সোমবার, ২৫ মার্চ ২০২৪, ০৯:৫৪ পূর্বাহ্ন




‘অবরুদ্ধ কাশ্মীরে ঈদ নয় এবার শোক’

আন্তর্জাতিক ডেস্ক
  • প্রকাশ: সোমবার, ১২ আগস্ট, ২০১৯

সোমবার থেকে টানা পাঁচদিন অবরুদ্ধ থাকার ভারত শাসিত কাশ্মীরের মানুষজন গতকাল (শনিবার) বিকেলে কিছুটা হাঁফ ছেড়ে বেঁচেছিলেন। মূলত ঈদের কেনাকাটা করার জন্য শনিবার কারফিউ কিছুটা শিথিল করা হয়েছিল। শ্রীনগরে শাটারও উঠেছিল কিছু কিছু দোকানপাটের। বেশ কিছু মানুষ রাস্তায় বেরিয়েছিলেন, শুধু ঈদের উপহারই নয় – নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্র কিনতেও।

কোরবানির পশু বেচতে শ্রীনগরের একটি রাস্তার মোড়ে দাঁড়িয়েছিলেন এক কাশ্মীরি যুবক। কণ্ঠে তীব্র ক্ষোভ আর হতাশা নিয়ে নিয়ে ঐ যুবক বলেন, “এটি কোনো ঈদ নয়, এটি এবার শোক। গত দুই দিন আমরা তেমন কিছু করিনি। ঈদের পর আমরা ৩৭০ ফিরিয়ে আনবো। এটা কাশ্মীর। এটা আমাদের ভূমি।” “যখনই মুসলমানদের কোনো উৎসব আসে, তখনই কোনো না কোনো গণ্ডগোল তৈরি হয়। ভারতকে বুঝতে হবে, এটা আমাদের জন্য একটি বড় দিন …এটি আত্মত্যাগের দিন, সুতরাং আত্মত্যাগ করবো। দুদিন পর দেখবেন, এখানে কী হয়।”
ঈদের আগে কাশ্মীরে যে পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে, তাতে গ্রামের বহু খামারি এবার শহরে গিয়ে কোরবানির পশু বিক্রি করতে পারছেন না। তারা বিরাট সঙ্কটে পড়েছেন। শ্রীনগরের রাস্তায় একজন খামারি বললেন, “এবার কোনো ব্যবসা নেই। আমার মনে হয়না এবার কোনো পশু বিক্রি করতে পারবো। সকাল থেকে না খেয়ে আছি।”
শনিবার কারফিউ শিথিল করার পর কিছু ফেরিওয়ালা ঠেলাগাড়িতে ফল, সবজি সাজিয়ে ফেরি করতে বেরিয়ে পড়েছিলেন। তাদের ছবি তোলার সময় একজন কাশ্মীরি যুবক পাশে এসে দাঁড়িয়ে বলেন, “বাইরের বিশ্বকে কী দেখাতে চান আপনারা – শ্রীনগর প্রায় স্বাভাবিক? কাশ্মীরিরা ফল-সবজি কিনছে?”
ঠিক সেসময় সেখানে একটি পাথরের টুকরো এস পড়ে। তারপর আরো পাথর এসে পড়তে থাকে। ফেরিওয়ালারা দ্রুত তাদের ঠেলাগাড়ি নিয়ে পালিয়ে যায়।
তবে সৈন্যদের ব্যাপক উপস্থিতির ভেতরে শনিবার কিছু কিছু জায়গায় বেশ মানুষ জড় হয়। অনেক গাড়ি বের হয়। শ্রীনগরে এখন কার্যত প্রতি একশ পায়ের মধ্যে ভারি অস্ত্র হাতে সৈন্য।
ঈদের কথা মাথায় শনিবার কারফিউ কিছু শিথিল করা হয়েছিল। কিন্তু গত দুদিনে আন্তর্জাতিক মিডিয়ায় বিক্ষোভের খবরাখবর, ফুটেজ, ছবি প্রচার হওয়ার ফলে ভারতীয় কর্তৃপক্ষ আবারো তাদের অবস্থান শক্ত করছে।
বিবিসি, রয়টার্স, আল জাজিরা-সহ বিভিন্ন আন্তর্জাতিক মিডিয়ায় শুক্রবার জুম্মার নামাজের পর শহরের সোউরা এলাকায় হাজার হাজার মানুষের বিক্ষোভের খবর ও ভিডিও সামনে আসতে শুরু করে।
সেই ভিডিওতে পরিষ্কার দেখা যায় জনতা ‘আজাদি’র পক্ষে স্লোগান দিচ্ছে, ‘৩৭০ ধারার বিলোপ মানি না’ লেখা ব্যানার তুলে ধরছে। পুলিশের ফায়ারিং ও কাঁদানে গ্যাসের শেল চার্জ করারও প্রমাণ ছিল ওই ভিডিওতে। এর পরই প্রশাসন সিদ্ধান্ত নেয় কারফিউ-র কড়াকড়ি আবার নতুন করে বহাল করা হবে।
শনিবার বেশি রাতে আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমের খবরগুলোকে ‘ভিত্তিহীন ও উদ্দেশ্যপ্রণোদিত’ বলে বর্ণনা করে জম্মু ও কাশ্মীরের মুখ্য সচিব ও পুলিশ মহাপরিচালকের তরফে যৌথ বিবৃতি দেওয়া হয়, “গত ছদিনে (অর্থাৎ পার্লামেন্টে ৩৭০ ধারা বিলোপের ঘোষণার পর থেকে) কাশ্মীরে পুলিশ কিন্তু একটাও বুলেট ছোঁড়েনি।”

