1

হত্যা মামলার প্রধান আসামিকে অব্যাহতি : হাইকোর্টের বিষ্ময় প্রকাশ

বিচার শুরুর আগেই হত্যা মামলার প্রধান আসামিকে দেওয়া হয় অব্যাহতি। অভিযোগ গঠন করা হয় বাকি ৬৭ আসামির বিরুদ্ধে। নড়াইলের দায়রা জজ শেখ আব্দুল আহাদের দেওয়া এমন আদেশে বিস্ময় প্রকাশ করেছেন হাইকোর্ট। একইসঙ্গে অব্যাহতির আদেশের বিষয়ে ওই বিচারককে ৩০ জুলাইয়ের মধ্যে লিখিত ব্যাখ্যা দিতে বলা হয়েছে। পাশাপাশি তার বিচারিক ক্ষমতা কেন প্রত্যাহার করে নেওয়া হবে না তা জানতে চেয়ে রুল জারি করেছেন আদালত। বিচারপতি এম. ইনায়েতুর রহিম ও বিচারপতি মো. মোস্তাফিজুর রহমানের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্টের ডিভিশন বেঞ্চ আজ রবিবার এই আদেশ দেন। এছাড়া মামলার প্রধান আসামি মল্লিক মাঝহারুল ইসলাম ওরফে মাঝাকে দেওয়া অব্যাহতির আদেশ স্থগিত করে তাকে বিচারিক আদালতে আত্মসমর্পণের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

হাইকোর্ট বলেছেন, এ ধরনের গুরুতর অপরাধের সঙ্গে সম্পৃক্ত মামলার প্রধান আসামিকে কিভাবে অভিযোগ গঠন থেকে বাদ দেওয়া হয়? মামলার সাক্ষ্য-প্রমাণে যদি আসামি নিজেকে নির্দোষ প্রমাণ করতে সক্ষম হন তাহলে তিনি বিচার শেষে খালাস পাবেন। কিন্তু হত্যা মামলার বিচার শুরুর আগেই যদি অভিযোগ থেকে আসামিকে অব্যাহতি দেওয়া হয় তাহলে বিচারকের ভূমিকা নিয়ে জনগণের মাঝে প্রশ্ন উত্থাপিত হবেই। ওই বিচারকের তো বিচারিক ক্ষমতা থাকা উচিত নয়। ২০১৫ সালের ১০ ফেব্রুয়ারি নড়াইলের কালিয়া থানার চন্ডিনগর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পশ্চিম পার্শ্বে রাস্তায় পূর্ব শত্রুতার জেরে এনামুল শেখকে গুলি করে হত্যা করা হয়। কুপিয়ে জখম করা হয় আরো কয়েকজনকে। এ ঘটনায় পরদিন বাদী হয়ে মল্লিক মাঝহারুলসহ ৬৮ জনের বিরুদ্ধে দন্ডবিধির ৩০২/৩৪ ধারায় হত্যা মামলা দায়ের করেন নিহতের ভাই মো. নাজমুল হুদা। ২০১৭ সালের ৩০ জানুয়ারি ওই ৬৮ আসামির বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দাখিল করে পুলিশ। এই মামলায় আদালতে আত্মসমর্পণ করলে গত বছরের ২৯ নভেম্বর প্রধান আসামিকে জামিন দেন দায়রা জজ শেখ আব্দুল আহাদ। গত ১১ জুন মামলার অভিযোগ গঠনের ওপর শুনানি অনুষ্ঠিত হয়। শুনানিতে আসামিরা অভিযোগ গঠন থেকে অব্যাহতি চেয়ে আবেদন করেন। শুনানি শেষে বিচারক শেখ আব্দুল আহাদ প্রধান আসামিকে অভিযোগ গঠন থেকে অব্যাহিত দেন। অব্যাহতির আদেশে বিচারক বলেছেন, শুনানিকালে জানা যায়-আসামি মাঝা ঘটনার সময় গোপালগঞ্জের ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট হাসপাতালে সড়ক দুর্ঘটনায় আহত হয়ে চিকিৎসাধীন ছিলেন। সে এন.এস.আইয়ের একজন কর্মকর্তা। ঘটনার ২৭ ঘণ্টা পরে এজাহার দায়ের করা হয়েছে। অথচ বিলম্বে এজাহার দায়েরের কোন গ্রহণযোগ্য কারন উল্লেখ নেই। প্রকৃতপক্ষে আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে এই আসামিকে আসামি শ্রেণিভুক্ত করা হয়েছে অনৈতিক ও অবৈধ উপায়ে। তাই এই আসামির বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠনের সুস্পষ্ট অভিযোগ না থাকায় মামলার দায় থেকে অব্যাহতি প্রদান করা হলো। এই আদেশের বিরুদ্ধে হাইকোর্টে রিভিশন মামলা করেন মামলার বাদী।

আবেদনের পক্ষে আইনজীবী মোহাম্মদ হোসেন শুনানিতে বলেন, যে যুক্তি দেখিয়ে আসামিকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে তা ন্যায় সঙ্গত নয়। সাধারণত মামলার সাক্ষ্য-প্রমাণ বিচার বিশ্লেষণ শেষে রায়ে একজন বিচারক এ ধরনের যুক্তি তুলে ধরেন। আর সুরতহাল ও ময়নাতদন্ত রিপোর্টে ভিকটিমের বুকের বাম পার্শ্বে গুলি করার প্রমাণ উঠে এসেছে। রাষ্ট্রপক্ষে ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল নুসরাত জাহান ও সহকারি অ্যাটর্নি জেনারেল ইউসুফ মাহমুদ মোর্শেদ শুনানি করেন। শুনানি শেষে হাইকোর্ট আসামির অব্যাহতির আদেশ কেন বাতিল করা হবে না তা জানতে চেয়ে রুল জারি করে।