1

শিক্ষিকাকে মারধর মামলায় পেড়িখালী ইউপি চেয়ারম্যান বাবুলের দেড় বছরের কারাদন্ড

বাগেরহাটে ভোটার তালিকা হালনাগাদ কার্যক্রমে দায়িত্বরত অবস্থায় এক শিক্ষিকাকে মারধরের ঘটনায় দায়ের করা মামলায় রামপাল উপজেলার পেড়িখালী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান রফিকুল ইসলাম বাবুলকে দেড় বছরের কারাদন্ড দিয়েছে আদালত। বৃহস্পতিবার দুপুরে বাগেরহাটের সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিট্রেট রাবেয়া বেগম এই আদেশ প্রদান করেন। একই সাথে আদালত তাকে ৩ হাজার টাকা জরিমানা অনাদায়ে আরো তিন মাসের কারাদন্ড প্রদান করে। এসময় আসামী বাবুল কাঁঠগড়ায় উপস্থিত ছিল। আদালত ১০ জন স্বাক্ষীর সাক্ষ্য গ্রহন করে। বাগেরহাটে সহকারী পাবলিক প্রসিকিউটর খান নজরুল ইসলাম এই তথ্য নিশ্চিত করেছেন।

 

মামলার বিবরনে জানা যায়, ২০১৪ সালের ভোটার তালিকা হালনাগাদের কার্যক্রমে তথ্যসংগ্রহকালে রামপাল উপজেলার বড় কাটালি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষিকা বেগম খাদিজা ইয়াসমিন ও তার স্বামী মোঃ রবিউল আলম খোকনকে ওই বছরের ১৪ জুন পেড়িখালী ইউপি চেয়ারম্যান রফিকুল ইসলাম বাবুল বেধড়ক মারধর করেন। এ ঘটনায় তথ্য সংগ্রহকারী বেগম খাদিজা ইয়াসমিনের স্বামী মোঃ রবিউল আলম অভিযোগ করলে ওই বছরের ১০ জুলাই রামপাল থানায় মামলা দায়ের করা হয়।

এরপর চেয়ারম্যান রফিকুল ইসলাম বাবুল রামপাল থানায় প্রভাব বিস্তার করে তদন্ত কাজে বাধা সৃষ্টি ও শিক্ষিকা বেগম খাদিজা ইয়াসমিন ও তার স্বামী মোঃ রবিউল আলম খোকনকে নানাভাবে লাঞ্ছিত করছেন বলে তারা প্রধান নির্বাচন কমিশনার বরাবর লিখিত অভিযোগ করেন।
এ অভিযোগের প্রক্ষিতে নির্বাচন কমিশন ২০১৪ সালের ২৩ সেপ্টেম্বর চেয়ারম্যান রফিকুল ইসলাম বাবুলের বিরুদ্ধে আইন মোতাবেক কঠোর ব্যবস্থা গ্রহনের নির্দেশ দেয়। একই সাথে রামপাল থানায় দায়েরকৃত মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তাকে অব্যাহতি দিয়ে নতুন তদন্তকারী কর্মকর্তা নিয়োগ করার অনুরোধ জানিয়ে স্থানীয় সরকার বিভাগ ও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জ্যেষ্ঠ সচিবদের এ নির্দেশনার চিঠি দেন তৎকালিন নির্বাচন কমিশনের (ইসি) উপ-সচিব মু. আবদুল অদুদ। পরে তৎকালিন বাগেরহাট পুলিশ সুপারের নির্দেশে এই আলোচিত মামলাটি জেলা গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) নিকট হস্তান্তর করা হয়।

তথ্যসংগ্রহকারী শিক্ষিকার স্বামী ও মামলার বাদী মোঃ রবিউল আলম খোকন জানান, পেড়িখালী ইউপি চেয়্যারম্যান রফিকুল ইসলাম বাবুল বাবুল স্থানীয় মজীদ মীর নামের এক ভোটারের স্থান পরিবর্তনের জন্য ভোটার তালিকা হালনাগাদ কাজে নিয়োজিত শিক্ষিকা তার স্ত্রী খাদিজাকে নির্দেশ দেয়। এ বিয়য়ে ওই শিক্ষিকা চেয়ারম্যানকে তার সীমাবদ্ধতার কথা উল্লে¬খ করে ভোটার তালিকায় নাম স্থানান্তর করার ক্ষমতা নির্বাচন অফিসের জানিয়ে তাকে নির্বাচন অফিসে যোগাযোগ করার অনুরোধ করলে চেয়ারম্যান ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠে। এরপর গত ১৪ জুন দুপুরে চেয়ারম্যান খোকনের দোকানে ঢুকে খাদিজাকে কিল ঘুষি ও লাথি শুরু করে। একপর্যায়ে স্ত্রীকে বাঁচাতে তিনি এগিয়ে গেলে তাকেও চেয়ারম্যান বেধড়ক মারপিট শুরু করে। এ সময় শিক্ষিকা খাদিজা ইয়াসমিন দৌড়ে পাশ্ববর্তী রেজাউলের বাড়িতে গেলে সেখানে ঢুকে চেয়্যারম্যান পূনরায় মারপিট করে। পরে স্থানীয়রা তাদের গুরুতর অবস্থায় উদ্ধার করে খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করে। পরে চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে রামপাল থানায় মামলা দায়ের করা হয়।

রায় ঘোষনার পর তিনি বলেন, এই রায় আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা হয়েছে। একজন প্রভাবশালী লোকের বিরুদ্ধে সংগ্রাম করে মামলায় বিজয়ী হতে তাকে অনেক কষ্ট করতে হয়েছে।