মঙ্গলবার, ২৩ এপ্রিল ২০২৪, ০৬:৪৩ পূর্বাহ্ন




ডেঙ্গুর সুযোগে বেড়েছে কয়েল ও মশারির দাম

স্টাফ রিপোর্টার
  • প্রকাশ: শুক্রবার, ২ আগস্ট, ২০১৯

ডেঙ্গু সতর্কতার কারণে মশা মারার কয়েল, ইলেক্ট্রিক ব্যাট, স্প্রে, ক্রিম, লোশন ও মশারির চাহিদা বহুগুণ বেড়েছে। বেচাকেনা রমরমা। সুযোগ বুঝে এসব সামগ্রীর দামও বাড়িয়ে দিয়েছেন ব্যবসায়ীরা। রাজধানীসহ বহু এলাকায় এসব উপকরণের সরবরাহ ঘাটতি দেখা দিয়েছে। দোকানে লোশন ও কোনো কোনো ব্র্যান্ডের স্প্রে পাওয়া যাচ্ছে না। দোকানিরা জানিয়েছেন, চাহিদা বেড়ে যাওয়ায় স্প্রে, লোশন ও রিফিল আনলে দু-এক দিনে বিক্রি হয়ে যাচ্ছে। আগে মাসের পর মাস দোকানে এসব পণ্য পড়ে থাকত।

এডিস মশার আক্রমণে প্রতিদিনই হাসপাতালগুলোতে বাড়ছে ডেঙ্গু রোগী। এ অবস্থায় এডিস মশার কামড় থেকে বাঁচতে নানা উপকরণ কিনতে দোকানগুলোতে ছুটছেন সব শ্রেণির মানুষ। দোকানিরা জানান, এখন আর কেউ মশারি বা কয়েল ছাড়া থাকতে চাইছেন না। বাসা বা অফিসে মশা থাক বা না থাক, সবাই আতঙ্কগ্রস্ত। শিশুসন্তান নিয়ে পরিবারগুলো বেশি সতর্ক। এ জন্য মশা মারার উপকরণের ব্যবসায়ীদের এখন পোয়াবারো। অনৈতিক মুনাফা তুলতে অনেকেই ইচ্ছামতো বাড়তি দাম নিচ্ছেন বলে ক্রেতারা অভিযোগ করেছেন।

শুধু দোকান নয়, সুপারশপ ও ফার্মেসিতেও স্প্রে ও লোশনের চাহিদা এখন বহুগুণ। রাজধানীর ফার্মগেটের আগোরা সুপার শপের বিক্রয়কর্মী থমাস সরকার বলেন, মশা তাড়াতে শরীরে দেওয়ার লোশন দু’দিনেই ১৫০ পিস বিক্রি হয়েছে। গুডনাইট রিফিল একজন ক্রেতা ২০ পিস নিয়ে গেছেন। গত এক সপ্তাহ ধরে এসব উপকরণের বিক্রি ব্যাপক পরিমাণে বেড়েছে। গতকাল বৃহস্পতিবার এই শপে এসিআই অ্যারোসল ও এক্সপেল স্প্রে পাওয়া যায়নি। স্পে না পেয়ে অনেক ক্রেতাকে মশার কয়েল কিনে নিতে দেখা গেছে। অনেকে আবার ম্যাজিক লাইট হ্যান্ডওয়াশ নিয়ে গেছেন।

মশা থেকে রক্ষা পেতে ওডোমাস ও রোলআন ক্রিমের চাহিদাও বেশ বেড়েছে। বাজারে ওডোমাস অয়েন্টমেন্ট ১০০ গ্রাম ক্রিম অন্য সময়ে ২০০ টাকার কম দামে বিক্রি হয়। এখন তার দাম বেড়ে ৩০০ টাকা। গতকাল মিরপুর-১ লাজ ফার্মায় এই ক্রিম খুঁজে পাননি ক্রেতা জসিম উদ্দিন। তিনি জানান, আশপাশের সব ফার্মেসি খুঁজে শেষ পর্যন্ত এখানে এসেছেন। এর পরে এখানেও পেলাম না।

