রবিবার, ২১ এপ্রিল ২০২৪, ০৯:১০ অপরাহ্ন




ভুয়া সনদ বিক্রি করেই সাড়ে সাত কোটি টাকার মালিক

স্টাফ রিপোর্টার
  • প্রকাশ: সোমবার, ১৫ জুলাই, ২০১৯

তাদের পুঁজি কেবল একটি বহুতল ভবনের দুটি ফ্লোর। সেখানে সাইন বোর্ড সাঁটিয়ে অন্তত ১০টি নামসর্বস্ব প্রতিষ্ঠানের আড়ালে সার্টিফিকেট বাণিজ্য করে আসছিলেন তারা। এটা করেই গত তিন বছরে কোটি কোটি টাকার মালিক হয়েছেন স্বামী-স্ত্রী। এখন পর্যন্ত বিভিন্ন ব্যাংকের হিসাব নম্বরে সাড়ে সাত কোটি টাকা জমা হওয়ার তথ্য পাওয়া গেছে তাদের। এই দুই প্রতারক হলেন আল ফারাবি মো. নুরুল ইসলাম ও তার স্ত্রী আকলিমা খাতুন। দু’জনের বাড়িই বগুড়ার ঝোপগাড়ির বড় কুমিরায়। প্রতারণার শিকার একাধিক ব্যক্তির অভিযোগের পর গতকাল রোববার রাজধানীর একটি এলাকা থেকে তাদের গ্রেফতার করেছে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ সিআইডি। তাদের বিরুদ্ধে করা হয়েছে মানি লন্ডারিং আইনে মামলা।

সিআইডির একাধিক উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা জানান, ফারাবি ও তার স্ত্রী আকলিমা বগুড়ার সদর থানার কলেজ রোডের সাধারণ বীমা ভবনের পঞ্চম ও ষষ্ঠ তলায় বেশ কয়েকটি প্রতিষ্ঠানের সাইন বোর্ড ঝুলিয়ে দেন। এর মধ্যে রয়েছে নুরুল ইসলাম ইউনিভার্সিটি অব ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড টেকনোলজি, নিয়াক মেডিকেল অ্যাসিস্ট্যান্ট ট্রেনিং ইনস্টিটিউট, কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ, বগুড়া টিএইচবিপিইডি কলেজ, এসবি সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজি কলেজ, পাবলিক হেলথ ডেভেলপমেন্ট ওয়ার্ক, শহীদ মোনায়েম হোসেন বিএড কলেজ, নুরুল ইসলাম আকলিমা প্যারামেডিকেল ইনস্টিটিউট, কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড বিএম কলেজ ও রংপুর একাডেমিক অ্যান্ড প্রফেশনালস ইনস্টিটিউট।

সিআইডির সূত্রে জানা গেছে, এসব প্রতিষ্ঠানের মধ্যে ফারাবি ও তার স্ত্রী চারুকলা ডিপ্লোমা সার্টিফিকেট বিক্রি করেই সবচেয়ে বেশি অর্থ হাতিয়ে নিয়েছেন। এ ছাড়া অনেক চাকরিপ্রত্যাশীকে প্রলোভনের ফাঁদে ফেলতেন তারা। বিভিন্ন উচ্চ বিদ্যালয়ে চাকরি দেওয়ার কথা বলে অনেক বেকার শিক্ষার্থীকে তাদের নামসর্বস্ব প্রতিষ্ঠানে ভর্তি করানো হতো। এ ছাড়া ভর্তি হলে পাস করানো হবে, এই নিশ্চয়তাও দিতেন তারা।

সিআইডির একজন কর্মকর্তা জানান, গণমাধ্যমে তারা নিজ প্রতিষ্ঠানে ভর্তির ব্যাপারে বিজ্ঞাপন দিতেন। সেখানে বলা হতো, তাদের চারুকলা ডিপ্লোমা কোর্স জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অনুমোদন রয়েছে। এই ধরনের একটি বিজ্ঞপ্তি নজরে আসার পর জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের আঞ্চলিক কেন্দ্রের পক্ষ থেকে ফারাবি ও তার স্ত্রীর নামে মামলা করা হয়েছিল।

