রাতে শিশুরা ঘুমাতে চায় না, ঘুমালেও বারবার জেগে ওঠে তারা। এমন বিড়ম্বনার সঙ্গে সব মায়েরাই পরিচিত।
তবে শিশুদের ঘুম নিয়ে এ সমস্যা কাটিয়ে উঠছে ব্রিটিশ নারীরা। এ নিয়ে বিবিসি বাংলা প্রকাশ করেছে একটি প্রতিবেদন।
জ্যাকি উলস্টেইনহোম নামে জমজ সন্তানের এক মা বলেন, “তারা রাতে যেকোনো সময় ১০ থেকে ৪০ বারের মত জেগে উঠতো এবং আমি একেবারেই বাড়িয়ে বলছি না।”
তিনি জানান, সেই সময়ে সন্ধ্যা এবং রাত ছিল তার জন্য রীতিমত ভীতিকর।
জ্যাকি বিবিসি টু’র ভিক্টোরিয়া ডার্বিশায়ার প্রোগ্রামে তিনি আরও বলেন, “তিন মাস বয়সে যখনে শিশুরা একটু একটু করে স্থির হতে থাকে, আমাদের অবস্থা দিনকে দিন হয়ে পড়ছিল আরো খারাপ, তারা একেবারেই ঘুমাতো না।”
উলস্টেইনহোম বলেন, “একজন আমার সঙ্গে একঘরে, অন্য জন আমার স্বামী জুলিয়ানের সঙ্গে আরেক ঘরে । আমরা দুইজনেই এই দুই বাচ্চাকে ঘুম পাড়ানোর চেষ্টা করতাম।”
বাচ্চাদের ঘুমের সমস্যার কারণে বাবা-মা দুইজনেই ঘুমাতে পারতেন না। এমনকি কর্মজীবনেও রীতিমতো নেতিবাচক প্রভাব পড়তে লাগল তাদের।
এমন সমস্যা বাচ্চাদের বাবা-মায়ের জন্য একেবারেই নতুন নয়। তাদেরকে পরিত্রান দিতে এগিয়ে আসলেন অধ্যাপক হিদার এলপিক।
অধ্যাপক এলপিক শেফিল্ডের ৪০ টা পরিবারকে একত্রিত করে একটা পাইলট প্রকল্প চালু করেন।
এর মাধ্যমে শেফিল্ডের চিলড্রেন হসপিটাল স্লিপ ক্লিনিক, ইংল্যান্ডের জাতীয় স্বাস্থ্য সেবা সংস্থা আর লোকাল কাউন্সিল শিশুর ঘুমের প্যাটার্নের উন্নতি ঘটানোর কাজ শুরু করে।
অধ্যাপক হিদার এলপিক বলেন, “বাচ্চাদের ঘুমের সমস্যা নিয়ে বাবা-মায়েরা কথা বলতে চান না। তারা মনে করে মানুষজন হয়ত ভাববে তারা বাচ্চাদের ঠিক মত দেখাশোনা করতে পারে না। তাই তারা কাউকে বলে না এবং কোন সাহায্য চায়না।”
গত এক বছরে শেফিল্ড শহরের আটশো শিশুর ঘুমের সমস্যা কাটিয়ে তুলতে সাহায্য করেছে এলপিকের এই প্রকল্প।
শিশুদের জন্মের পর থেকে তাদের মেডিকেল হিস্ট্রি বিশ্লেষণ করা হতো। তাদেরর ঘুমের প্রকৃতিও জেনে নেওয়া হতো খুঁটিনাটি।
এলপিকের পরামর্শ মতো কাজ করেন যমজ বাচ্চার সেই মা উলস্টেইনহোম।
তিনি বলেন, “ঘুমাতে যাওয়ার আগে আমরা নিচের তলার বাতি কম করে দিতাম। তারপর টিভি, রেডিও এবং সব ধরণের স্ক্রিন বন্ধ করে দিতাম। এরপর আমরা রঙ করা, ছবি আঁকা, খেলা তৈরি করা -যেকোনো কিছু যেটা চোখ এবং হাতের সমন্বয়ে করতে হয় সেসব করতাম বাচ্চাদের।”
উলস্টেইনহোম বলেন, “তারপর আমরা উপরে যেতাম, তাদের গোসল করাতাম এবং সরাসরি বিছানায় গিয়ে শুয়ে পরতাম। আমরা এটা একদম একই রুটিন প্রতিদিন অনুসরণ করতাম। এমনকি আমরা যখন তাদের শুভরাত্রি বলতাম একই শব্দ ব্যবহার করতাম ধারাবাহিকভাবে।”
ইংল্যান্ডের জাতীয় স্বাস্থ্য সেবার তথ্য অনুযায়ী এই পদ্ধতি শেফিল্ডে শিশুদের আরো দুই ঘণ্টা ৪০ মিনিট ঘুম বাড়িয়ে দিয়েছে। আর আগে তারা ঘুমাতে যে দুই ঘণ্টা সময় লাগাতো এখন সেটা ৩০ মিনিটে নেমে এসেছে।
বাবা-মা এবং যারা বাচ্চাদের যত্ন নিতেন তারা বলছেন তাদের জীবনমানের উন্নতি হয়েছে। এছাড়া তাদের বাচ্চাদের সাথে একটা ভালো সম্পর্ক তৈরি হয়েছে। বাবা-মায়েরা নিজেরাও আগের চেয়ে বেশি ঘুমাতে পারছেন।