1

শরীয়তপুরে মা ইলিশ শিকারের মহোৎসব

শরীয়তপুরের নদনদীতে মা ইলিশ শিকারের মহোৎসব চলছে। কেউ কোন নিয়মনীতি মানছেনা। প্রতিদিন হাজার হাজার জেলে পদ্মা নদীতে কারেন্ট জাল দিয়ে নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে মা ইলিশ শিকার করছে। শত শত মন ডিমওয়ালা মা ইলিশ ধরা পড়ছে জেলেদের জালে। প্রতিদিন কম করে হলেও শতাধিক লোক ইলিশ সহ আটক করা হয়। তার পরেও থেমে নেই শরীয়তপুরে মা ইলিশ শিকার। স্থানীয়দের অভিযোগ প্রশাসনের লোকেরা দায়সারা অভিযান করছে। ফলে নদীতে ইলিশ শিকারে মেতে উঠেছে জেলেরা। মৎস্য বিভাগ বলছে লোকবল কম এ কারনে নিয়ন্ত্রন করা সম্ভব হয়ে উঠছেনা।বন্ধ করতে হলে সকলের আন্তরিকতা দরকার।

সরেজমিন গিয়ে দেখা গেছে, শরীয়তপুরের জাজিরা উপজেলার বিলাসপুর, পালেরচর কাজিয়ার চর কুন্ডেরচর নড়িয়া উপজেলার চরআত্রা নওপাড়া,সুরেশ্বর ভেদরগঞ্জ উপজেলার গৌরাঙ্গ বাজার ,স্টেশন বাজার, কাচিকাটা, দুলারচর, আলুর বাজার, গোসাইরহাট উপজেলার সাতপাড়, চরজালালপুর কোদালপুর এলাকায় পদ্মা ও মেঘনা নদীতে প্রায় হাজার হাজার জেলে ডিঙ্গি নৌকা, ইঞ্জিন চালিত নৌকা, সিবোর্ড করে কারেন্ট জাল দিয়ে সরকারী নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে হরদমে মাছ শিকার করছে জেলেরা। জেলেরা মাছ ধরে নদীর পাড়ে এনে চোরা কারবাড়িদের কাছে স্বল্প মূলে বিক্রি করে। সেখানে গেলে মনে হয় ইলিশ বিক্রির মেলা বসছে। আর চোরা কারবারিরা মোটর সাইকেল যোগে, অটোরিক্সা যোগে, স্কুল ব্যাগে, বস্তাবন্দি করে মাছ গ্রাম অঞ্চলে এনে বাড়ি বাড়ি বিক্রি করছে। মৎস্য বিভাগ কোসগার্ড, ফায়ার সার্ভিস প্রশাসনের সহায়তায় কিছু কিছু জেলে ও মাছ ক্রেতাদের নামাত্র কিছু সংখ্যক লোকদের গ্রেফতার করলে ও হাজার হাজার জেলে প্রকাশ্যে দিনরাত মাছ শিকারে মেতে উঠছে। মাছ শিকারীরা নৌকা ও ট্রলার দিয়ে মাছ শিকারের সময় ডাঙ্গায় থাকা পুলিশ সদস্যদের ব্যঙ্গ করে বলে মামা খবর কি? অসহায় পুলিশ চেয়ে চেয়ে দেখছে। এদিকে পুলিশের আটককৃত মাছ থানায় এনে কিছু অসাধু পুলিশ সদস্য এতিমদের মধ্যে বিলি বিতরনের নামে নিজেদের বাসা বাড়িতে নিয়ে যাচ্ছে বলে অভিযোগ রয়েছে। ইতোমধ্যে ৩ জন পুলিশ সদস্য মা ইলিশ পরিবহনের দায়ে বরখাস্ত হয়েছে। এরা হলেন এএস আই মিন্টু হোসেন, কনস্টেবল ড্রাইভার সঞ্জিত সমাদ্দার ও হৃদয় হোসেন। অভিযোগ রয়েছে স্থানীয় প্রভাবশালীরা একাধিক নৌকা ও ট্রলার তৈরী করে নিষেধাজ্ঞার সময় জেলেদের কে ভোলা মুন্সিগঞ্জ,চাদপুর সহ বিভিন্ন এলাকা থেকে জেলেদেরকে দাদন দিয়ে এনে মাছ ধরতে পাঠায়। গত মঙ্গলবার ভোররাতে সিবোর্ডে মাছ শিকার করতে গিয়ে দু’সিবোর্টের মধ্যে সংঘর্ষে ৪ জেলে নিহত হয়। এরা হলেন স্বপন মোল্যা, নেয়াজ উদ্দিন, মান্নান বেপারী ও বাচ্চু মাদবর।

এ ব্যাপারে জেলে সামচেল হক বলেন, আমরা মহাজনদের থেকে দাদন নিয়ে তাদের নৌকা ও ট্রলার দিয়ে মাছ শিকার করে থাকি। কেননা সরকার নিষেধাজ্ঞা কালীন সময়ের জন্য যৎ সামান্য চাল দিয়ে থাকে। তাও সব জেলেরা পায়না। ছেলে মেয়েদের নিয়ে কি খাব এ জন্য ভয়ভীতি উপেক্ষা করে মাছ শিকারে যাই।
পদ্মাপাড়ের আবদুস সোবহান বলেন, পুলিশকে ম্যানেজ করে স্থানীয় প্রভাবশালীরা জেলেদেরকে মাছ শিকারে নদীতে নামিয়েছে। ফলে দিনরাত অবাধে জেলেরা মাছ শিকার করছে।
নাম না বলা শর্তে পদ্মাপাড়ে কর্তব্যরত জাজিরা থানার এক পুলিশ সদস্য বলেন, পদ্মানদীর বিশাল এলাকা। আমরা মাত্র ৪জন পুলিশ। এদিক থেকে ধাওয়া দিলে ওদিক দিয়ে আসে। ওদিক গিয়ে ধাওয়া দিলে এদিকে এসে ওঠে। এভাবে সামান্য পুলিশের পক্ষে এত জেলেদেরকে নিয়ন্ত্রন করা সম্ভর নয়।

বড়কান্দি ইউনিয়নের চেয়ারম্যান সিরাজুল ইসলাম সরদার বলেন, বিলাসপুর ,পালেরচর ও কুন্ডেরচর এলাকায় পদ্মা নদীতে জেলেরা দিনরাত অবাধে মাছ শিকার করছে। প্রতি বছরই এ ভাবে মাছ শিকার করে ।
জাজিরা থানার ওসি মোঃ বেলায়েত হোসেন বলেন, আমরা সম্মিলিত ভাবে নিয়ন্ত্রন করতে চেষ্টা করছি। তারপরেও বিশাল বড় নদী এক দিকে অভিযান করলে অন্য দিকে জেলেরা নেমে পড়ে। আর পুলিশ কোন মাছ নেয়নি। যদি কেউ বলে থাকে এ কথা সম্পূর্ন ভিত্তিহীন।
জেলা মৎস্য কর্মকর্তা বিশ্বজিৎ বৈরাগী বলেন, এতবড় বিশাল নদী সামান্য লোকবল দিয়ে নিয়ন্ত্রন করা অসম্ভব।একদিকে প্রশাসন গেলে তখন জেলেরা দৌড়ে পালায়।