং আত্মহত্যাকারী খোরশেদ আলমের ফিঙ্গার প্রিন্ট পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই) এর মাধ্যমে সংগ্রহ করা হয়েছে। কি কারণে এমন মৃত্যুর ঘটনা ঘটেছে- পুলিশ অধিকতর তদন্ত করে তা খতিয়ে দেখবে বলে জানান, এই পুলিশ কর্মকর্তা।
অন্যদিকে, নিহতদের লাশ উদ্ধার করে ময়না তদন্তের জন্য চাঁদপুর জেনারেল হাসপাতাল মর্গে পাঠানো হয়েছে। এই ঘটনায় নিহতদের পরিবারের পক্ষ থেকে মামলা দায়েরর প্রস্তুতি চলছে।