1

সুপ্রিমকোর্টের গুরুত্বপূর্ণ মামলার নথি গায়েব

সুপ্রিমকোর্ট থেকে একের পর এক নথি গায়েবের ঘটনায় সংকটে পড়েছেন বিচারপ্রার্থীরা। প্রশাসনের কাছে লিখিত অভিযোগ করলেও প্রতিকার মিলছে না।

মাঝে মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ মামলার নথি উধাও হয়ে যাওয়ায় সংশ্লিষ্টদের মধ্যে উদ্বেগ দেখা দিয়েছে। এর সঙ্গে এক শ্রেণির দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তা-কর্মচারীর সম্পৃক্ততা রয়েছে।

বিশেষ সেকশনের কর্মচারীরা ইচ্ছে করে নথি লুকিয়ে রাখেন বলে ভুক্তভোগীদের অভিযোগ। বিষয়টি হাইকোর্টের একাধিক বেঞ্চের নজরেও এসেছে।

আদালত সূত্র জানায়, এর আগেও সুপ্রিমকোর্টে নথি গায়েবের বেশ কয়েকটি ঘটনা ঘটেছে। কয়েকটি ঘটনায় তদন্ত কমিটি করে দোষী ব্যক্তিদের শাস্তিও দেয়া হয়। এদিকে দেশের সর্বোচ্চ আদালত থেকে নথি গায়েবের ঘটনায় উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন আইন বিশেষজ্ঞরা। তারা বলেন, নথি গায়েব মারাত্মক অপরাধ।

এ ব্যাপারে প্রশাসনকে তৎপর হতে হবে। জড়িতদের বিরুদ্ধে কঠোর শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নিতে হবে। এ নিয়ে সাবেক আইনমন্ত্রী ব্যারিস্টার শফিক আহমেদ বলেন, সুপ্রিমকোর্টে প্রায়ই মামলার নথি গায়েবের কথা শোনা যায়। এটা রোধ করা দরকার। এ জন্য প্রশাসনের নজরদারি বাড়াতে হবে।

সুপ্রিমকোর্ট বারের সম্পাদক ব্যারিস্টার মাহবুব উদ্দিন খোকন বলেন, অনেক সময় নথি আদালতে পাওয়া যায় না। কিছু অর্থ খরচ করলেই সেটি আবার পাওয়া যায়। এটা রোধ হওয়া দরকার। আমরা একটি কমিটিও করে দিয়েছি। এ বিষয়ে কমিটি প্রতিবেদনও জমা দিয়েছে। সে অনুযায়ী পদক্ষেপ নিলে সংকট কিছুটা লাঘব হতে পারে।

জানা যায়, টাঙ্গাইলের একেএম সাজেদুল ইসলামসহ ছয়জন ১৯৯৯ সাল থেকে যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধার ভাতা পান। ২০১৬ সালে তাদের সেই ভাতা বন্ধ করে দেয় মন্ত্রণালয়। এ আদেশের বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে ২০১৭ সালের ১০ আগস্ট হাইকোর্টে রিট করেন তারা। রিটের শুনানি শেষে হাইকোর্টের একটি বেঞ্চ রুল জারি করেন।

পরবর্তী রুল শুনানির জন্য চলতি বছরের ২১ জানুয়ারি বিচারপতি এফআরএম নাজমুল আহাসান ও বিচারপতি কামরুল কাদেরের হাইকোর্ট বেঞ্চের কার্যতালিকায় মামলাটি আসে।

কিন্তু ওইদিন মামলার নথি না পাওয়ায় শুনানি অনুষ্ঠিত হয়নি। পরে সেকশনে গিয়েও নথিটি পাওয়া যায়নি। বাধ্য হয়ে নথির সন্ধান চেয়ে সুপ্রিমকোর্টের রেজিস্ট্রার জেনারেল বরাবর ২ ফেব্রুয়ারি একটি আবেদন করেন সাজেদুল ইসলাম। ৩০ এপ্রিল হাইকোর্টের সংশ্লিষ্ট বেঞ্চে বিষয়টি ফের নজরে আনেন রিটকারীর আইনজীবী অ্যাডভোকেট শেখ রফিকুল ইসলাম।