রাজধানীতে মশা নিয়ন্ত্রণে সিটি করপোরেশনের ব্যর্থতায় ক্ষুব্ধ নগরবাসী নিজেদের নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বিগ্ন রয়েছে। এ কারণে মশা থেকে আত্মরক্ষায় নিজেরাই নানা সামগ্রীর ব্যবহার বাড়িয়েছেন। রাজধানীর মিরপুর, নিউমার্কেট, ফার্মগেট ও গুলিস্তান এলাকার বিভিন্ন বাজার ঘুরে দেখা গেছে, বাড়তি চাহিদায় স্প্রে, লোশন, কয়েল ও মশারির দাম বেড়েছে। যদিও কোম্পানিগুলো এসব পণ্যের দাম বাড়ায়নি। কিন্তু খুচরা পর্যায়ে বাড়তি দামে বিক্রি হচ্ছে। বর্তমানে এসিআই অ্যারোসল, স্কয়ারের এক্সপেল বেশি বিক্রি হচ্ছে। খুচরায় সব ব্র্যান্ডের মশা মারার স্প্রে ক্যানপ্রতি ৩০ থেকে ৫০ টাকা দাম বেড়েছে। হিট ব্র্যান্ডের ৪৭৫ মিলি লিটারের স্প্রে ২৭০ টাকায় বিক্রি হলেও এখন ৩০০ থেকে ৩৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এই ব্র্যান্ডের ৮০০ মিলির স্প্রে ক্যান ৪২০ টাকা ছিল। তা বেড়ে ৪৫০ থেকে ৪৭০ টাকা হয়েছে। অন্যান্য ব্র্যান্ডের মধ্যে আগে ছোট স্প্রে ক্যান ৮০ টাকায় বিক্রি হলেও তা এখন ১০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। মিরপুর-১ নং মার্কেটের বিক্রেতা নাসির হোসেন ও কারওয়ান বাজার কিচেন মার্কেটে ভিআইপি স্টোরের মালিক মো. কবির হোসেন জানান, গত দু’সপ্তাহের ব্যবধানে মশার স্প্রে বিক্রি বহুগুণ বেড়েছে। এখন সব কোম্পানি চাহিদা মতো সরবরাহ করছে না। তারা জানান, অ্যারোসল ও এক্সপেল ক্যান আগের দামে বিক্রি হচ্ছে।

রাজধানীর বাজারে এসিআই, গুডনাইট, নিম ও তুলসীসহ প্রায় অর্ধশতাধিক ব্র্যান্ডের কয়েল বিক্রি হচ্ছে। চাহিদা বেড়ে যাওয়ায় সপ্তাহের ব্যবধানে ৫ টাকার কয়েল বিক্রি হচ্ছে ৮ টাকা। বুস্টার কয়েলের দাম ১০ থেকে বেড়ে ১৫ টাকা হয়েছে। খুচরা বিক্রেতারা জানান, পাইকারিতে বেশি দামের কারণে তারা বাড়তি দাম নিচ্ছেন। পাইকারি ব্যবসায়ীরা জানান, বিভিন্ন কোম্পানির কয়েল প্রতি প্যাকেট (১২ পিস) ৬০ থেকে ১০০ টাকা এবং স্প্রে ক্যান পরিমাণ অনুযায়ী ২৫০ থেকে ৪০০ টাকায় বিক্রি করছেন।

স্কয়ার টয়লেট্রিজের বিপণন বিভাগের প্রধান ড. জেসমিন জামান বলেন, সম্প্রতি মশা মারার উপকরণের চাহিদা বেশ বেড়েছে। সে তুলনায় সরবরাহ কম রয়েছে। তবে এ অবস্থায় কোনো উপকরণের দাম বাড়ানো হয়নি। উল্টো ছাড় দেওয়ার পরিকল্পনা আছে। তিনি বলেন, স্কয়ার ডেঙ্গু আক্রান্তদের সহযোগিতা করতে ০৮০০০৮৮৮০০০ এই নাম্বারে কেয়ার লাইন চালু করেছে। এর মাধ্যমে ডাক্তারের প্রাথমিক পরামর্শ, ব্লাড ব্যাংক, অ্যাম্বুলেন্স ও হাসপাতালে যোগাযোগের সেবা পাওয়া যাবে।

