শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ০৮:০১ অপরাহ্ন




খননের টাকা আত্মসাৎ, নদীতে হাঁটুপানি!

নতুন বার্তা ডেস্ক
  • প্রকাশ: শনিবার, ২৪ আগস্ট, ২০১৯
খনন না করেই নেওয়া হয়েছে বিল। পাবনার ইছামতি নদীতে এখন হাঁটুপানি- নতুনবার্তা

পাবনায় ইছামতি নদী খননের নামে প্রায় পৌনে তিন কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগ উঠেছে। পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) সংশ্নিষ্ট কর্মকর্তা এবং ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের যোগসাজশে নদী খনন না করেই এই প্রকল্পের দুই কোটি ৬২ লাখ টাকার বিল তুলে বাটোয়ারা করে নিয়েছেন। ফলে স্থানীয়দের মধ্যে চরম ক্ষোভ ও উত্তেজনা বিরাজ করছে।

পাউবো সূত্র জানায়, পাউবো দেশের ৬৪ জেলায় ছোট নদী, জলাশয় ও খাল খননে (প্রথম পর্যায়) একটি প্রকল্প গ্রহণ করে। এরই অংশ হিসেবে পাবনা সদর উপজেলার ভাড়ারা ইউনিয়নের ওপর দিয়ে বহমান ইছামতি নদী খননের জন্য স্থানীয় পাউবো চার কোটি ১৬ লাখ টাকা ব্যয়ে একটি প্রকল্প নেয়। গত ১১ মার্চ কাগজে-কলমে কাজ শুরু দেখানো হলেও মাঠপর্যায়ে কোনো খনন হয়নি বলে এলাকাবাসী অভিযোগ করেন। নদী খনন না হলেও এরই মধ্যে চার কোটি ১৬ লাখ টাকার মধ্যে দুই কোটি ৬২ লাখ টাকার বিল সংশ্নিষ্ট ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান এশিয়ান ড্রেজার লিমিডেটকে পরিশোধ করা হয়েছে।

অন্য একটি সূত্র জানায়, ঢাকার ৫৬-৫৭, মতিঝিলের শরীফ ম্যানশনের তৃতীয় তলার ‘এশিয়ান ড্রেজার লিমিটেড’ নামের প্রতিষ্ঠানটি খনন কাজ পেলেও প্রতিষ্ঠানের কোনো কর্মকর্তা-কর্মচারী বা প্রকৌশলী প্রকল্প এলাকায় একদিনের জন্যও যাননি। ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানটির স্থানীয় প্রতিনিধি সদর উপজেলার দোগাছি ইউনিয়নের আলতাফ হোসেন এলাকায় গিয়ে খাল খনন করার নামে নদীর পাড় ছেঁটে দিয়েছেন।

ভাড়ারা চরপাড়া গ্রামের কৃষক হাবিবুর রহমান বলেন, আলতাফ নামের ওই ব্যক্তি ৫-৬ মাস আগে দড়িভাওডাঙ্গা নামক স্থানে কয়েকজন শ্রমিক নিয়ে এসে নদী খননের ছবি তুলেই আবার চলে গেছেন। এরপর একদিনও কোনো কাজ হয়নি।

সরেজমিন দেখা যায়, ভাড়ারা থেকে দড়িভাওডাঙ্গা হয়ে আশুতোষপুর পর্যন্ত ইছামতির খাল খননের কোনো চিহ্ন নেই। বর্তমানে বৃষ্টির পানিতে নদীতে হাঁটুপানি জমেছে। আবদুস সাত্তার নামের রানীনগর গ্রামের এক কৃষক বলেন, নদী কাটা তো দূরের কথা, শুধু আমাদের উঠতি ফসলগুলো ছেঁটে দিয়ে আলতাফ লাখ লাখ টাকার ক্ষতি করেছেন। ফসলের ক্ষতি বাবদ আমাদের একটি কানাকড়িও দেওয়া হয়নি। ঠিকাদার ইছামতি খননের নামে সব টাকা আত্মসাৎ করায় গ্রামবাসী ক্ষোভে ফেটে পড়েছে।

এ ব্যাপারে পাউবোর সহকারী পরিচালক (ভূমি ও রাজস্ব) মোশারফ হোসেনের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি কোনো তথ্য দিতে অপারগতা প্রকাশ করে বলেন, কিছু জানি না। এরপর নির্বাহী প্রকৌশলীর মোবাইল নম্বর দিয়ে ফোন কেটে দেন।

পাবনা পাউবোর নির্বাহী প্রকৌশলী একেএম জহুরুল হক সাংবাদিকদের নিয়ে খাল খনন এলাকা পরিদর্শন করেন। তার সামনেই খাল খননের নামে টাকা চুরির অভিযোগ তোলেন এলাকাবাসী। এ সময় নির্বাহী প্রকৌশলী গণরোষের মুখে পড়ে ফিরে আসেন।

পরে এক লিখিত বিবৃতিতে নির্বাহী প্রকৌশলী সাংবাদিকদের জানান, সিডিউল মোতাবেক খনন কাজের দৈর্ঘ্য ৮ কিলোমিটার এবং প্রস্থ ১৬ মিটার। মোট ৫২ দশমিক ৫০ ফুট খাল খনন করা হয়েছে। তিনি দাবি করেন, যথাযথভাবে কাজ সম্পন্ন হওয়ায় এরই মধ্যে চার কোটি ১৬ লাখ টাকার মধ্যে দুই কোটি ৬২ লাখ টাকার বিল সংশ্নিষ্ট ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান এশিয়ান ড্রেজারকে পরিশোধ করা হয়েছে। কাজের মান ভালো ছিল।

এ ব্যাপারে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের স্থানীয় প্রতিনিধি আলতাফ হোসেনের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, কাজ করা হয়েছে বলেই পাউবো বিল পরিশোধ করেছে। ফলে কাজ না করে বিল তোলার অভিযোগ সত্য নয় বলে তিনি দাবি করেন।

image_pdfimage_print




সংবাদটি ভাল লাগলে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published.

এই বিভাগের আরো সংবাদ










© All rights reserved © 2019 notunbarta24.com
Developed by notunbarta24.Com
themebazarnotunbar8765