মঙ্গলবার, ২৩ এপ্রিল ২০২৪, ১২:৫৬ অপরাহ্ন




রোহিঙ্গা গণহত্যা ধামাচাপা দিতে চায় আসিয়ান!

নতুনবার্তা ডেস্ক
  • প্রকাশ: শনিবার, ৩ আগস্ট, ২০১৯

রোহিঙ্গা শরণার্থী ও মিয়ানমারের মধ্যে আলোচনায় উৎসাহিত করার কথা বলেছে দক্ষিণপূর্ব এশীয় দেশগুলোর সংস্থা আসিয়ান। এতে ক্ষোভে ফেটে পড়েন রোহিঙ্গা মানবাধিকার কর্মীরা।

তাদের অভিযোগ, মিয়ানমারের অপরাধ ঢাকার চেষ্টা করছে সংস্থাটি। মূলত মিয়ানমারের সেনা বাহিনীর অপরাধ ও প্রত্যাবাসন পরিকল্পনার বড় ভুলগুলো ঢাকতেই এমনটি করছেন তারা। খবর আল-জাজিরার

১০ সদস্যের এই বাণিজ্য সংস্থার মানবাধিকার শাখার একটি দলের সঙ্গে মিয়ানমার সরকারের একটি প্রতিনিধি দল গত সপ্তাহে শরণার্থী শিবির পরিদর্শন করে। রোহিঙ্গা নেতা ও মানবাধিকার কর্মীদের সঙ্গে প্রত্যাবাসন আলোচনা শরু করতেই এ উদ্যোগ নেয়া হয়েছিল।

মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে গণহত্যা ও নিপীড়ন থেকে পালিয়ে বাঁচতে ২০১৭ সালের আগস্টে সীমান্ত পাড়ি দিয়ে সাত লাখ ৩০ হাজারের বেশি রোহিঙ্গা বাংলাদেশের কক্সবাজারে আশ্রয় নিয়েছেন।

সহযোগিতা সংস্থাগুলোর সঙ্গে রোহিঙ্গাদের সম্পর্কও ঝুঁকিতে পড়েছে। ইতিমধ্যে তাদের মধ্যে অনাস্থাও তৈরি হয়েছে।

মিয়ানমারের সঙ্গে গোপনে প্রত্যাবাসন চুক্তি সই ও রোহিঙ্গাদের পরিচয়পত্র পরিকল্পনা এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার কারণে জাতিসংঘের শরণার্থী সংস্থা ইউএনএইচসিআরের প্রতি রোহিঙ্গা অধিকার কর্মীদের অবিশ্বাস দেখা দিয়েছে। রোহিঙ্গারা এসব প্রকল্পের বিরোধিতা করেছেন।

নিরাপত্তা বাহিনী তাদের সই নেয়ার চেষ্টা করলে সহিংসতা ও ভয়ভীতি প্রদর্শনের অভিযোগ করছেন রোহিঙ্গা নেতারা।

কয়েক লাখ রোহিঙ্গাকে আশ্রয় দিয়ে প্রশংসিত হয়েছে বাংলাদেশের কর্তৃপক্ষ। তবে এখানে রোহিঙ্গাদের ওপর বেশ কিছু বিধিনিষেধ আরোপ করে দেয়া হয়েছে।

তারা মুক্তভাবে চলাফেরা যেমন করতে পারেন না, তেমনি শিক্ষার সুযোগ থেকেও বঞ্চিত হচ্ছেন। এছাড়া তারা কোনো উপার্জনেও যেতে পারছেন না। রোহিঙ্গাদের আনুষ্ঠানিকভাবে শরণার্থীর মর্যাদাও প্রত্যাখ্যান করা হয়েছে।

আসিয়ান ও মিয়ানমারের প্রতিনিধি দলের পরিদর্শনের সময় তাদেরকে এক রোহিঙ্গা কর্মী জিজ্ঞাসা করেন, রাখাইনে রোগবালাইন উপদ্রুত বন্দিশিবিরে আটকাপড়া এক লাখ ২৮ হাজার রোহিঙ্গার সহায়তায় তারা কী করছেন?

জবাবে এক প্রতিনিধি বলেন, আপনাদের সব সমস্যার সমাধান করতে আমরা এখানে আসিনি।

তার এই জবাবের মধ্যে উদাসীনতা ও অনীহা দেখতে পেয়েছেন কেউ কেউ এবং নিশ্চিত হয়েছেন যে রোহিঙ্গাদের অধিকার সুরক্ষা নিয়ে আসিয়ান সদস্যদের কোনো মাথা ব্যথা নেই।

মোহাম্মদ নওকিম নামের এক রোহিঙ্গা কর্মী বলেন, আমি জানি আসিয়ান কিছুই করতে পারবে না। কিন্তু রোহিঙ্গাদের অধিকারের জন্য তো তারা কথা বলতে পারেন।

