শুক্রবার, ২২ মার্চ ২০২৪, ০৭:০২ অপরাহ্ন




কবিগুরুর প্রয়াণ দিবস আজ

নতুনবার্তা ডেস্ক
  • প্রকাশ: মঙ্গলবার, ৬ আগস্ট, ২০১৯

এমন ঘনঘোর বরিষায় বাদল দিনের প্রথম কদম ফুল কিংবা বসন্তের আগমনী বার্তায় সবার আগে যে নামটি মনে আসে, তিনি হলেন রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর। বাংলার ঋতু, প্রকৃতি আর গ্রামীণ সৌন্দর্যকে সার্থকভাবে কাব্য, গীতির মাধ্যমে তুলে ধরেছেন তিনি। বাঙালি সংস্কৃতিতে তার প্রভাব সুদূরপ্রসারী। সাহিত্যের এমন কোনো শাখা নেই যেখানে কবিগুরুর ছোঁয়া লাগেনি। জীবন চলার পথের সব অনুভূতিকে বৈচিত্র্যময় ভাষা আর শব্দের মাধ্যমে কালি ও কলমে প্রতিষ্ঠা করেছেন। প্রেম, রোমাঞ্চ, ভালোবাসা কিংবা বিরহ প্রকাশে তিনি যেন অপরিহার্য। তাই তো বাংলা সাহিত্য ও সংস্কৃতির মহীরুহ রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর।

নিজের অসামান্য সৃষ্টিকর্মের মধ্য দিয়ে বিশ্বকবির খেতাবটিও অর্জন করেছেন এই কবি। রবীন্দ্রনাথের কারণেই বিশ্বের মানচিত্রে বাঙালি জাতির পরিচিতির বিস্তৃতি ঘটেছে। তিনিই বাংলা সাহিত্যকে বিশ্বের দরবারে বিশেষ মর্যাদায় অধিষ্ঠিত করেছেন। সাহিত্য ও সংস্কৃতির ভুবনে কালজয়ী চিহ্ন রেখে গেছেন বলে তার সৃষ্টিকর্ম বারবার বাঙালি জাতির মানসপটে নিয়ে আসে তাকে।

আজ বাইশে শ্রাবণ। কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ৭৮তম প্রয়াণ বার্ষিকী। তার প্রিয় ঋতু ছিল বর্ষা। ১৩৪৮ বঙ্গাব্দের এই দিনে কলকাতার জোড়াসাঁকোর ঠাকুরবাড়িতে এই প্রিয় ঋতুতেই নির্বাপিত হয়েছিল কবির জীবনপ্রদীপ। বাংলা সাহিত্য-সংস্কৃতিতে অসামান্য অবদান রাখা এই কবির মৃত্যুতে তার প্রতি শ্রদ্ধা রেখে সেদিন শোকাহত বিদ্রোহী কবি কাজী নজরুল ইসলাম লিখেছিলেন, ‘দুপুরের রবি পড়িয়াছে ঢলে অস্তপারের কোলে/বাংলার কবি শ্যাম বাংলার হৃদয়ের ছবি তুমি চলে যাবে বলে/শ্রাবণের মেঘ ছুটে এলো দলে দলে।’ রবীন্দ্রনাথ অবশ্য জন্ম-মৃত্যুর মাঝে খুব সামান্যই তফাত দেখেছেন। আর তাই তো তিনি লিখেছেন, ‘মৃত্যু দিয়ে যে প্রাণের/মূল্য দিতে হয়/সে প্রাণ অমৃতলোকে/মৃত্যুকে করে জয়।’ আশি বছরের জীবন সাধনায় মৃত্যুকে নিয়ে গভীর জীবন তৃষ্ণায় তিনি লিখেছেন, ‘মরিতে চাহি না আমি সুন্দর ভুবনে/মানবের মাঝে আমি বাঁচিবারে চাই।’