তদন্তে উঠে এসেছে, শত শত শিক্ষার্থী ফারাবি ও তার স্ত্রীর প্রতারণার ফাঁদে পা দিয়ে ভুয়া সার্টিফিকেট পেয়েছেন। অনেকে আবার জেনেশুনেই তাদের কাছ থেকে সার্টিফিকেট কিনতেন। চারুকলা ইনস্টিটিউট থেকে এখন পর্যন্ত ৪৩৬ জনকে এ ধরনের নকল সার্টিফিকেট সরবরাহ করেছেন তারা। একেকটি সার্টিফিকেট ৫০ হাজার থেকে দেড় লাখ টাকায় বিক্রি করতেন।

সিআইডি বলছে, ফারাবি ও তার স্ত্রীর নামে-বেনামে স্থাবর ও অস্থাবর সম্পদের অনুসন্ধান করে এখন পর্যন্ত বেশকিছু তথ্য তাদের হাতে এসেছে। বগুড়ার বিভিন্ন ব্যাংকে নামে-বেনামে হিসাব নম্বর খুলেছেন তারা। বাংলাদেশ ব্যাংকের সহায়তায় ফারাবি ও তার স্ত্রীর নামে এসব হিসাব নম্বরে সাত কোটি ৩১ লাখ ৫৮ হাজার ৫০০ টাকা পাওয়া গেছে। বগুড়ায় তাদের দুটি ফ্ল্যাট রয়েছে। এ ছাড়া বগুড়ায় ফারাবি ও তার স্ত্রীর নামে ৪০ বিঘা জমি থাকার তথ্যও মিলেছে।

সিআইডির অতিরিক্ত পুলিশ সুপার রায়হান উদ্দিন খান বলেন, ‘ফারাবি ও তার স্ত্রীর অর্জিত সম্পদের ব্যাপারে এরই মধ্যে অনেক তথ্য পাওয়া গেছে। জালিয়াতি করে অল্প সময়ের মধ্যে কোটি কোটি টাকার মালিক বনে গেছেন তারা।’

মামলার বাদী ও অনুসন্ধান কর্মকর্তা সিআইডির পরিদর্শক ইব্রাহিম হোসেন বলেন, ‘২০১৬ সাল থেকে ফারাবি ও তার স্ত্রী বগুড়ায় দুটি ফ্ল্যাটে সাইন বোর্ডধারী প্রতিষ্ঠান খুলে সাধারণ শিক্ষার্থী ও তাদের অভিভাবকদের সঙ্গে প্রতারণা করে আসছিলেন। ফারাবি নিজেকে অধ্যক্ষ বলে পরিচয় দিতেন। আর তার স্ত্রী ছিলেন পরিচালনা পর্ষদের সভাপতি।’

ইব্রাহিম হোসেন আরও বলেন, ‘ফারাবি ও তার স্ত্রীর নামে বিভিন্ন ব্যাংকে প্রায় সাড়ে ৭ কোটি টাকা পাওয়া গেছে। আদালতের অনুমতি নিয়ে ফ্রিজ করা হয়েছে এসব অর্থ। প্রতারণা ও অপরাধলব্ধ কাজের মাধ্যমে অর্থ উপার্জন করায় এই ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। স্বামী-স্ত্রী দুজনই নিজেদের স্নাতক ডিগ্রিধারী বলে দাবি করেছেন। তাদের শিক্ষাগত যোগ্যতার বিষয়ে তদন্ত করা হবে।’

image_pdfimage_print




সংবাদটি ভাল লাগলে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published.

এই বিভাগের আরো সংবাদ










© All rights reserved © 2019 notunbarta24.com
Developed by notunbarta24.Com
themebazarnotunbar8765