রো সাওয়াদেল্লাহ নামের আরেকজন বলেন, তারাই ঠিক। তারা এখানে আমাদের সমস্যার সমাধানে আসেননি। তারা এখানে এসেছেন সময় অপচয় করতে।

আরনেল কাপিলি নামের এক আসিয়ান প্রতিনিধি বলেন, জবাবটি অপ্রাসঙ্গিকভাবে উপস্থাপন করা হয়েছে।

তিনি বলেন, ওই প্রতিনিধি বোঝাতে চেয়েছেন যে একবার গিয়েই সব সমস্যার সুরাহা করা যাবে না এবং সেখানে সংলাপের দরকার আছে।

কিন্তু ফ্রি রোহিঙ্গা কোয়ালিশনের গবেষণা সমন্বয়ক ইয়াসমিন উল্লাহ বলেন, গণহত্যার অপরাধের জন্য আসিয়ান সদস্য হিসেবে মিয়ানমারকে শাস্তির বাইরে দেখতে চায় এই সংস্থা। সদস্য দেশগুলোর মধ্যকার অর্থনৈতিক সম্পর্ককেই অগ্রাধিকার দেয়া হচ্ছে এতে।

এই নারী গবেষক বলেন, একটি গণহত্যাকারী কর্তৃত্বপরায়ন সরকার হিসেবে মিয়ানমারের ভাবমর্যাদা এই সম্পর্ককে ক্ষতিগ্রস্ত করেছে। আর এ ব্যাপারে আসিয়ান খুবই সচেতন যে তাদের ওপরও দায় পড়ছে।

গত মাসে যখন এএইচএ সেন্টারের অংশ হিসেবে জরুরি প্রতিক্রিয়া এবং মূল্যায়ন দল একটি প্রতিবেদনে রোহিঙ্গাদের মসৃণ ও সুশৃঙ্খল প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়ার ভবিষ্যদ্বাণী করেন, তখনই সমালোচনার মুখোমুখি হতে হয় আসিয়ানকে।

প্রতিবেদনের লেখকরা কোনো রোহিঙ্গা শরণার্থীর সঙ্গে কথা বলেননি এবং গণধর্ষণ, অগ্নিসংযোগ ও বাড়িঘর থেকে চলে আসতে যে বাধ্য করা হয়েছে, সেই কথাও উল্লেখ করেননি।

এমনকি রোহিঙ্গারা বর্তমানে রাখাইনে যে পরিস্থিতির মুখোমুখি হচ্ছেন, সেই কথাও নেই তাদের ওই প্রতিবেদনে।

মালয়েশিয়ার রাজনীতিবিদ ও আসিয়ান পার্লামেন্টারিয়ানস ফর হিউম্যান রাইটস অ্যাডভোকেসি গ্রুপের চেয়ারম্যান চার্লস সান্তিয়াগো বলেন, কোনো ধরনের প্রশ্ন ছাড়াই মিয়ানমার সরকারের বিবরণ গ্রহণ করা হয়েছে ওই প্রতিবেদনটিতে।

তিনি বলেন, সেখানে রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে মানবাধিকার লঙ্ঘন ও নৃশংসতাকে এড়িয়ে যাওয়া হয়েছে। যখন তারা কোনো একজন শরণার্থীর সঙ্গেও কথা বলতে পারেননি, তখন কীভাবে তারা প্রত্যাবাসন পরিস্থিতি মূল্যায়ন করবেন?

বিভিন্ন সদস্য দেশের নেতাদের প্রকাশ্য বিবৃতি বিশ্লেষণ করে এ কথা বলা যায় যে রোহিঙ্গাদের নিয়ে আসিয়ানের দৃষ্টিভঙ্গিও বিভ্রান্তিমূলক ও অসঙ্গত।

চলতি সপ্তাহে থাইল্যান্ডের ব্যাংককে আসিয়ান পররাষ্ট্রমন্ত্রীদের সম্মেলন সামনে রেখে মালয়েশিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে নিপীড়নে দায়ীদের বিচার আওতায় আনা মিয়ানমারের জন্য অপরিহার্য।

আরেকটি মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ দেশ ইন্দোনেশিয়া প্রতিবেশী মালয়েশিয়ার তুলনায় আরও স্পষ্টভাষী ও প্রতিবাদী।

গত বছর রোগিঙ্গাদের বিরুদ্ধে সহিংসতাকে গণহত্যা আখ্যায়িত করেন ফিলিপিন্সের প্রেসিডেন্ট রদ্রিগো দুতার্তে। সদস্য দেশগুলোতে তাদের আশ্রয় দেয়ার প্রস্তাব দেন।

সপ্তাহখানেক পরে মিয়ানমারের নেতা অং সান সুচির কাছে দুঃখপ্রকাশসুলভভাবে বলেন, তার ওই মন্তব্য ছিল বিদ্রুপাত্মক।

image_pdfimage_print




সংবাদটি ভাল লাগলে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published.

এই বিভাগের আরো সংবাদ










© All rights reserved © 2019 notunbarta24.com
Developed by notunbarta24.Com
themebazarnotunbar8765