শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ১১:০৮ পূর্বাহ্ন




পৃথক অবস্থান নিতে যাচ্ছেন মান্না, পাশে চাইছেন অলি

নতুন বার্তা ডেস্ক
  • প্রকাশ: শুক্রবার, ২ আগস্ট, ২০১৯

লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টির (এলডিপি) চেয়ারম্যান ড. অলি আহমদের পর এবার পৃথক অবস্থান নিতে যাচ্ছেন নাগরিক ঐক্যের আহ্বায়ক মাহমুদুর রহমান মান্না। আজ শুক্রবার সকালে সংবাদ সম্মেলন করে মান্না একাই দেশের বিদ্যমান কিছু সংকটসহ রাজনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে কথা বলবেন। আগে তাঁর তৎপরতা জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের ব্যানারেই দেখা যেত।

এদিকে আজ বিকেলে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার মুক্তির দাবিসহ বিভিন্ন বিষয় নিয়ে সংবাদ সম্মেলনে কথা বলবেন অলি আহমেদ।

এই দুই সংবাদ সম্মেলনের মধ্যে কিছুটা যোগসূত্র রয়েছে বলে সংশ্লিষ্ট দুটি দলের সঙ্গে আলাপ করে নিশ্চিত হওয়া গেছে। কারণ গত মঙ্গলবার দেশের বিদ্যমান রাজনৈতিক পরিস্থিতিসহ বিভিন্ন বিষয়ে মান্নার সঙ্গে আলাপ-আলোচনা হয়েছে এলডিপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব শাহাদাত হোসেন সেলিমের। দলটির চেয়ারম্যান অলি আহমদ মান্নাকে ‘জাতীয় মুক্ত মঞ্চ’র সঙ্গে সম্পৃক্ত করতে আগ্রহী বলে জানা গেছে। যদিও মান্নার দল নাগরিক ঐক্য আলোচনা করে এখনো এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেয়নি। নাম প্রকাশ না করার শর্তে দলটির দুজন নেতা জানিয়েছেন, মূলত জামায়াতে ইসলামীকে নিয়ে সাম্প্রতিককালে অলি আহমদের অতিমাত্রায় প্রশংসাসূচক বক্তব্য তাঁদের পছন্দ হয়নি। দ্বিতীয়ত, মুক্ত মঞ্চের শরিক দল জাতীয় গণতান্ত্রিক পার্টির (জাগপা) প্রয়াত নেতা শফিউল আলম প্রধানের অতীত কর্মকাণ্ডও তাঁদের কাছে গ্রহণযোগ্য নয়। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে আলোচিত সাত খুনের সঙ্গে জড়িত ছিলেন প্রধান; যেটি মান্নার রাজনীতি সঙ্গে যায় না।

জানতে চাইলে ড. অলি আহমদ বলেন, ‘আমি সংবাদ সম্মেলন করব এটুকু জানি। মান্না করবেন এটিও শুনেছি। যোগসূত্র রয়েছে কি না, এটি তো পরে বোঝা যাবে।’ এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘রাজনীতি করলে একটি দলের সঙ্গে আরেকটি দলের দেখা বা বৈঠক হতেই পারে। মুক্ত মঞ্চে আসার জন্য আমরা সবাইকে আহ্বান জানিয়েছি। তবে আমরা এক হব কি না, সেটি সময় বলে দেবে।’

মাহমুদুর রহমান মান্না বলেন, ‘এখনই যোগসূত্র খোঁজাটা ঠিক হবে না। তবে অলি আহমদ সাহেবও বিদ্যমান পরিস্থিতি থেকে উত্তরণ চান। আমিও চাই। তা ছাড়া আমি মনে করি, দেশে এখন যা ঘটেছে তাতে সরকার আছে কি না, এটা সন্দেহ। তাই সবার কথা বলা উচিত।’

এক প্রশ্নের জবাবে জাতীয় ঐক্যফ্রন্টভুক্ত দলের শীর্ষ নেতা মান্না বলেন, ‘ঐক্যফ্রন্ট ছেড়ে তো আমরা যাচ্ছি না। একই সঙ্গে এটাও ঠিক যে ঐক্যফ্রন্ট আছে কি না, এটি বোঝা যাচ্ছে না। কিন্তু রাজনীতি তো করতে হবে।’

এলডিপি নেতা শাহাদাত হোসেন সেলিম কালের বলেন, ‘মান্না ভাই ও আমি উভয়ই রাজনীতি করি। ফলে আমাদের মধ্যে আলোচনা তো হতেই পারে। তবে ভবিষ্যতে রাজনৈতিক মেরুকরণ হবে কি না, সেটি সময় বলে দেবে।’

