1

১৪ খাতে বাংলাদেশি দক্ষ কর্মী নেবে জাপান

জাপানের শ্রম বাজার খুলছে বাংলাদেশি কর্মীদের জন্য। দক্ষ কর্মীরা বিনাখরচে দেশটি যেতে পারবেন। কর্মী সঙ্কটে ভুগতে থাকা জাপান অভিবাসন নীতি শিথিল করে আটটি দেশ (সোর্স কান্ট্রি) থেকে কর্মী নিতে চুক্তি করেছিল। নবম দেশ হিসেবে এ তালিকায় যোগ দিয়েছে বাংলাদেশ।

মঙ্গলবার জাপানের রাজধানী টোকিওতে এ সংক্রান্ত সহযোগিতা স্মারক সই হয়েছে দুই দেশের মধ্যে। প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের বিজ্ঞপ্তিতে চুক্তি সইয়ের তথ্য নিশ্চিত করা হয়েছে।

এতে জানানো হয়েছে, ১৪ খাতে দক্ষ বাংলাদেশি কর্মী নেবে জাপান। বাংলাদেশের পক্ষে প্রবাসী কল্যাণ সচিব রৌনক জাহান এবং জাপানে পক্ষে দেশটির বিচার বিষয়ক মন্ত্রণালয় অধীন ইমিগ্রেশন সার্ভিস এজেন্সির কমিশনার মিজ সোকো সাসাকি সহযোগিতা স্মারকে সই করেন।

রক্ষণশীল অভিবাসন নীতির কারণে জাপানে গত বছর পর্যন্ত বিদেশি কর্মীদের কাজের সুযোগ ছিল সীমিত। জনসংখ্যা হ্রাস এবং বয়স্ক জনগোষ্ঠীর বৃদ্ধিতে কর্মী সঙ্কটে থাকা জাপানের সংসদ ২০১৮ সালে অভিবাসন নীতি শিথিল করে। চীন, ভিয়েতনাম, নেপাল, ইন্দোনেশিয়া, মিয়ানমার, ফিলিপাইন, থাইল্যান্ডসহ আটটি দেশ থেকে কর্মী নিতে শুরু করে। গত মে মাসে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জাপান সফরে বাংলাদেশ থেকে কর্মী নিতে আহ্বান জানান।

ব্র্যাকের অভিবাসন কর্মসূচির প্রধান শরিফুল হাসান বলেছেন, মধ্যপ্রাচ্যে এক লাখ কর্মী পাঠানোর চেয়ে জাপানে ১০ হাজার কর্মী পাঠানো লাভজনক হবে। সেখানকার কর্মপরিবেশ নিরাপদ ও উন্নত। কর্মীরা বেশি আয় করতে পারবেন। সরকারকে নিশ্চিত করতে হবে, কর্মী পাঠানোর প্রক্রিয়া যেনো স্বচ্ছ হয়। বিদেশ কর্মী পাঠানোর নামে অতীতের মতো অনিয়ম যেনো না হয়। এতে বাজার নষ্ট হতে পারে।

গত বছর জাপানের সংসদ আগামী পাঁচ বছরে তিন লাখ ৩৪ হাজার বিদেশি কর্মী নিয়োগের অনুমোদন দিয়েছে। দক্ষ শ্রমিকরা একটানা পাঁচ বছর থাকার সুযোগ পাবেন। পেশাজীবীরা (চিকিৎসক, প্রকৌশলী, গবেষক, শিক্ষাবিদ) যতদিন ইচ্ছা থাকতে পারবেন।

প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের তথ্যানুযায়ী, ২০১৭ সাল থেকে কারিগরি শিক্ষানবিশ হিসেবে স্বল্প সংখ্যক কর্মী জাপান যাচ্ছে। জনশক্তি, কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরোর (বিএমইটি) তথ্যানুযায়ী, গত বছর ১৬৩ জন কর্মী জাপান গিয়েছেন। চলতি বছরের জুলাই পর্যন্ত গিয়েছেন ১১৯ জন।

জাপানি সংস্থা ইন্টারন্যাশনাল ম্যানপাওয়ার ডেভেলপমেন্ট অর্গানাইজেনের (আইএম) সঙ্গে চুক্তির আওতায় সরকারিভাবে এসব কর্মী শিক্ষানবিস হিসেবে জাপান গিয়েছেন। পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে বিনাখরচে জাপানে কাজ করতে যাওয়ার সুযোগ পেয়েছেন তারা।

প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, বিভিন্ন জেলার ২৭টি প্রশিক্ষণ কেন্দ্রে ৪০ জন করে শিক্ষার্থীকে প্রশিক্ষণ দিচ্ছে বিএমইটি। চার মাস মেয়াদী প্রশিক্ষণের পর জাপানি ভাষা শিক্ষা পরীক্ষায় উত্তীর্ণরা জাপানের আইএম’র অধীনে চার মাস কারাগরি প্রশিক্ষণ শেষে বাংলাদেশি কর্মীরা শিক্ষানবিস হিসেবে জাপান যাওয়ার সুযোগ পান।

প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রলালয়ের বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে, দু’টি ক্যাটাগরিতে আগামী পাঁচ বছর কেয়ার ওয়ার্কার, বিল্ডিং ক্লিনিং ম্যানেজমেন্ট, মেশিন পার্টস ইন্ডাস্ট্রিজ, ইলেকট্রিক, ইলেক্ট্রনিক্স, অবকাঠামো নির্মাণ, জাহাজ শিল্প, গাড়ি শিল্প, কৃষিসহ ১৪টি খাতে কর্মী নেবে জাপান। তবে কর্মীদের বিশেষভাবে দক্ষ এবং জাপানি ভাষায় পারদর্শী হতে হবে। নিয়োগকারী দেশ তাদের জাপান যাওয়ার খরচ বহন করবে।

জনশক্তি রপ্তানিকারকদের সংগঠন বায়রার সভাপতি বেনজির আহমেদ এমপি সমকালকে বলেছেন, সরকারিভাবে প্রশিক্ষণের পাশাপাশি বেসরকারি পর্যায়ে প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা থাকলে আরো দক্ষ কর্মী তৈরি হবে। সরকার বেসরকারি প্রশিক্ষকদের অনুমতি দিলে তা সম্ভব। তখন জাপানের চাহিদা অনুযায়ী কর্মী পাঠানো সম্ভব হবে।

প্রবাসী কল্যাণ সচিবকে উদ্ধৃত করে মন্ত্রলালয়ের বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, সহযোগিতা স্মারক স্বাক্ষরের মাধ্যমে নির্দিষ্ট কিছু শর্ত সাপেক্ষে জাপানে দক্ষ কর্মী প্রেরণের সুযোগ সৃষ্টি হবে, যা দুই দেশের জন্যই লাভজনক।

চুক্তি সই অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন জাপানে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত রাবাব ফাতিমা, জাপানের পলিসি প্লানিং ডিভিশনের ইন্টারন্যাশনাল অ্যাফায়ারস দপ্তরের পরিচালক ইয়াসুয়াকি ইমাই, প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিব জাহাঙ্গীর আলম প্রমুখ।