আরো পড়ুর> জম্মু-কাশ্মীরের বিশেষ মর্যাদা বাতিলের বিরুদ্ধে সুপ্রিম কোর্টে পিটিশন

রোববার মধ্যরাতের পর থেকেই নতুন করে আবার কারফিউ আরোপ শুরু হয়।প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন, পুলিশের গাড়ি শ্রীনগরের রাস্তায় রাস্তায় রবিবার সকাল থেকেই মাইকিং করে বেড়াচ্ছে – কোনও ধরনের জমায়েত যে নিষিদ্ধ সে কথা মানুষকে মনে করিয়ে দেওয়া হচ্ছে, দোকানপাটের শাটার ফেলার জন্য নির্দেশ দেওয়া হচ্ছে। ফলে আগামীকাল (সোমবার) ঈদের আগে কাশ্মীরের পরিস্থিতি আবার ভীষণ রকম থমথমে হয়ে উঠেছে।
শুক্রবার সৌউরার ঘটনার পর পুলিশ-প্রশাসন বড় কোনও ঈদগার জমায়েতের অনুমতি দেবে, সেই সম্ভাবনা প্রায় নেই। সাধারণ মানুষকে হয়তো বলা হবে, নিজের এলাকার ছোটখাটো স্থানীয় মসজিদেই যার যার ঈদের নামাজ আদায় করে নিতে।
ভাষণ শুনে অনেকেই ধারণা করেছিলেন, ঈদে শুধু কারফিউ শিথিল করাই নয় – গত এক সপ্তাহ ধরে বন্ধ মোবাইল, ল্যান্ডলাইন বা ইন্টারনেট পরিষেবাও হয়তো আবার চালু করা হবে। কিন্তু পরিস্থিতি যেদিকে গড়াচ্ছে, কাশ্মীরের সাধারণ মানুষ এখন সেটুকুও আর আশা করছেন না।
শ্রীনগরে এখন চালু আছে শুধু জে অ্যান্ড কে (জম্মু ও কাশ্মীর) ব্যাঙ্কের এটিএম-গুলো। অন্য কোনও সরকারি বা বেসরকারি ব্যাঙ্কের এটিএম কাজ করছে না, বা করলেও তাতে টাকা নেই।
কাজেই জে অ্যান্ড কে ব্যাঙ্কের হাতে গোনা এটিএমের সামনেই মানুষের লম্বা লাইন পড়েছিল শনিবার।

ঝড়ের আগে শান্ত কাশ্মীর?

সোমবার থেকে পাঁচদিন পর শনিবার বিকালে কারফিউ শিথিল করার পর শ্রীনগরের বিখ্যাত ডাল লেকের পাশে বসে উদ্ভূত পরিস্থিতি নিয়ে কথা বলছিলেন কয়েকজন যুবক। ঐ যুবকদের একজন বলেন, “দুজন মানুষ (নরেন্দ্র মোদী এবং অমিত শাহ) কাশ্মীরকে একটি কারাগার বানানোর সিদ্ধান্ত নিল। কেউই কাশ্মীরিদের সাথে কথা বললো না। এখনও বলছে না…এমনকি নির্বাচিত নেতাদেরও আটকে রাখা হয়েছে।”
“মোদী বলছেন তিনি আমাদের উৎসবকে মর্যাদা দেন। কিন্তু তিনি তো মানুষদের ঘরের ভেতর আটকে রেখে তাদের সম্মান করছেন। আমাদের ঘরের ভেতর বসে ঈদ উদযাপন করতে বলা হচ্ছে। বন্ধু-স্বজনদের সাথে দেখা না করতে পারলে সেটা কেমন ঈদ।”
রাগে হতাশায় আরেকজন যুবক বলে উঠলেন, “কাশ্মীরিদের বাড়িতে তালা লাগিয়ে দেওয়া হয়েছে। তাদের আরে কোনো রাস্তা নেই। ছোটো থেকেই এটা দেখছি। কারফিউ, বনধ, সেনা অভিযান, কোনো শান্তি নেই।”
“সরকার বন্দুকের নল ধরে সবকিছু করতে পারে। আমাদের জমি নিয়ে নিতে পারে। যা কিছু হচ্ছে সব বন্দুকের জোরে…আমাদের জমি তারা কিনতে পারবে না, ছিনিয়ে নিতে হবে।”
পরিস্থিতি কি তাহলে শান্ত হয়ে যাচ্ছে? তিনি বললেন, “এই শান্তি ঝড়ের আগে তৈরি হওয়া থমথমে পরিস্থিতির মতো। কাশ্মীরে ঝড় আসছে। কী হবে কেউ জানেনা।”
“আমরা দীর্ঘ অবরোধের জন্য প্রস্তুত। এটা আমাদের জীবনের অংশ। কিন্তু আমরা কাউকে এই কাশ্মীর নিতে দেবনা। এটা আমাদের কাছে বেহেশত এবং এর জন্য আমরা সবকিছু করতে প্রস্তুত।”

সুত্র- বিবিসি

image_pdfimage_print




সংবাদটি ভাল লাগলে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published.

এই বিভাগের আরো সংবাদ










© All rights reserved © 2019 notunbarta24.com
Developed by notunbarta24.Com
themebazarnotunbar8765