শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ১১:০৭ অপরাহ্ন




রাষ্ট্রপতির ক্ষমার ১০ বছর পর কারাগার থেকে মুক্তি পেলেন তিনি

জামালপুর প্রতিনিধি
  • প্রকাশ: মঙ্গলবার, ১৬ জুলাই, ২০১৯
সদ্য মুক্তি পাওয়া বাবাকে জড়িয়ে মেয়ের কান্না -নতুনবার্তা

রাষ্ট্রপতির সাধারণ ক্ষমার ১০ বছর পর জামালপুর জেলা কারাগার থেকে মুক্তি পেলেন সরিষাবাড়ি উপজেলার পাখিমারা গ্রামের বৃদ্ধ আজমত আলী মাস্টার।

হাইকোর্টের আপিল বিভাগের নির্দেশে মঙ্গলবার সকাল ১১টার দিকে জামালপুর কারা কর্তৃপক্ষ তাকে মুক্তি দেয়।

যাবজ্জীবন সাজার রায় পুনর্বিবেচনা চেয়ে তাঁর পক্ষে সুপ্রিম কোর্ট লিগ্যাল এইড কমিটির করা আবেদনের নিষ্পত্তি করে গত ২৭ জুন আপিল বিভাগ একটি রায় দেন। ওই আদেশের ভিত্তিতে তাকে তাৎক্ষণিকভাবে মুক্তি দিতে সোমবার সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের সহকারী রেজিস্ট্রার মো. আবু তাহের নির্দেশনা পাঠান। ওই নির্দেশনাটি বিশেষ ডাকযোগে মঙ্গলবার সকাল সাড়ে ১০টার দিকে জামালপুরের জেল সুপার মো. মকলেছুর রহমানের কাছে পৌঁছে। নির্দেশনা পাওয়ার ৩০ মিনিটের মধ্যে আজমত আলীকে কারাগার থেকে মুক্তি দেওয়া হয়।

জানা গেছে, জামালপুরের সরিষাবাড়ী উপজেলার তারাকান্দি এলাকার পাখিমারা গ্রামের ইজ্জত উল্ল্যা সর্দারের ছেলে আজমত আলী। তার বয়স এখন ৭৪ বছর। টাঙ্গাইলের গোপালপুর ঘোড়ামারা এলাকার ভেঙ্গুলা উচ্চবিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক ছিলেন তিনি। ১৯৮৭ সালের ১ এপ্রিল জমি নিয়ে বিরোধের জেরে এলাকার কলিম উদ্দিনের ছেলে রেজাউল করিম নিহত হন। এ ঘটনায় আজমত আলীকে আসামি করে হত্যা মামলা করা হয়। এ মামলায় ১৯৮৯ সালের ৮ মার্চ জামালপুরের জেলা ও দায়রা জজ আদালত তাকে যাবজ্জীবন সাজা দেন। এ রায়ের বিরুদ্ধে হাইকোর্টে আপিল করেন আজমত আলী। একই সময় তিনি রাষ্ট্রপতির কাছে সাধারণ ক্ষমার জন্যও আবেদন করেন। আপিল বহাল থাকার সময় রাষ্ট্রপতির ক্ষমায় ১৯৯৬ সালের ২১ আগস্ট জামালপুর কারাগার থেকে মুক্তি পান তিনি। কারাগার থেকে মুক্তি পেয়ে তিনি সরিষাবাড়ি গ্রামের বাড়ি চলে যান। অপরদিকে ২০০৫ সালের ২ মার্চ হাইকোর্টের রায়েও তিনি খালাস পান। ১৩ বছর বাড়িতে থাকার পর কোন কারণ দর্শানো ছাড়াই ২০০৯ সালের ১৯ অক্টোবর আজমত আলীকে তার বাড়ি থেকে পুলিশ ফের গ্রেফতার করে। এর পর থেকে তার দিন কাটতে থাকে জামালপুর জেলা কারাগারের সাধারণ কয়েদিদের সঙ্গে।

জেল সুপার মো. মকলেছুর রহমান বলেন, ২০১৮ সালে এই কারাগারে যোগদানের পর আজমত আলীর বিষয়টি নজরে আসে। আমি কারাগারেই আজমত আলীর সঙ্গে পুরো বিষয়টি আলোচনা করি। পরে আমি তার পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে যোগাযোগ করে কাগজপত্র নিয়ে সুপ্রিম কোর্ট লিগ্যাল এইড কমিটির কাছে যাওয়ার পরামর্শ দেই।

আজমত আলী মাস্টারের মেয়ে বিউটি আক্তার বলেন, রাষ্ট্রপতির ক্ষমার পরও আমার বাবাকে অন্যায়ভাবে গ্রেফতার করে ১০ বছর জেলে বন্দি করে রাখা হয়েছে। আমার বাবার জীবনের মূল্যবান সময়ের বেশিরভাগই জেলে কাটতে হলো। জীবনে কিছুই পেলেন না তিনি।

যাদের ভুলে তার শিক্ষক বাবাকে দীর্ঘ সময় জেলের ঘানি টানতে হলো তিনি তাদের শাস্তির দাবি জানান।

মুক্তি পেয়ে আজমত আলী মাস্টার বলেন, মুক্তি পাওয়াটা আনন্দের বিষয় হলেও আমার জন্য খুবই দুঃখের। আমার জীবনটা কারাগারেই কেটে গেছে। লেখাপড়া করে আমি কি করতে পারলাম। জীবনতো কারাগারেই শেষ। আমি এর বিচার আপনাদের কাছে দিলাম।

image_pdfimage_print




সংবাদটি ভাল লাগলে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published.

এই বিভাগের আরো সংবাদ










© All rights reserved © 2019 notunbarta24.com
Developed by notunbarta24.Com
themebazarnotunbar8765