শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১২:২১ অপরাহ্ন




চীন-পাকিস্তান নিয়ে পরস্পর বিরোধী অবস্থানে ভারতের দুই মন্ত্রণালয়

নতুন বার্তা ডেস্ক
  • প্রকাশ: রবিবার, ১ সেপ্টেম্বর, ২০১৯
অমিত শাহ (বামে) ও এস জয়শঙ্কর।

রাইসিনা হিলস-এর এপারে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, ওপারে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়।

সম্প্রতি এই দুই মন্ত্রণালয়ের মধ্যে ঘোষিত নীতির প্রশ্নে পারস্পরিক বিরোধ প্রকাশ্যে চলে এসেছে বলে জানাচ্ছে রাজনৈতিক সূত্র।
কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ এবং পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শঙ্করের ঘরানা এতটাই আলাদা যে, এই বিরোধ অবশ্যম্ভাবী ছিল বলেই মনে করছে রাজনৈতিক শিবিরের একাংশ। পাশাপাশি এটাও বলা হচ্ছে, এটি কোনও ব্যক্তি বিশেষের সংঘাত নয়। ঘরোয়া রাজনৈতিক বাধ্যবাধকতায় এমন অনেক কথা অনেক সময় বলতে হয়, যা আন্তর্জাতিক সম্পর্কের ক্ষেত্রে করা শুধু অসম্ভব নয়, বিপজ্জনকও।

সদ্য সমাপ্ত অধিবেশনে অখণ্ড কাশ্মীরের হুঙ্কার দিয়ে অমিত শাহ জানিয়েছেন, যতক্ষণ না পাক অধিকৃত কাশ্মীর এবং আকসাই চীন দখলে আসছে, ততক্ষণ তিনি থামবেন না। ঘটনা হল, আকসাই চীনের ভূখণ্ড চীন নিয়ন্ত্রণ করে এবং একে দীর্ঘদিন আগেই বিতর্কিত এলাকা বলে মেনে নিয়েছে ভারত।

কূটনৈতিক শিবিরের প্রশ্ন, অনভিজ্ঞ অমিত শাহকে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে কি বলে দেওয়া হয়নি যে, ১৯৬২ সাল থেকে বকেয়া সীমান্ত বিবাদ মেটানোর জন্য একগুচ্ছ দিক নির্ধারক নীতিতে ২০০৫ সালেই সই করেছিল ভারত এবং চীন? ফলে হঠাৎ করে এ সব কথা বলা মানে নিজেদেরই সমস্যা ডেকে আনা।

কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর এই মন্তব্য এবং কাশ্মীর থেকে বিশেষ মর্যাদা প্রত্যাহার করে লাদাখকে কেন্দ্র শাসিত অঞ্চলে পরিণত করার পর তীব্র প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে বেইজিং। জয়শঙ্করকে চীনে গিয়ে সে দেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ওয়াং ই-কে বোঝাতে হয়েছে যে, চীনের সার্বভৌমত্ব এবং সীমান্তে শান্তি সংক্রান্ত দ্বিপাক্ষিক চুক্তি ভঙ্গ করা ভারতের উদ্দেশ্য নয়। জয়শঙ্করের আশ্বাসে বেইজিং কতটা আশ্বস্ত হয়েছে, সে প্রশ্ন আলাদা। কিন্তু পররাষ্ট্র এবং স্বরাষ্ট্রের মধ্যে সমন্বয়হীনতাই প্রকট হয়ে উঠেছে বলে মনে করা হচ্ছে।

পাকিস্তানের বিরুদ্ধে লড়াই করে জীবন দেওয়ার কথা বলেছেন অমিত শাহ। রাজনৈতিক সূত্রের খবর, প্রয়োজনে পরমাণু অস্ত্র ব্যবহারের যে হুমকি দিয়েছেন প্রতিরক্ষামন্ত্রী রাজনাথ সিংহ, তা-ও অমিতের আগ্রাসী লাইন মেনে। জয়শঙ্করের নেতৃত্বাধীন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একটি বড় অংশ মনে করে, এই ধরনের মন্তব্য শুধু হঠকারী নয়, এর ফলে পরমাণু-বিশ্বে ভারতের অবস্থানও কিছুটা লঘু হয়ে যায়। পরমাণু সরবরাহকারী গোষ্ঠী বা এনএসজি-তে ঢোকার জন্য যে চেষ্টা দিল্লি চালাচ্ছে, তাকেও দুর্বল করে দিতে পারে এমন সরকারি মন্তব্য।

এই পরিস্থিতিতে পাকিস্তানের সঙ্গে উত্তেজনা কমানোর চেষ্টা করছে সাউথ ব্লক। সামনেই জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের বৈঠক। সেখানে কাশ্মীর প্রসঙ্গ তুলে ধরে ইমরান খানের সরকার কোনও বাড়তি সুবিধা পাক, তা চায় না পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। বরং পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র বারবার বলছেন, দ্বিপাক্ষিক পরিস্থিতি যে অত্যন্ত খারাপ, এটা দেখানো ইসলামাবাদের চাল।

ইউরোপীয় ইউনিয়নের কমিশনার ক্রিস্টোস স্টালিয়ান্ডার্স-এর সঙ্গে বৈঠকের পর পররাষ্ট্রমন্ত্রী জয়শঙ্কর টুইট করে জানিয়েছেন, সন্ত্রাস এবং হিংসামুক্ত পরিবেশে পাকিস্তানের সঙ্গে বসে সমস্ত বকেয়া বিষয় নিয়ে আলোচনায় তৈরি ভারত। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের বক্তব্য, আন্তর্জাতিক মানচিত্রে যখন কাশ্মীর নিয়ে উত্তাপ কমিয়ে রাখা কৌশল হওয়া উচিত, তখন অনর্থক হাওয়া গরম করে লাভ নেই। কিন্তু কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র এবং প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় সেটাই করছে।

image_pdfimage_print




সংবাদটি ভাল লাগলে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published.

এই বিভাগের আরো সংবাদ










© All rights reserved © 2019 notunbarta24.com
Developed by notunbarta24.Com
themebazarnotunbar8765