তার হাত ধরেই বাংলা সাহিত্য নতুন রূপ লাভ করে। গল্পে, উপন্যাসে, কবিতায়, প্রবন্ধে, নতুন সুরে ও বিচিত্র গানের বাণীতে, অসাধারণ সব দার্শনিক চিন্তাসমৃদ্ধ প্রবন্ধে, সমাজ ও রাষ্ট্রনীতিসংলগ্ন গভীর জীবনবাদী চিন্তা জাগানিয়া অজস্র বাণী, এমনকি চিত্রকলায়ও রবীন্দ্রনাথ চিরনবীন। তিনি ছিলেন একাধারে কবি, নাট্যকার, কথাশিল্পী, চিত্রশিল্পী, গীতিকার, সুরকার, সঙ্গীত পরিচালক, ছোটগল্পকার ও ভাষাবিদ। জীবনের শেষ পর্যায়ে তিনি চিত্রকর হিসেবেও খ্যাতি অর্জন করেন। তার লেখা বাংলাদেশের জাতীয় সঙ্গীত ‘আমার সোনার বাংলা’ সর্বকালের সেরা সঙ্গীত হিসেবে মর্যাদার আসনে প্রতিষ্ঠিত। তিনিই একমাত্র ব্যক্তি, যিনি বাংলাদেশের জাতীয় সঙ্গীত ও ভারতের জাতীয় সঙ্গীত ‘জনগণমন-অধিনায়ক জয় হে’ অর্থাৎ দুই দেশের জাতীয় সঙ্গীতের রচয়িতা। ‘বাংলাদেশ’ নামের বানানটি নেওয়া হয়েছে আমাদের ওই জাতীয় সঙ্গীত থেকেই।

ঊনবিংশ শতাব্দীর শেষ ও বিংশ শতাব্দীর প্রথমার্ধে বাংলা সাহিত্য ও সঙ্গীতে রবীন্দ্রনাথ এক যুগান্তকারী পরিবর্তনের সূচনা করেন। তার লেখা বিশ্বের দরবারে সম্মানের আসনে পৌঁছে দিয়েছে বাংলা সাহিত্যকে। রবীন্দ্রনাথ শুধু বাঙালির নয়, বাংলাদেশ ও ভারতসহ সারাবিশ্বে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা সব বাঙালির। সবার কাছেই তিনি মানবমুক্তির বারতা নিয়ে উদ্ভাসিত। ‘গীতাঞ্জলি’ কাব্যগ্রন্থের জন্য প্রথম এশীয় হিসেবে ১৯১৩ সালে তিনি সাহিত্যে নোবেল পুরস্কার লাভ করেন। নোবেল ফাউন্ডেশন তার এই কাব্যগ্রন্থটিকে বর্ণনা করেছিল একটি ‘গভীরভাবে সংবেদনশীল, উজ্জ্বল ও সুন্দর কাব্যগ্রন্থ’রূপে। ১৯১৫ সালে তিনি ব্রিটিশ সরকারের ‘নাইট’ উপাধি লাভ করেন। ১৯১৯ সালের ১৩ এপ্রিল জালিয়ানওয়ালাবাগ হত্যাকাে র প্রতিবাদে ওই উপাধি প্রত্যাখ্যানও করেন তিনি।

প্রসঙ্গত, বাংলা ১২৬৮ সনের ২৫ বৈশাখ, ইংরেজি ১৮৬১ সালের ৮ মে কলকাতার জোড়াসাঁকোর ঠাকুরবাড়িতে জন্মগ্রহণ করেন রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর। আলোচনা, কবিতা পাঠ ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানসহ নানা বর্ণাঢ্য আয়োজনে কবির ৭৮তম প্রয়াণ দিবস পালন করবে বিভিন্ন সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠন। এ উপলক্ষে বিটিভিসহ বিভিন্ন স্যাটেলাইট চ্যানেল ও বেতারেও সম্প্রচার করা হবে বিশ্বকবির প্রয়াণ দিবসের নানা অনুষ্ঠান।

image_pdfimage_print




সংবাদটি ভাল লাগলে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published.

এই বিভাগের আরো সংবাদ










© All rights reserved © 2019 notunbarta24.com
Developed by notunbarta24.Com
themebazarnotunbar8765