শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ১১:২১ পূর্বাহ্ন




দক্ষিন আফ্রিকায় নিহত শরীয়তপুরে ২ ব্যবসায়ী বাড়িতে চলছে শোকের মাতম

শরীয়তপুর প্রতিনিধি
  • প্রকাশ: সোমবার, ২৬ আগস্ট, ২০১৯

দক্ষিন আফ্রিকায় সন্ত্রাসীদের গুলীতে শরীয়তপুরের দুজন সহ বাংলাদেশী তিনজন নিহত হয়েছেন। এরমধ্যে শরীয়তপুরে ২ ব্যবসায়ী রয়েছেন।এদের বাড়িতে চলছে শোকের মাতম । নিহত পরিবার স্বজনের লাশ দেশে ফিরে পেতে সরকারের সহায়তা চান। জেলা প্রশাসক বলছেন সহায়তা করার চেষ্টা করবেন।

সরেজমিন ও স্থানীয় সূত্র জানায়, দক্ষিন আফ্রিকায় সন্ত্রাসীদের গুলীতে রোববার দক্ষিন আফ্রিকার সময় রাত অনুমান সাড়ে ৭টা ও বাংলাদেশী সময় রাত সাড়ে ১১টায় শরীয়তপুরের দু’জন সহ বাংলাদেশী তিনজন নিহত হয়েছেন। এদের বাড়িতে চলছে শোকের মাতম । নিহতরা হলেন ভেদরগঞ্জ উপজেলার কাইছকড়ি গ্রামের মৃত শহর আলী মাঝির ছেলে নববিবাহিতা উজ্জল মাঝি (৩২)। উজ্জল মাঝি দীর্ঘ ১১ বছর যাবত দক্ষিন আফ্রিকায় থাকেন। সেখানে ক্যাপটাউন শহরে একটি মুদি দোকান দিয়ে ব্যবসা করতেন। উজ্জল ৫ ভাই ও ১ বোনের মধ্যে ছিলেন সর্বকনিষ্ট। ১১ বছরের মধ্যে বৈধ কাগজ না থাকায় সে বাড়ি আসতে পারেনি। মাত্র দেড়মাস পূর্বে টেলিফেনের মাধ্যমে সুরভী নামে ডামুড্যা উপজেলার সিড্যা গ্রামের ফারজানা আকতার সুরভীর সঙ্গে তার বিয়ে হয়েছে। দেশে ফিরে বৌ কে তুলে আনার কথা ছিল শীঘ্রই। ঘটনার সময় সে দোকানে কাজ করা অবস্থায় স্ত্রীর সঙ্গে ফোনে কথা বলছিলেন। এমন সময় সন্তাসীরা এসে তাকে পর পর দুটি গুলী করে হত্যা করে। সেখানে থাকা আতœীয় স্বজনের মাধ্যমে এ সংবাদ শোনার পর তার বৃদ্ধ মা মরিয়ম বিবি কাদতে কাদতে জ্ঞান হারিয়ে ফেলেন। শুধু ছেলের জন্য আহাজারি করছেন। এরপর সন্ত্রাসীরা তারই দোকানের কর্মচারী নড়িয়া উপজেলার কাপাশপাড়া গ্রামের ইব্রাহিম মোল্যার ছেলে দু’সন্তানের জনক আলম মোল্যা (৩৪)কে তার বাসায় গিয়ে মাথায় অস্ত্র ঠেকিয়ে গুলী করে হত্যা করে। এ সময় আলম মোল্যা বাসায় রান্না করছিলেন। আলম মোল্যা দেড় বছর যাবত বোনের জমি বিক্রি করে দক্ষিন আফ্রিকায় গেছেন। সে তার পরিবারের একমাত্র উপার্জনকারী ছিলেন। তার মা নেই । বৃদ্ধ বাবা প্যারালাইলড হয়ে ঘরে পড়ে আছেন। নিহত আলম মোল্যার মেয়ে আফসা(৪) ও ছেলে হানিফ (২ বছর ৬মাস) সহ স্ত্রী রুমা রয়েছেন। নিহত হওয়ার সংবাদ পেয়ে দ’ুজনের বাড়িতে চলছে শোকের মাতম। আলমের স্ত্রী রুমা ও বোন নাছিমা স্বজনের শোকে কান্নায় ভেঙ্গে পড়ছে। তাদের আহাজারিতে যেন বাতাস ভারী হয়ে উঠছে।বাবা ইব্রাহিম কথা বলতে পারছেন না। শুধু ফ্যাল ফ্যাল করে বুক চাপড়িয়ে কাঁদছেন। পাড়া প্রতিবেশী ও আতœীয় স্বজনেরা খবর পেয়ে নিহতদের বাড়ি এসে ভিড় করছেন। নিহতদের লাশ ক্যাপটাউন শহরের একটি হাসপাতালের হিমাগারে রয়েছে।আইনী প্রক্রিয়া শেষ করে তাদের উভয়ের লাশ দেশে ফিরিয়ে আনা হবে বলে ও খানে অবস্থানরত বাংলাদেশীরা নিহতদের পরিবারকে জানিয়েছেন।

এ ব্যাপারে নিহত উজ্জল মাঝির ভাবী পারভিন আকতার বলেন, আমার দেবর উজ্জল ১১ বছর যাবত দক্ষিন আফ্রিকা থাকেন। সেখানে মুদি দোকানে ব্যবসা করেন। বৈধ কাগজ না থাকায় বাড়ি ফিরতে পারছেন না। কাগজ করার জন্য জমা দিয়েছেন। কাগজ হাতে পেলেই বাড়ি আসবেন বলে দেড় মাস পূর্বে ফোনের মাধ্যমে তার বিয়ের কাবিন হয়েছে। তাকে সন্ত্রাসীরা চাঁদার জন্য গুলী করে হত্যা করেছে। আমরা সরকারের মাধ্যমে তার লাশটি ফিরে পেতে চাই।

নিহত আলম মোল্যার বোন নাছিমা বলেন আমার একমাত্র ভাই আলম মোল্যা দেড় বছর পূর্বে আমার জমি বিক্রি করে বিদেশে গেছে। সে বলছেন বেচে থাকলে বোনের জমির টাকা পরিশোধ করবে। াামার ভাইকে সন্ত্রাসীরা বাসায় গিয়ে গুলী করে হত্যা করেছে। এখন আমাদের উপায়কি ? । এ সংসারের একমাত্র উপার্জন কারী ছিল সে। এখন কিভাবে এরা বেচে থাকবে। কে দিবে তাদের টাকা পয়সা । কে করবেন তাদের দেখা শোনা। সরকারের কাছে আমাদের দাবী আমার ভাইয়ের লাশটা যেন দেশের মাটিতে দাফন করতে পারি।

জেলা প্রশাসক কাজী আবু তাহের বলেন, আমরা যোগাযোগ করে নিহতদের লাশ দেশে ফিরে আনার চেষ্টা করবো। তবে ঐখানে অবস্থানরত নিহতদের আতœীয় স্বজনরা যেন বাংলাদেশী দূতাবাসের সঙ্গে যোগাযোগ করে যাতে লাশ দেশে ফিরে আনা যায়।

image_pdfimage_print




সংবাদটি ভাল লাগলে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published.

এই বিভাগের আরো সংবাদ










© All rights reserved © 2019 notunbarta24.com
Developed by notunbarta24.Com
themebazarnotunbar8765