বুধবার, ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ০৫:৩১ পূর্বাহ্ন




শ্রমিকদের পর এবার মালিকদের সিদ্ধান্তে নৌযান চলাচল বন্ধ

নতুনবার্তা ডেস্ক
  • প্রকাশ: বৃহস্পতিবার, ২৫ জুলাই, ২০১৯

শ্রমিকরা ধর্মঘট প্রত্যাহার করে নিলেও মালিকদের সিদ্ধান্তে এবার নৌযান চলাচল বন্ধ রয়েছে বরিশালসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে। বাংলাদেশ নৌযান শ্রমিক ফেডারেশনের ধর্মঘটে বুধবার দিনভর সারা দেশে কার্যত যাত্রী ও পণ্যবাহী নৌযান চলাচল বন্ধ ছিল।

বিকালে শ্রম অধিদফতরের ত্রিপক্ষীয় বৈঠকের পর নৌ ধর্মঘট তুলে নেয় শ্রমিক ফেডারেশন। এর পর দেশের বিভিন্ন স্থানে নৌযান চলাচল শুরুর উদ্যোগের মধ্যেই লঞ্চ চলাচল বন্ধ ঘোষণা করেন মালিকরা।

বৃহস্পতিবার মালিক সমিতির ডাকা এ ধর্মঘটের কারণে বরিশালসহ বিভিন্ন জেলায় লঞ্চ চলাচল বন্ধ রয়েছে। সকাল থেকে হাতেগোনা কয়েকটি ঘাট ছাড়া বাকি ঘাটগুলোতে লঞ্চ চলাচল করেনি।

এদিকে শ্রমিক ও মালিকদের পাল্টাপাল্টি ধর্মঘটে ভোগান্তিতে পড়েছেন সাধারণ যাত্রী ও ব্যবসায়ীরা। দূরদূরান্ত থেকে অসংখ্য যাত্রী ঘাটে গিয়ে জানতে পারেন লঞ্চ চলাচল বন্ধ। গন্তব্যে যেতে না পেরে তাদের আবার ফিরে যেতে হচ্ছে। পাল্টাপাল্টি এ ধর্মঘটে চরম দুর্ভোগে পড়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেন তারা।

ধর্মঘটের কারণে দিনভর মোংলাবন্দরের চ্যানেলে অবস্থানরত বাণিজ্যিক জাহাজের পণ্য খালাস ও বোঝাই বন্ধ ছিল। চট্টগ্রাম, ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আশুগঞ্জসহ বিভিন্ন অভ্যন্তরীণ বন্দরে পণ্য ওঠানামায় বিঘ্ন ঘটে।

ঢাকা নদীবন্দর কর্মকর্তা বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন অধিদফতরের যুগ্ম পরিচালক মো. আলমগীর হোসেন জানান, দিনে শ্রমিক ও রাতে মালিকরা ধর্মঘট করায় ঢাকা নদীবন্দর থেকে কার্যত লঞ্চ চলাচল বন্ধ রয়েছে।

বেতন কাঠামো বাস্তবায়ন, নৌপথে সন্ত্রাস-চাঁদাবাজি বন্ধ, নৌপথের নাব্য রক্ষাসহ ১১ দফা দাবিতে শ্রমিকরা দীর্ঘদিন ধরেই আন্দোলন করে আসছেন।

সবশেষ তারা ১৬ জুলাই কর্মবিরতিতে যান। ওই ধর্মঘট চলার মাঝপথে সরকার, মালিক ও শ্রমিকপক্ষের ত্রিপক্ষীয় বৈঠকে ৪৫ কার্যদিবসের মধ্যে দাবিগুলো মেনে নেয়ার বিষয়ে সমঝোতা হয়।

২২ জুলাই সেই সময়সীমা শেষ হয়। কিন্তু দাবি বাস্তবায়ন না হওয়ায় কর্মবিরতিতে যান শ্রমিকরা। দিনভর ধর্মঘট চলার পর বিকালে শ্রম অধিদফতরে ত্রিপক্ষীয় বৈঠকে তা স্থগিতের ঘোষণা দেন শ্রমিক ফেডারেশনের নেতারা।

শ্রমিক ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক চৌধুরী আশিকুল আলম বলেন, আমাদের মধ্যে সমঝোতা হওয়ায় কর্মবিরতি স্থগিত ঘোষণা করেছি।

এর পরই ঢাকা নদীবন্দরে বৈঠক করেন লঞ্চ মালিকরা। ওই বৈঠকে শ্রমিক ফেডারেশনের বারবার কর্মবিরতি কর্মসূচি পালনের প্রতিবাদে মালিকরা লঞ্চ চলাচল বন্ধের ঘোষণা দেন।

