বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ বাগেরহাটের মোরেলগঞ্জ উপজেলা শাখার ত্রি-বার্ষিক সম্মেলন রবিবার। সাংগঠনিক নিয়মে তিন বছর পরপর সম্মেলন হওয়ার বিধান থাকালেও মোরেলগঞ্জে এ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে টানা ১৬ বছর পর। সর্বশেষ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়েছিল ২০০৩ সালে।
দীর্ঘ ১৬ বছর পরের এ সম্মেলন নিয়েও রয়েছে নানা টানাপোড়েন। অনিয়মের আশ্রয়ে কাউন্সিলর বানানোর অভিযোগে একটি অংশ সম্মেলনের বিরোধীতা করছে। অপর অংশ অনুপ্রবেশকারি ইস্যুতে শক্ত অবস্থানে রয়েছেন। তবে উপজেলা আ. লীগের সভাপতি অ্যাড. আমিরুল আলম মিলন বলেছেন, পূর্ব ঘোষণা অনুযায়ী রবিবার সাংগঠনিক নিয়মে সম্মেলন অনুষ্ঠিত হবে।
২০০৩ সালের সম্মেলনে অ্যাড. আমিরুল আলম মিলন সভাপতি ও এম এমদাদুল হক সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন। ওই কমিটি দিয়েইে চলছে ১৬ বছর। এবারের সম্মেলনে নতুন মুখ আসবে কিনা তা নিয়ে সংশয় রয়েছে। তবে সভাপতি পদের জন্য আমিরুল আলম মলন ও মো. লিয়াকত আলী খানের নাম শোনা যাচ্ছে। সাধারণ সম্পাদক পদে এম এমদাদুল হক, সাহাবুদ্দিন তালুকদার ও পৌরসভা মেয়র মনিরুল হক তালুকদারের নাম শোনা যাচ্ছে। তবে পরিবেশ পরিস্থিতি অনেকের প্রার্থীতা পাল্টে দিতে পারে বলেও সম্ভাব্যরা জানিয়েছেন।
সম্ভাব্য প্রার্থীরা ইউনিয়ন, ওয়ার্ড কাউন্সিলর (ভোটার) ও নেতাকর্মীদের সাথে সাংগঠনিক সম্পর্ক বাড়িয়েছেন। এবারের সম্মেলনে ভোট হলে ৬০৯ জন কাউন্সিলর ভোট দিবেন।
১৬ বছর পরের এই সম্মেলন সম্পর্কে পৌরসভা মেয়র মনিরুল হক তালুকদার বলেন, আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনার প্রত্যাশা অনুযায়ী এবারের কমিটিতে কোন অনুপ্রবেশকারি, বিতর্কীত ব্যাক্তি বা পরিবারের সদস্য থাকতে পারবে না। একটি পরিবারের ৪ জন জল্লাদসহ ১১ জন যুদ্ধাপরাধী। সেই পরিবারের সদস্যও এবার সাধারণ সম্পাদক পদে প্রার্থী হচ্ছে। এটা কেউ মেনে নিবেনা।
লিয়াকত আলী খান বলেন, গঠণতন্ত্র পরীপন্থি প্রক্রিয়ায় কাউন্সিলর করা হয়েছে। তাই এই সম্মেলন স্থগিত করে গঠণতন্ত্র মোতাবেক সম্মেলন করার জন্য লিখিতভাবেই উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে অনুরোধ করা হয়েছে।
সম্ভাব্য প্রার্থীদের রাজনৈতিক ইতিবৃত্ত:
সভাপতি
আমিরুল আলম মিলন। বয়স ৬২ বছর। ছাত্রলীগ থেকে রাজনীতিতে হাতেখড়ি। ১৯৮২ সালে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রলীগের সভাপতি ছিলেন। ওই সময় শিবিরের ৩ কর্মী খুণের হত্যা মামলায় তার যাবজ্জীবন সাজা হয়। তৎকালীন রাষ্ট্রপতি এরশাদ তাকে সাধারণ ক্ষমা করেন। পরে আইন পেশায় যোগ দেন। যুক্ত থাকেন স্থানীয় রাজনীতির সাথেও। ১৯৯১ ও ১৯৯৮ সালে উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক হন। ২০০৩ সালের সম্মেলনে সভাপতি হন। ২০১৬ সালে আ. লীগ কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্য নির্বাচিত হন।
লিয়াকত আলী খান। বয়স ৭১ বছর। ১৯৬৬ সালে উপজেলা ছাত্রলীগের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি। ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধে সুন্দরবন সাবসেক্টেরে ছাত্র কমান্ডের কমান্ডার ও ৩ মাসের জন্য ভারপ্রাপ্ত সাবসেক্টর কমান্ডার ছিলেন। ১৯৭৩ সালে এসএম কলেজে ভিপি নির্বাচিত হন। ১৯৭৬ সাল থেকে উপজেলা আ. লীগের সহসভাপতি।
সাধারণ সম্পাদক
এমদাদুল হক। বয়স ৬২ বছর। ১৯৭৯ সালে ছাত্রলীগের সভাপতি হন। ’৮০ সালে এসএম কলেজের ভিপি। ’৮৭ সালে যুবলীগের সভাপতি হন। ২০০৩ সালে আ. লীগের সাধারণ সম্পাদক হন।
মনিরুল হক তালুকদার। বয়স ৫৬ বছর। ছাত্রলীগ থেকে রাজনীতি শুরু। ১৯৯৪ সালে উপজেলা যুবলীগের সভাপতি হন। ২০০৪, ২০১১ ও ২০১৫ সালে মোরেলগঞ্জ পৌরসভার মেয়র নির্বাচিত হন। বর্তমানে পৌর আওয়ামী লীগের সভাপতি।
অধ্যক্ষ সাহাবুদ্দিন তালুকদার। বয়স ৬২ বছর। ১৯৮৫ সালে কৃষক লীগের সভাপতি ও ২০০৩ সালে উপজেলা আ. লীগের সহসভাপতি হন। বর্তমানে জেলা পরিষদের সদস্য ও প্যানেল চেয়ারম্যান-২।
সম্ভাব্য এসব প্রার্থীদের মধ্যে অধ্যক্ষ সাহাবুদ্দিন তালুকদারকে নিয়ে চলছে চড়া বিতর্ক। তিনি বিতর্কীত বা বিতর্কীত পরিবারের সদস্য বা অনুপ্রবেশকারি এমন অভিযোগ তুলছেন অনেকে।
এ বিষয়ে সাহাবুদ্দিন তালুকদার বলেন, ‘আমি প্রায় ৪০ বছর আওয়ামী রাজনীতির সাথে জড়িত। আমাকে নিয়ে বিতর্ক তোলার সুযোগ নেই’। তার বিষয়ে উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের সাবেক ৩ কমান্ডার মো. লেয়াকত আলী খান, শাহ আলম হাওলাদার ও ডা. মোসলেম উদ্দিন লিখিতভাবে বলেছেন, সাহাবুদ্দিন তালুকদার স্বাধনিতা বিরোধী সংগঠনের সাথে জড়িত নয়। ১৯৭১ সালে সে রাজাকার বা লুটকারী ছিলোনা।