বাজারে মশা মারার বৈদ্যুতিক ব্যাটের দাম দ্বিগুণের বেশি বেড়েছে। দুই সপ্তাহ আগে এই ব্যাট ২০০ থেকে ২৫০ টাকায় বিক্রি হয়। এখন তা ৪৫০ থেকে ৬০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। নিউমার্কেটের ব্যবসায়ী জহির উদ্দিন বলেন, সম্প্রতি মশার প্রকোপ বেড়ে যাওয়ায় ব্যাটের চাহিদা বেড়েছে। কিন্তু এই ব্যাট দেশে উৎপাদন হয় না। তাই বাজারে থাকা ব্যাটের দাম বেড়ে গেছে।

মশারির চাহিদাও অনেক বেড়েছে। বাজারে ম্যাজিক, টানা, গোল, রক্সি ও বেবি এসব নামে মশারি বিক্রি হচ্ছে। তবে এখন বেশি বিক্রি হয় ম্যাজিক মশারি। আকারভেদে সিঙ্গেল মশারি বিক্রি হচ্ছে ২৫০ থেকে ৫০০ টাকায়। যা আগে ১৫০ থেকে ২০০ টাকা ছিল। আর ডাবল মশারি আগে ৩০০ থেকে ৬০০ টাকায় পাওয়া যেত। এখন তা বিক্রি হচ্ছে ৫০০ থেকে এক হাজার টাকায়। ভালো মশারি দেড় হাজার টাকায় বিক্রি হচ্ছে। পাইকারিতে প্রতিটি মশারির দাম আকারভেদে ২০ থেকে ৫০ টাকা বেড়েছে। এর ফলে খুচরায় দাম বাড়ছে বলে জানান ফার্মগেটের রাজীব বেডিংয়ের বিক্রেতা মো. খোরশেদ আলম। তিনি বলেন, আগে দিনে দু-একটি মশারি বিক্রি হতো। এখন দিনে ২৫ থেকে ৩০টি মশারি বিক্রি হচ্ছে। কারওয়ান বাজারের সবজি মার্কেটের ফুটপাতেও অন্য পণ্য বিক্রি বন্ধ করে মশারি বিক্রি হচ্ছে। এই বাজারের খুচরা বিক্রেতা মো. হারুন অর রশিদ বলেন, গত দু’দিন ধরে প্রতিদিন প্রায় অর্ধশত মশারি বিক্রি করছেন। আগে দু-চারটি বিক্রি হতো।

রাজধানীর ফুলবাড়িয়া সিটি সুপার মার্কেটের নিচতলার পাইকারি মশারির মার্কেট ঘুরে দেখা যায়, লট ধরে মশারি কিনছেন খুচরা ব্যবসায়ীরা। এসব সরবরাহ করতে ব্যস্ত দোকান মালিক ও কর্মচারী সবাই। এই মার্কেটের সোনারগাঁও এন্টারপ্রাইজের মালিক শফিকুল ইসলাম বলেন, গত দু’সপ্তাহ ধরে মশারি বিক্রি বেড়েছে। সারা বছরে যা বিক্রি হয় তা গত এক সপ্তাহে হয়েছে। এই মার্কেটে প্রতিটি ছোট মশারি ৯০ থেকে ১০০ টাকা এবং চার হাত বাই পাঁচ হাত মশারি ১৩০ থেকে ১৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এ ছাড়া ভালো মানের মশারি ৩৫০ থেকে ৫০০ টাকায় পাওয়া যাচ্ছে।

image_pdfimage_print




সংবাদটি ভাল লাগলে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published.

এই বিভাগের আরো সংবাদ










© All rights reserved © 2019 notunbarta24.com
Developed by notunbarta24.Com
themebazarnotunbar8765