তাদের এ ঘোষণার কারণে বেশিরভাগ লঞ্চ চলাচল করেনি। এ বিষয়ে লঞ্চ মালিকদের সংগঠন অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন ও যাত্রী পরিবহন সংস্থার সহসভাপতি সাইদুর রহমান রিন্টু বলেন, মঙ্গলবার রাতে লঞ্চ নিয়ে বুধবার সকালে ঘাটে এসেছেন শ্রমিকরা। এর পর হঠাৎ করে তারা উধাও হয়ে গেল। আমাদের না জানিয়ে লঞ্চ চালানো বন্ধ করে দিল। আবার বিকালে হঠাৎ করে তারা এসে লঞ্চ চালাতে উদ্যত হলো। লঞ্চের মালিক কারা- শ্রমিকরা নাকি মালিকরা?

তিনি বলেন, শ্রমিকদের এসব উৎপাতের বিরুদ্ধে অবস্থান নিতেই আমরা লঞ্চ চলাচল বন্ধ করে দিয়েছি। সারা দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলেও লঞ্চ চলছে না।

বৃহস্পতিবার সকাল থেকে বরিশাল থেকে অভ্যন্তরীণ রুটে চলাচল করা কোনো লঞ্চ গন্তব্যের উদ্দেশ্যে ছেড়ে যায়নি। এদিকে দ্বিতীয় দিনের ন্যায় লঞ্চ চলাচল বন্ধ থাকায় যাত্রীরা পড়েছেন চরম ভোগান্তিতে। বিকল্প পদ্ধতিতে বাড়তি ভাড়া গুনে তাদের যেতে হচ্ছে গন্তব্যে।

রিন্টু বলেন, শ্রমিকরা যখন-তখন অযৌক্তিক দাবিতে কোনো রকম পূর্ব ঘোষণা ছাড়াই নৌ ধর্মঘট ডেকে যাত্রীদের চমর দুর্ভোগে ফেলছেন। বিশেষ করে ঈদ ও কোরবানির আগে তারা এই কাজটি করছেন।

এ অবস্থায় শ্রমিক সংগঠনগুলোর আন্দোলনের যৌক্তিকতা ও কোনো ঘোষণা ছাড়াই কেন হঠাৎ করে ধর্মঘট ডাকা হলো, সেই বিষয়টি সুরাহা না হওয়া পর্যন্ত আমরা মালিকরা লঞ্চ চালাব না।

দেশের বিভিন্ন স্থানে দেখা গেছে, ঢাকা, বরিশাল, চাঁদপুর, নারায়ণগঞ্জসহ প্রধান প্রধান নদীবন্দর থেকে কোনো লঞ্চ ছেড়ে যেতে দেয়া হয়নি। আগে ছেড়ে আসা লঞ্চগুলোকে যাত্রী নামিয়ে দিয়ে দূরে নোঙর করে রাখতে দেখা গেছে। পন্টুনগুলো শূন্য পড়ে থাকায় অনেক যাত্রী ঘাটে এসে দুর্ভোগে পড়েন।

শ্রমিক ধর্মঘটে খুলনায় পণ্য খালাস বন্ধ:  খুলনা প্রতিনিধি জানায়, ভৈরব, রূপসা, কাজিবাছা, শালতা, পশুর, শিবসা, শাকবাড়িয়া নদীতে ১২০০ নৌযান মালামাল নিয়ে নোঙর করেছিল। মোংলাবন্দরে ৯টি বিদেশি জাহাজের মালামাল খালাস বন্ধ রয়েছে।

চাঁদপুরে জনভোগান্তি চরমে: চাঁদপুর প্রতিনিধি জানান, কর্মবিরতির কারণে চাঁদপুরেও সব ধরনের নৌযান চলাচল বন্ধ ছিল। এসব নৌযান শহরের বিকল্প লঞ্চঘাটে ও ডাকাতিয়া নদীতে নোঙর করে রাখা হয়। এতে ভোগান্তিতে পড়েন হাজার হাজার যাত্রী। তারা জানান, আগ থেকে শ্রমিকদের কর্মবিরতির কথা না জানার কারণে চাঁদপুর জেলার ৮ উপজেলা, লক্ষ্মীপুর ও নোয়াখালী থেকে তারা ঘাটে এসেছেন। লঞ্চ না পাওয়ায় তারা দুর্ভোগের শিকার হয়েছেন।

একইভাবে দুর্ভোগে পড়েন ভোলা, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, বরিশাল, বরগুনা, পটুয়াখালী, চট্টগ্রামসহ অন্য জেলার বাসিন্দারা।

image_pdfimage_print




সংবাদটি ভাল লাগলে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published.

এই বিভাগের আরো সংবাদ










© All rights reserved © 2019 notunbarta24.com
Developed by notunbarta24.Com
themebazarnotunbar8765