1

যুক্তরাজ্য আওয়ামী লীগ ও এর অঙ্গ সংগঠনের সংবাদ বর্জনের ঘোষণা

যুক্তরাজ্যের লন্ডনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উপস্থিতিতে জাতীয় শোক দিবসের অনুষ্ঠানে সাংবাদিকদের আমন্ত্রণ করে কারো কারো ক্ষেত্রে তা আবার প্রত্যাহার ও ক্লাবের সাবেক দুই সভাপতিকে দাওয়াত দিয়ে নিয়ে গিয়েও হলে ঢুকতে না দেয়ার ঘটনায় তোলপাড় চলছে কমিউনিটিতে। ঘটনার তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় লন্ডন বাংলা প্রেস ক্লাব এক জরুরি সভায় মিলিত হয়ে সিনিয়র সাংবাদিকদের আমন্ত্রণ করে নিয়ে গিয়ে ফিরিয়ে দেয়ার কারণ প্রকাশ ও বিষয়টির সম্মানজনক সুরাহা না হওয়া পর্যন্ত যুক্তরাজ্য আওয়ামী লীগ ও তার অঙ্গ সংগঠনগুলোর সকল সংবাদ প্রকাশ থেকে বিরত থাকার ঘোষণা দিয়েছে।

শনিবার স্থানীয় সময় সন্ধ্যায় ক্লাব কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত এই সভার সিদ্ধান্ত জানাতে গিয়ে লন্ডন বাংলা প্রেস ক্লাবের সভাপতি এমদাদুল হক চৌধুরী কয়েকজন সাংবাদিককে আমন্ত্রণ জানিয়ে তা প্রত্যাহার ও সিনিয়র দুই সাংবাদিককে হল থেকে ফিরিয়ে দেয়ার ঘটনাকে নজিরবিহীন ও অবিশ্বাস্য বলে মন্তব্য করেন। তিনি বলেন, ‘কোন সভ্য সমাজে এ ধরনের ঘটনা ঘটে বলে আমার জানা ছিলো না। আমাদের সিনিয়র দুইজন লিডারকে দাওয়াত দিয়ে নিয়ে হলে ঢুকতে দেয়া হয়নি। এর আগে আরও ৭/৮ জন সাংবাদিককে দাওয়াত দিয়ে তা প্রত্যাহার করা হয়েছে।’
ঘটনার তীব্র নিন্দা জানিয়ে প্রেস ক্লাব সভাপতি বলেন, ‘এ ধরনের ঘটনা কোন শিষ্টাচারের মধ্যেই পড়ে না। আমি এর তীব্র নিন্দা জানাচ্ছি।’

যুক্তরাজ্য আওয়ামী লীগের কাছে এ ঘটনায় নিঃশর্ত ক্ষমা আশা করে ক্লাব সভাপতি বলেন, ‘সাংবাদিকদের কালো তালিকাভুক্ত করা এবং ক্লাবের সাবেক দুই সভাপতিকে হল গেইট থেকে ফিরিয়ে দেয়ার কারণ জানতে চাই আমরা। আমন্ত্রণ কর্তা আওয়ামী লীগ নেতৃবৃন্দের কাছে নিশ্চয়ই এর কোন কারন আছে।’

এ সময় নিঃশর্ত ক্ষমা প্রার্থনা ও ঘটনার কারণ জানানোর মাধ্যমে বিষয়টির সম্মানজনক সমাধান না করা পর্যন্ত যুক্তরাজ্য আওয়ামী লীগ ও তার অঙ্গসংগঠনের সকল সংবাদ বর্জনের ঘোষণা দেন বাংলা প্রেস ক্লাব সভাপতি এমদাদুল হক চৌধুরী।

ক্লাবের তাৎক্ষণিক জরুরি সভায় উপস্থিত ছিলেন, আমন্ত্রণ করে নিয়ে গিয়ে হলে ঢুকতে না দেয়া দুই সিনিয়র সাংবাদিক ও বাংলা প্রেস ক্লাবের সাবেক দুই সভাপতি সাপ্তাহিক জনমত’র প্রধান সম্পাদক সৈয়দ নাহাস পাশা ও সম্পাদক নবাব উদ্দিন।

ঘটনায় হতাশ সৈয়দ নাহাস পাশা তার প্রতিক্রিয়ায় বলেন, ‘পেশাদারী দায়িত্ব পালন করার জন্য আমন্ত্রণ জানিয়ে নিয়ে গিয়ে ঢুকতে না দেয়া খুবই নিন্দনীয় বিষয়। যেহেতু যুক্তরাজ্য আওয়ামী লীগ আমাদের আমন্ত্রণ কর্তা, সেহেতু এই ঘটনা তাদের বিপক্ষেই যাবে। আমি আশা করবো ভবিষ্যতে আমন্ত্রণ করে নিয়ে গিয়ে যুক্তরাজ্য আওয়ামী লীগ যেন কাউকে এমন বিব্রতকর অবস্থায় না ফেলে’।

নবাব উদ্দিন বলেন, ‘যুক্তরাজ্য আওয়ামী লীগ দাওয়াত দিয়ে নিয়ে গিয়ে আমাদের ঢুকতে দেয়নি, এটি দুঃখজনক। শুধু আমি বা নাহাস পাশা নন, অনেককেই ঢুকতে দেয়া হয়নি। এটি ব্রিটেনের সব সাংবাদিকদের জন্য দুঃখ ও লজ্জাজনক। এই ঘটনায় আমাদের সবাইকে অপমান করা হয়েছে। একটি রাজনৈতিক দল হিসেবে আওয়ামী লীগ বিষয়টি দেখবে ও প্রেস ক্লাব নেতৃবৃন্দের সাথে আলোচনা করে বিষয়টির সুরাহা করবে, এমনটিই আমি আশা করি’।

আমন্ত্রণ করেও তা আবার প্রত্যাহার করে নেয়ার শিকার বাংলাদেশ প্রতিদিনের ইউরোপ ব্যাুরো চিফ ও প্রেস ক্লাবের ট্রেজারার আ স ম মাসুম এই ঘটনাকে একটি কালো অধ্যায়ের সূচনা আখ্যায়িত করে বলেন, ‘গণমাধ্যম কর্মীদের কালো তালিকাভুক্ত করা পৃথিবীর কোন দেশের জন্যই সুখকর নয়। আমি মনে করি আজকের এই আঘাত আমাদের সবার উপর। এর প্রতিবাদে আমাদের ঐক্যবদ্ধ হওয়া উচিত’।

উল্লেখ্য, শনিবার প্রধানমন্ত্রীর উপস্থিতিতে যুক্তরাজ্য আওয়ামী লীগের জাতীয় শোক দিবসের আলোচনায় আমন্ত্রণ করেও আগের দিন কোন কোন সাংবাদিকদের আমন্ত্রণ প্রত্যাহার করে নেয়া হয়। শুধু তাই নয় আমন্ত্রণ প্রত্যাহারের কোন খবর না দিয়েই আমন্ত্রিত দুই সিনিয়র সাংবাদিক লন্ডন বাংলা প্রেস ক্লাবের সাবেক দুই সভাপতি সাপ্তাহিক জনমত’র প্রধান সম্পাদক সৈয়দ নাহাস পাশা ও সম্পাদক নবাব উদ্দিনকে হলে ঢুকতে দেয়া হয়নি।