1

জলাবদ্ধতায় ডেঙ্গু আতংক রাজধানীর জুরাইনে : সচেতনতার অভাব বাড়ির মালিকদের

কোথাও হাটু পানি, কোথাও বা তারও বেশি। স্কুলের শ্রেণি কক্ষ কিংবা বসবাসরত বাসা বাড়িতে  জমে আছে পানি আর পানি! জমে থাকা এসব স্বচ্ছ পানি থেকেই তৈরি হচ্ছে ডেঙ্গু মশা। সেখানে বসবাসরত অনেকেই বাড়ির কাজ ফেলে সন্ধ্যা নামার সাথে মশারি টাঙ্গিয়ে ভিতরে বসে থাকেন। সারা রাজধানীজুড়ে ছোট থেকে বড় কেউ যেন রেহাই পাচ্ছে না ডেঙ্গু জ্বর থেকে। অনেকেরই জীবন দিতে হচ্ছে এ জ্বরে। এলাকাবাসী ডেঙ্গু আতঙ্কে ভুগছেন স্বচ্ছ পানি জমে থাকা ও অধিকাংশ জায়গায় জলাবদ্ধতার কারনে । শনিবার রাজধানীর জুরাইন এলাকা ঘুরে দেখা যায় এই দৃশ্য।

 

রাজধানীর পূর্ব জুরাইন সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও মুরাদপুর আদর্শ উচ্চ বিদ্যালয়ে বৃষ্টির মৌসুম শুরুর সাথে সাথেই সৃষ্টি হয়েছে জলাবদ্ধতা। তবে এই জলাবদ্ধতা সারাবছরই কমবেশি বিরাজমান থাকে।বৃষ্টির মৌসুমে আরও ভয়াবহ মাত্রায় জলাবদ্ধতা বেড়ে যায়। ড্রেনের কিংবা বৃষ্টির পানিতে তলিয়ে থাকে জুরাইন এলাকার অধিকাংশ ঘর। প্রাথমিক স্কুলের নিচতলায় শ্রেনীকক্ষে প্রায় তিন ফুট স্বচ্ছ পানি জমাট বেধে আছে। যেখানে কোমলমতি ছাত্র-ছাত্রীদের ক্লাস নিতে পারছে না শিক্ষকরা। স্কুলের পেছন দিকে হাজী কে.আলী রোডে একটা তিনতলা বাসাবাড়ির নিচ তলায় প্রায় তিন ফুট স্বচ্ছ পানি জমে আছে । গত কয়েক বছর ১২ মাস ধরে এই এলাকায় অধিকাংশ স্কুল,বাসাবাড়ি ও পরিত্যক্ত জায়গায় পানি জমাট বেধে থাকে। এ ব্যপারে স্কুল কতৃপক্ষ ও বাড়ির মালিকদের নেই কোন মাথাব্যথা।

২০১২ সালের প্রথমদিকে সিটি কর্পোরেশনের অফিসে প্রায় সাড়ে তিন হাজার লোকের গণস্বাক্ষরসহ লিখিত ভাবে জানিয়েছিলেন এলাকাবাসী। কিন্তু এখনও পর্যন্ত কোন আমলে নেননি কতৃপক্ষ বলে জানান তারা। এছাড়াও এই ভবনের মতো ডিএনডি, শ্যামপুর ও সবুজবাগ এলাকায় দেখা যায় এমন  জলাবদ্ধতা। যেখানে সৃষ্টি হচ্ছে প্রতিদিন হাজার হাজার মশার বংশ বিস্তার। বসবাসরত মানুষদের মনে প্রতিদিন সৃষ্টি হচ্ছে একধরনের আতঙ্ক। সবসময় তাদের থাকতে হচ্ছে ডেঙ্গু মশার ভয়ে। এদিকে বহু পরিত্যক্ত ভবনে পানি ও ময়লা-আবর্জনার কারনে বসবাস করতে পারছে না সাধারন মানুষ। সন্ধ্যার শুরু হতে না হতেই মশার কয়েল জ্বালিয়ে ও মশারির ভিতরে বসে থাকে। অধিকাংশ ভবনের ভিতরে স্বচ্ছ হাটুপানি ও ময়লা- আবর্জনার স্তুপসহ পানি জমে আছে। জলাবদ্ধতা নিরসনের নেই কোন সুব্যাবস্থা। সিটি কর্পোরেশনের নেই কোন সুদৃষ্টি। বছরের পর বছর হাজার হাজার মানুষকে এই অসাস্থ্যকর পরিবেশে বসবাস করতে হয়। গত এক সপ্তায় এ এলাকায় ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হয়েছে ১২ জন তার ভিতর গত কয়েক দিন আগে একজন মারা গেছে।

