1

শিক্ষিকাকে মারধর মামলায় দন্ডপ্রাপ্ত : রামপালের পেড়ীখালী ইউপি চেয়ারম্যান বাবুল বরখাস্ত

বাগেরহাটে ভোটার তালিকা হালনাগাদ কার্যক্রমে দায়িত্বরত অবস্থায় এক শিক্ষিকাকে মারধরের মামলায় দন্ডপ্রাপ্ত রামপাল উপজেলার পেড়িখালী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান রফিকুল ইসলাম বাবুলকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে। স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের স্থানীয় সরকার বিভাগের ( ইপ-১ অধিশাখা) উপসচিব মোঃ ইফতেখার আহম্মেদ চৌধুরী সাক্ষরিত এক প্রজ্ঞাপনে তাকে এই আদেশ প্রদান করা হয়। ৯ সেপ্টেম্বর সাক্ষর হওয়া প্রজ্ঞাপনের কপি সাংবাদিকের হাতে পৌছায় রোববার (১৫ সেপ্টেম্বর) বিকালে। একই সাথে তাকে কেন চুড়ান্ত ভাবে অপসারণ করা হবে না তার কারণ দর্শাতে বলা হয়েছে।

ওই প্রজ্ঞাপনে উল্লেখ করা হয়, পেড়িখালী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান রফিকুল ইসলাম বাবুলকে বাগেরহাট সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিট্রেট আদালত-২ জিআর৯৪/২০১৪ নং (রামপাল) মামলায় দন্ড বিধির ৩৩২ ধারায় দোষী সাব্যস্থ করে ১ বছর ৬ মাসের সশ্রম কারাদন্ড এবং তিন হাজার টাকা অর্থ দন্ড অনাদায়ে আরো ৩০ দিন সশ্রম কারাদন্ডে দন্ডিত করায় জন¯^ার্থে তার দ্বারা ইউনিয়ন পরিষদের ক্ষমতা প্রয়োগ প্রশাসনিক দৃষ্টিকোণে সমীহীন নয় মর্মে সরকার মনে করে। সেহেতু রফিকুল ইসলাম বাবুল কতৃক সংঘটিত অপরাধমূলক কার্যক্রম পরিষদসহ জন¯^ার্থের পরিপন্থী বিবেচনায় স্থানীয় সরকার (ইউনিয়ন পরিষদ) আইন ২০০৯ এর ৩৪(১) ধারা অনুযায়ী উল্লিখিত ইউপি চেয়ারম্যানকে তাঁর ¯^ীয় পদ হতে সাময়িক বহিস্কার করা হলো।
একই সাথে তাকে কেন চুড়ান্ত ভাবে অপসারণ করা হবে না তার কারণ দর্শাণোর নোটিশ দেয়া হয়েছে। পত্রপ্রাপ্তির ১০ দিনের মধ্যে জেলা প্রশাসকের মাধ্যমে এই কারণ দর্শাতে হবে।
২০১৪ সালের ভোটার তালিকা হালনাগাদের কার্যক্রমে তথ্যসংগ্রহকালে রামপাল উপজেলার বড় কাটালি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষিকা বেগম খাদিজা ইয়াসমিন ও তার স্বামী মোঃ রবিউল আলম খোকনকে ওই বছরের ১৪ জুন পেড়িখালী ইউপি চেয়ারম্যান রফিকুল ইসলাম বাবুল বেধড়ক মারধর করেন। এ ঘটনায় তথ্য সংগ্রহকারী বেগম খাদিজা ইয়াসমিনের ¯^ামী মোঃ রবিউল আলম অভিযোগ করলে ওই বছরের ১০ জুলাই রামপাল থানায় মামলা দায়ের করা হয়।
নির্বাচন কমিশন ২০১৪ সালের ২৩ সেপ্টেম্বর চেয়ারম্যান রফিকুল ইসলাম বাবুলের বিরুদ্ধে আইন মোতাবেক কঠোর ব্যবস্থা গ্রহনের নির্দেশ দেয়। একই সাথে রামপাল থানায় দায়েরকৃত মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তাকে অব্যাহতি দিয়ে নতুন তদন্তকারী কর্মকর্তা নিয়োগ করার অনুরোধ জানিয়ে স্থানীয় সরকার বিভাগ ও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জ্যেষ্ঠ সচিবদের এ নির্দেশনার চিঠি দেন তৎকালিন নির্বাচন কমিশনের (ইসি) উপ-সচিব মু. আবদুল অদুদ। পরে তৎকালিন বাগেরহাট পুলিশ সুপারের নির্দেশে এই আলোচিত মামলাটি জেলা গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) নিকট হস্তান্তর করা হয়।
আদালত ১০ জন স্বাক্ষীর সাক্ষ্য গ্রহন ও দীর্ঘ শুনানী শেষে গত ১ আগষ্ট বাগেরহাটের সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিট্রেট রাবেয়া বেগম পেড়িখালী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান রফিকুল ইসলাম বাবুলকে দেড় বছরের কারাদন্ড প্রদান করেন। একই সাথে আদালত তাকে ৩ হাজার টাকা জরিমানা অনাদায়ে আরো তিন মাসের কারাদন্ড প্রদান করে। পরে এদিন তাকে জেল হাজতে প্রেরণ করা হয়ে।
এবিষয়ে তথ্যসংগ্রহকারী শিক্ষিকার স্বামী ও মামলার বাদী মোঃ রবিউল আলম খোকন জানান, পেড়িখালী ইউপি চেয়্যারম্যান রফিকুল ইসলাম বাবুল বাবুল স্থানীয় মজীদ মীর নামের এক ভোটারের স্থান পরিবর্তনের জন্য ভোটার তালিকা হালনাগাদ কাজে নিয়োজিত শিক্ষিকা তার স্ত্রী খাদিজাকে নির্দেশ দেয়। এ বিয়য়ে ওই শিক্ষিকা চেয়ারম্যানকে তার সীমাবদ্ধতার কথা উল্লেখ করে ভোটার তালিকায় নাম স্থানান্তর করার ক্ষমতা নির্বাচন অফিসের জানিয়ে তাকে নির্বাচন অফিসে যোগাযোগ করার অনুরোধ করলে চেয়ারম্যান ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠে। এরপর গত ১৪ জুন দুপুরে চেয়ারম্যান খোকনের দোকানে ঢুকে খাদিজাকে কিল ঘুষি ও লাথি শুরু করে। একপর্যায়ে স্ত্রীকে বাঁচাতে তিনি এগিয়ে গেলে তাকেও চেয়ারম্যান বেধড়ক মারপিট শুরু করে। এ সময় শিক্ষিকা খাদিজা ইয়াসমিন দৌড়ে পাশ্ববর্তী রেজাউলের বাড়িতে গেলে সেখানে ঢুকে চেয়্যারম্যান পূনরায় মারপিট করে। পরে স্থানীয়রা তাদের গুরুতর অবস্থায় উদ্ধার করে খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করে। পরে চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে রামপাল থানায় মামলা দায়ের করা হয়।
তিনি বলেন, এছাড়া ওই চেয়ারম্যান কয়েকজন সরকারী কর্মকর্তা, ড্রেজার মাস্টার, ডাক্তার, মহিলা ইউপি সদস্যকে মারপিট করেছেন। তিনি কিভাবে জনপ্রতিনিধি থাকেন। এমন লোককে স্থায়ী ভাবে বরখাস্ত করা উচিত।