গত ২৭ জুন এক সংবাদ সম্মেলনের মধ্য দিয়ে ‘জাতীয় মুক্ত মঞ্চ’ নামের আলাদা একটি প্ল্যাটফর্মের ঘোষণা দেন ২০ দলীয় জোটের শীর্ষ পর্যায়ের নেতা অলি আহমদ। মেজর জেনারেল (অব.) সৈয়দ মুহম্মদ ইবরাহিমের নেতৃত্বাধীন কল্যাণ পার্টি এবং প্রয়াত শফিউল আলম প্রধানের নেতৃত্বাধীন জাগপাও ওই মঞ্চে যোগ দিয়েছে। তবে মুক্ত মঞ্চের ওই নেতারা একই সঙ্গে এও ঘোষণা দিয়েছেন যে তাঁরা বিএনপির নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোটেও আছেন।

নির্ভরযোগ্য সূত্রের দাবি, মান্নাও ঠিক একই কৌশলে জাতীয় ঐক্যফ্রন্টে থেকে বা ফ্রন্ট না ভেঙে পৃথকভাবে রাজনৈতিক কর্মসূচি পালন শুরু করছেন। কারণ হলো, জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট কার্যত এখন অনেকটাই অকার্যকর হয়ে পড়েছে। দীর্ঘদিন ফ্রন্টের কোনো বৈঠক হচ্ছে না। ‘একলা চলো নীতি’তে অবস্থান নিয়ে বিএনপি বর্তমানে এককভাবে কর্মসূচি পালন শুরু করেছে। যে কারণে ক্ষুব্ধ হয়ে ফ্রন্টের প্রধান নেতা ড. কামাল হোসেনের নেতৃত্বাধীন দল গণফোরামও সাম্প্রতিককালে এককভাবেই কর্মসূচি পালন শুরু করেছে। গত ২২ জুলাই এক সংবাদ সম্মেলনে ড. কামাল বলেছেন, ঐক্যফ্রন্ট গঠিত হয়েছিল নির্বাচনকে সামনে রেখে। এখন জনগণের ঐক্য দরকার। রাজনৈতিক কর্মসূচি না থাকায় বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকীর নেতৃত্বাধীন কৃষক শ্রমিক জনতা লীগ গত ৮ জুলাই ফ্রন্ট ছেড়ে চলে গেছে। ফ্রন্টের আরেক নেতা জেএসডির সভাপতি আ স ম রব চিকিৎসার জন্য এখন দেশের বাইরে আছেন। সব মিলিয়ে জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের অস্তিত্ব নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। দীর্ঘদিন বৈঠক ও তৎপরতা না থাকায় অকার্যকর হয়ে পড়েছে ২০ দলীয় জোটও।

এমন পরিস্থিতিতে ২০ দলীয় জোট ও ফ্রন্টভুক্ত দলগুলোর মধ্যে অস্বস্তি তৈরি হয়েছে। ফলে তারা নিজেরাই কর্মসূচি নিয়ে মাঠে নামার তাগিদ অনুভব করছে। মান্নার তৎপর হওয়ার কারণও এটি।

অলি আহমদ জাতীয় মুক্ত মঞ্চ গঠন করার আগে আন্দালিব রহমান পার্থর নেতৃত্বাধীন বিজেপিও গত ৬ মে ২০ দলীয় জোট ছেড়ে চলে যায়। ফলে অনেক বিশ্লেষক মনে করছেন, বিএনপি জোট রক্ষায় তৎপর না হলে ভবিষ্যতে এসব দল এক মঞ্চে গিয়ে দাঁড়াতে পারে।

গণস্বাস্থ্যের প্রতিষ্ঠাতা ও বিশিষ্ট মুক্তিযোদ্ধা ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী মতে, ‘বড় দল হিসেবে বিএনপি দুটি জোটের ব্যাপারেই কিছুটা নির্বিকার ভাব দেখাচ্ছে। এটি তাদের কৌশলগত কারণ হতে পারে। কিন্তু তারা যদি এভাবে সব ছেড়ে দেয় তাতে শেষ পর্যন্ত তাদের লাভ না লোকসান হবে বলা মুশকিল।’ তিনি বলেন, ‘আমি তো শুনছি ছোট ছোট ওই দলগুলোর মধ্যে কথাবার্তা শুরু হয়েছে; এমনকি তারা একত্রিতও হতে পারে।’

image_pdfimage_print




সংবাদটি ভাল লাগলে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published.

এই বিভাগের আরো সংবাদ










© All rights reserved © 2019 notunbarta24.com
Developed by notunbarta24.Com
themebazarnotunbar8765