ডেঙ্গুজ্বরে আক্রান্ত শাফায়েতুর রহমান হোসাইন (২৫)। উত্তরায় একটি সফটওয়ার ফার্মে চাকরি করেন। তিনি জুরাইনের সবুজ বাগের বাসিন্দা। তার যমজ ভাই এ আর হাসান নতুনবার্তা২৪ডটকমকে বলেন, গত শুক্রবার তার ভাই ডেঙ্গুজ্বরে আক্রান্ত হয়। তাকে রাজধানীর মিটফোর্ড হাসপাতালে নেওয়া হলে চিকিৎসকের পরামর্শে রক্ত পরীক্ষা করানো হয়। জ্বরের তাপমাত্রা বেড়ে যাওয়ায়  মিটফোর্ড হাসপাতালের ইমাজেন্সি বিভাগের মেডিকেল অফিসার অন্য হাসপাতালে নেওয়ার পরামশ দেন। পরবতিতে তাকে ধানমন্ডি ইবনেসিনা হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সেখানে তিনদিন চিকিৎসা দেওয়া হয়। এখন সে বাড়িতে চিকিৎসারত আছে। তার অভিযোগ বাড়ির পাশে বহুদিন ধরে একটি পরিত্যক্ত ডোবা আছে। এবং সেখানে ভয়াবহমাত্রায় মশার বশংবিস্তর হয়। কয়েল ছাড়া থাকা যায় না। সিটি করপোরেশনের থেকে মশক নিধনের অভিযানে আসলে কিছু কিছু স্থানে দিয়ে চলে যায়।

ডিএসসিসির ৫৩ নম্বর ওয়াড কাউন্সিলর মো.নূর হোসেন নতুনবার্তা২৪ডটকমকে বলেন, বিশেষ করে স্বচ্ছ ও তিনদিন জমে থাকা পানিতে ডেঙ্গু মশার জন্ম হয়। আমরা জলাবদ্ধতা নিরসনের জন্য কাজ করছি। আমাদের সিটি কর্পোরেশনের অধীনে কয়েকটি টিম কাজ করছে। তারা প্রতিদিন বাড়ি বাড়ি গিয়ে পানি ও ময়লা পরিস্কারের কাজে নিয়োজিত থাকে। ওই এলাকায় কিছু পরিত্যক্ত বাড়ি ও জায়গায় জলাবদ্ধতাটা একটু বেশি দেখা দিচ্ছে।

তিনি আরও বলেন, এ এলাকায় কিছু মানুষের মাঝে এখনও অনেক সচেতনতা ও শিক্ষার অভাব আছে। ১৮টি ওয়াডে সেনাবাহিনীর অধীনে জলাবদ্ধতা নিয়ন্ত্রনের কাজ চলছে। এর সমাধান হতে একটু সময় লাগবে। আমরা আপ্রান চেষ্টা করে যাচ্ছি। তবে যারা সিটি কর্পোরেশনের ব্যর্থতার বিরুদ্ধে অভিযোগ দিচ্ছেন এবং যাদের জলাবদ্ধতা নিয়ে সমস্যায় বেশি পরতে হচ্ছে তাদেরকে আমার সাথে যোগাযোগ করার অনুরোধ করা হল। আমি তাদের সমস্যা সমাধান করবো।

মিষ্টির দোকান এলাকার বাসিন্দা মিজানুর রহমান বলেন, এ বছর ৫২ নম্বর ওয়াডে গত এক সপ্তাহে ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হয়েছে ৭জন এবং ১ জন মারা গেছে। এখানে জলাবদ্ধতা নিরসনে নেই কোন পরিকল্পিতভাবে ড্রেনেজ ব্যবস্থা। যদি খাল দখলমুক্ত করে খনন কাজ এবং পাম্প করে নদীতে ফেলা হয় তবে কিছুটা সমস্যা নিরসন করা সম্ভব হবে। এবং দূষিত পানি পরিশোধন করে ফেলতে হবে।

পূর্ব জুরাইন সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক বলেন, আমরা উপর মহলকে জানিয়েছি। এবং নিষ্কাশনের ব্যবস্থা নিচ্ছি। আগামী বাজেটে এর জন্য বরাদ্দ করা হবে।পাশাপাশি সিটি কর্পোরেশনের মশা নিধনের ঔষধের কাযকারিতা বাড়াতে হবে। তাদের ঔষধের পরিবর্তে ধোয়া দেওয়া বন্ধ করতে হবে। এই এলাকায় মানুষের মাঝে শিক্ষার হার কম। সবাইকে সচেতন হতে হবে।

এ ব্যপারে বাড়িওয়ালা শাহানা বেগমের কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, মাঝে মাঝে মশামারা ঔষধ দেওয়া হয়। কোন কাজ হয় না। সিটি কর্পোরেশন থেকে মশা নিধন অভিযানে আসলে সব বাসার ভিতর না এসে চলে যায়। জমাটবাধা পানি নিরসনে আমাদের কিছু করার নেই।  জলাবদ্ধতায় ভুক্তভোগী ভাড়াটিয়া ফিরোজা বেগম বলেন,সন্ধ্যা হলে মশার উৎপাতে বাহিরে থাকতে পারি না। মশারির ভিতরে থাকতে হয়। বাড়ির মালিকদের কোন খবর নেই। বাচ্চাদের নিয়ে সবসময় ডেঙ্গু জ্বরের আতংঙ্কে থাকতে হয়। আনুমানিক গত দেড় বছর আগে দীপু নামে বাড়ির মালিকের কলেজ পড়ুয়া ছেলে ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হয়েছিলো।