আদালত সেকশন কর্মকর্তাদের কাছে নথির বিষয়ে রিপোর্ট চেয়ে ৫ মে সেটি আদেশের জন্য রাখেন। ওই তারিখেও নথিটি হাজির করতে পারেননি সেকশন কর্মকর্তারা।

আইনজীবী শেখ রফিকুল ইসলাম জানান, নথির খোঁজে রেজিস্ট্রার জেনারেল কার্যালয়ে লিখিত অভিযোগ দেয়া হয়। সম্প্রতি প্রধান বিচারপতির নির্দেশে বিকল্প ব্যবস্থায় আরেকটি নথি তৈরি করা হলেও এখনও শুনানির জন্য সংশ্লিষ্ট বেঞ্চে আসেনি।

নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনের মামলায় মেহেরপুরের নাফারুল ওরফে নাফার যাবজ্জীবন সাজা হয়। গত বছরের ১০ ডিসেম্বর হাইকোর্ট থেকে ছয় মাসের জামিন নেন তিনি।

পরে জামিনের মেয়াদ বৃদ্ধির জন্য বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিম ও বিচারপতি মো. মোস্তাফিজুর রহমানের হাইকোর্ট বেঞ্চে (ক্রিমিনাল মিস কেস ৬২৯৬৯/২০১৮) আবেদন করেন। এটি ২২ মে শুনানির জন্য কার্যতালিকায় আসে। কিন্তু নথি না আসায় জামিন শুনানি হয়নি। এ নিয়ে জামিন আবেদনটি এর আগে ছয়বার কার্যতালিকায় এসেছে।

কিন্তু নথির অভাবে জামিন শুনানি হচ্ছে না। সর্বশেষ এটি ২৪ জুলাই কার্যতালিকায় আসে। কিন্তু নথি না পাওয়ায় শুনানি হয়নি। নাফারুলের আইনজীবী শেখ একেএম মনিরুজ্জামান কবির হাইকোর্ট বিভাগের রেজিস্ট্রার মো. গোলাম রব্বানীর কাছে মৌখিকভাবে অভিযোগ করেন।

এ বিষয়ে মঙ্গলবার রেজিস্ট্রার গোলাম রব্বানী বলেন, বিষয়টি জানতে পেরে সংশ্লিষ্ট সেকশনের দায়িত্বপ্রাপ্ত সহকারী রেজিস্ট্রার জাকির হোসেন পাটোয়ারীকে যথাযথ ব্যবস্থা নেয়ার জন্য নির্দেশ দেয়া হয়েছে। তিনি আরও বলেন, কোনো অভিযোগ এলে জরুরি ভিত্তিতে ব্যবস্থা নেয়া হয়।

একটি রাজনৈতিক মামলায় পিরোজপুরের সাখাওয়াত খান কারাগারে যান। হাইকোর্টের একটি বেঞ্চ থেকে গত বছরের এপ্রিলে ছয় মাসের অন্তর্বর্তীকালীন জামিন নেন তিনি।

পরবর্তী সময়ে ওই বছরের নভেম্বরে বিচারপতি মো. হাবিবুল গণি ও মো. বদিউজ্জামানের হাইকোর্ট বেঞ্চ থেকে তিনি স্থায়ী জামিন পান। এরই মধ্যে সেকশন থেকে এ মামলার নথি (ক্রিমিনাল মিস কেস নং ২২৮০০/২০১৮) গায়েব হয়ে গেছে।

এ মামলার আইনজীবী ব্যারিস্টার গালিব আমিদ বলেন, ছয় মাস ধরে নথি না পাওয়ায় জামিন আদেশের কপি বিচারিক আদালতে পাঠানো যাচ্ছে না। সম্প্রতি বিষয়টি ফের হাইকোর্টের নজরে আনলে আদালত রেজিস্ট্রার জেনারেলকে অবহিত করার পরামর্শ দেন।

পরে রেজিস্ট্রার জেনারেলকে লিখিতভাবে জানানো হলেও কোনো প্রতিকার পাওয়া যায়নি।