1

নারী আইনজীবীকে পিটালেন উপজেলা চেয়ারম্যান, শশুরকে রগ কর্তণের হুমকি

তুচ্ছ ঘটনায় প্রকাশ্যে এক নারী আইনজীবীকে মারধর করলেন পটুয়াখালীর গলাচিপা উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান শাহিন শাহ্। শুধু তাই নয় ঘটনার সময় উপস্থিত দুই শতাধিক লোকের সামনে ওই নারী আইনজীবীকে অকথ্য ভাষায় গালমন্দ করেন চেয়ারম্যান।

এছাড়াও ওই নারী আইনজীবীর শ্বশুর কলাগাছিয়া ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যানকে মোবাইল ফোনে গালাগাল ও পায়ের রগ কর্তন এবং পা ভেঙ্গে দেয়ার হুমকিও দিয়েছেন ওই উপজেলা চেয়ারম্যান। বৃহস্পতিবার রাতে এ ঘটনায় উপজেলা চেয়ারম্যানের সন্ত্রাসী বাহিনী কর্তৃক তার বসতবাড়ীতে হামলার আশংকা এবং নিজের নিরাপত্তা চেয়ে গলাচিপা থানায় সাধারণ ডায়েরী করেছেন উপজেলার ৯নং কলাগাছিয়া ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান মো. দুলাল চৌধূরী।
এর আগে বৃহস্পতিবার দুপুরে গলাচিপা উপজেলা নির্বাহী অফিসারের কার্যালয় চত্বরে ইউপি চেয়ারম্যানের পুত্রবধূ আইনজীবী উম্মে আসমা আখিকে জন সম্মুখে চর থাপ্পর-লাথি মারেন উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান।

কলাগাছিয়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান দুলাল চৌধুরী অভিযোগ করে জানান, তিনি শারিরীক অসুস্থ্যতার কারনে চিকিৎসার জন্য বেশ কিছুদিন নিজ জেলার বাইরে ছিলেন। বুধবার তিনি গলাচিপা উপজেলার বাসায় আসেন। বৃহস্পতিবার তার ব্যবহৃত মোবাইল ফোনে গলাচিপা উপজেলা চেয়ারম্যান শাহিন শাহ্ কল করে তাকে উপজেলা চত্বরে যেতে বলে। তিনি শারিরীকভাবে অসুস্থ্য জানিয়ে উপজেলা চত্বরে যেতে অপারগতা প্রকাশ করেন উপজেলা চেয়ারম্যানের কাছে মোবাইলে। এতে উপজেলা চেয়ারম্যান আরও ক্ষিপ্ত হয়ে অকথ্য ভাষায় তাকে গালমমন্দ করে। এ সময় তিনি এর প্রতিবাদ করলে শাহিন শাহ আরো ক্ষিপ্ত হয়ে হাত-পায়ের রগ কাটা এবং পা ভেঙ্গে দেয়ার হুমখী দেয় তাকে। এক পর্যায় তিনি (ইউপি চেয়ারম্যান) ফোনের লাইনটি কেটে দেয়।

এ ঘটনা পটুয়াখালী জেলা প্রশাসককে জানালে তাকে আইনী সহায়তা নেয়ার পরামর্শ দেন বলে জানায় দুলাল চৌধুরী। তিনি জানান, আমার নিজের নিরাপত্তা চেয়ে এবং উপজেলা চেয়ারম্যানের সন্ত্রাসী বাহিনী কর্তৃক আমার বসতবাড়ীতে হামলার কথা উল্লেখ করে আমি থানায় অভিযোগ দিয়েছি।

পরে ঘটনাক্রমে গলাচিপা উপজেলা পরিষদ চত্বরে উপস্থিত হন ইউপি চেয়ারম্যানের পুত্রবধু নারী আইনজীবী উম্মে আসমা আখি। এসময় উপজেলা চেরয়াম্যান আখিকে বলেন, তোর শ্বশুরে কলাগাছিয়া ইউনিয়ন পরিষদের ২ নং ওয়ার্ডের লতিফ গংদের পুকুরের মাছ বিষ দিয়ে মারছে। তুই তার জরিমানা দিবি। এমন কথার উত্তরে তার শ্বশুর ঢাকায় চিকিৎসাধিন ছিলেন এবং বুধবার রাতে সে বাসায় এসেছেন বলে উপজেলা চেয়ারম্যানকে জানায় আখি। এসময় উপজেলা চেয়ারম্যান ওই নারী আইনজীবীকে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করলে আখি এর প্রতিবাদ করে। এতে উপজেলা চেয়ারম্যান শাহিন ক্ষিপ্ত হয়ে প্রকাশ্যে আখিকে চর-থাপ্পর, কিল-ঘুষি এবং লাথি মারেন। এ ঘটনা দেখে উপজেলা চত্বরে অন্তত দুই শতাধিক লোক জড়ো হয়। একপর্যায় উপস্থিত লোকের সামনে আখিকে বিবস্ত্র এবং মানহানি করার হুমকী দেয়।

আইনজীবী উম্মে সালমা আখি জানান, প্রকাশ্যে আমার সাথে উপজেলা চেয়ারম্যান শাহিন শাহ্ যেভাবে আচরণ করেছে তা সভ্য মানুষের কাজ নয়। এ বিষয়ে আমি আইনজীবী সমিতির মাধ্যমে প্রতিকার চাইবো।

গলাচিপা থানার ওসি আখতার মোর্শেদ বলেন, নিরাপত্তা চেয়ে কলাগাছিয়া ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান থানায় একটি সাধারণ ডায়েরী করেছেন। উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান মোবাইল ফোনে তাকে হুমকি দিয়েছেন এবং তার বসতবাড়ীতে হামলার আশংকা করছেন বলে তিনি জিডিতে উল্লেখ করেছেন। অভিযোগটি আদালতের মাধ্যমে মোবাইলের ডকুমেন্ট সংগ্রহ করে আইনী প্রক্রিয়ায় তদন্ত করা হবে। এছাড়া নারী আইনজীবীকে লাঞ্চিতের বিষয়ে কোন অভিযোগ পাইনি বলেন ওসি।

গলাচিপা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শাহ মোঃ রফিকুল ইসলাম জানান, লোকমুখে ঘটনা শুনেছি। ইউপি চেয়ারম্যান আমাকে জানিয়েছেন উপজেলা চেয়ারম্যান তাকে মোবাইল ফোনে হুমকি দিয়েছেন এবং তার পুত্রবধূকে শারিরিক ভাবে লাঞ্চিত করেছেন। এ ঘটনায় ইউপি চেয়ারম্যান থানায় একটি জিডি করেছেন সেটাও আমাকে জানিয়েছেন।

গলাচিপা উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান শাহিন শাহ নারী আইনজীবীকে লাঞ্চিত করার অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, ইউপি চেয়ারম্যানের লোকজন বিষ দিয়ে মাছ মেরেছে। ওই মাছ নিয়ে এলাকার লোকজন উপজেলায় এসেছে। তখন চেয়ারম্যানকে ফোনে ঘটনাস্থলে আসতে বলেছি। এইসব নিয়ে একটু ঝামেলা হয়েছে আর কিছুই নয়।