1

রোহিঙ্গা ক্যাম্পে নিষিদ্ধ ৪১ এনজিও বহাল তবিয়তে

কক্সবাজারের উখিয়া ও টেকনাফের রোহিঙ্গা ক্যাম্পগুলোতে ১৩০টির বেশি দেশি-বিদেশি এনজিও কাজ করছে। এরমধ্যে বিভিন্ন প্রকল্পে কর্মরত ৪১টি এনজিওর কার্যক্রম এনজিও বিষয়ক ব্যুরো নিষিদ্ধ করলেও ওই ৪১ এনজিওর অধিকাংশ বহাল তবিয়তেই রয়েছে।

রোহিঙ্গা ক্যাম্পগুলোতে তারা তাদের কর্মকান্ড চালিয়ে যাচ্ছে আগের মতোই। তবে দেশি-বিদেশি কিছু এনজিওর কর্মকান্ডের ওপর তদন্ত শুরু করেছে সরকার। তদন্তে মিয়ানমারে না ফেরার জন্য রোহিঙ্গাদের ইন্ধন দেওয়া হচ্ছে কি না, সম্প্রতি রোহিঙ্গাদের মহাসমাবেশ আয়োজনে অর্থ জোগান বা অন্যান্য সহযোগিতা করা হয়েছে কি না এবং রোহিঙ্গা শিবিরে রাষ্ট্রবিরোধী কোনো কর্মকা- হচ্ছে কি না তা খতিয়ে দেখছে গোয়েন্দা সংস্থা। এই তিনটি প্রধান অভিযোগে স্থানীয় প্রশাসন ও গোয়েন্দারা বেশ কিছু এনজিওর ওপর তদন্ত পরিচালনা করছেন বলে জানিয়েছেন কর্মকর্তারা। সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, ইতিপূর্বে রোহিঙ্গাদের মধ্যে এনজিওগুলোর ত্রাণ বিতরণে অনিয়ম ও দুর্নীতি তুলে ধরে কক্সবাজার জেলা প্রশাসন গত বছরের শুরুতে মন্ত্রিপরিষদ সচিব, প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব, এনজিও ব্যুরোর ডিজিসহ সংশ্লিষ্টদের অবহিত করে প্রতিবেদন পাঠায়। গত বছর আগস্টের প্রথম দিকে গোয়েন্দা সংস্থার প্রতিবেদনের ওপর ভিত্তি করে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে এনজিও ব্যুরোকে ৪১টি এনজিওর তৎপরতায় আপত্তি জানিয়ে চিঠি দেওয়া হয়। এর ফলে ওই সব এনজিওর কার্যক্রম রোহিঙ্গা ক্যাম্পে নিষিদ্ধ করে এনজিও ব্যুরো। কিন্তু নিষিদ্ধ করার পরও সেসব এনজিও সংস্থার অধিকাংশ তাদের কর্মকা- ও প্রকল্পকাজ অব্যাহত রাখে। নিষিদ্ধ-ঘোষিত এনজিওর তালিকায় রয়েছে- ফ্রেন্ডশিপ, এনজিও ফোরাম ফর পাবলিক হেলথ, আল মারকাজুল ইসলাম, স্মল কাইন্ডনেস বাংলাদেশ, ঢাকা আহ্্ছানিয়া মিশন, গ্রামীণ কল্যাণ, অগ্রযাত্রা, নেটওয়ার্ক ফর ইউনিভার্সাল সার্ভিসেস অ্যান্ড রুরাল অ্যাডভান্সমেন্ট, আল্লামা আবুল খায়ের ফাউন্ডেশন, ঘরনী, ইউনাইটেড সোশ্যাল অ্যাডভান্সমেন্ট, বুরো-বাংলাদেশ, এসএআর, আসিয়াব, এসিএলএবি, এসডব্লিউএবি, ন্যাকম, এফডিএসআর, জমজম বাংলাদেশ, আমান, ওব্যাট হেলপার্স, হেল্প কক্সবাজার, শাহবাগ জামেয়া মাদানিয়া কাসিমুল উলুম অরফানেজ, ডেভেলপমেন্ট ইনস্টিটিউট ফর সোশ্যাল অ্যান্ড হিউম্যান অ্যাফেয়ার্স, লিডার্স, লোকাল এডুকেশন অ্যান্ড ইকোনমিক ডেভেলপমেন্ট অর্গানাইজেশন, অ্যাসোসিয়েশন অব জোনাল অ্যাপ্রোচ ডেভেলপমেন্ট, হিউম্যান এইড অ্যান্ড রিলিফ অর্গানাইজেশন, বাংলাদেশ খেলাফত যুব মজলিশ, হোপ ফাউন্ডেশন, ক্যাপ আনামুর, টেকনিক্যাল অ্যাসিস্ট্যান্স ইনকরপোরেশন, গরিব, এতিম ট্রাস্ট ফাউন্ডেশনসহ ৪১টি এনজিও। উখিয়ার পালংখালী ইউপি চেয়ারম্যান গফুর উদ্দিন চৌধুরী বলেন, এনজিওগুলোর অনিয়ম, দুর্নীতি সীমা অতিক্রম করেছে। বিভিন্ন প্রকল্পের নামে রোহিঙ্গা যুবক-যুবতীদের তারা নগদ সহায়তা দিচ্ছে। রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীকে নানা প্রশিক্ষণ ও ওরিয়েন্টেশনের নামে এনজিওগুলো স্থানীয় জনগোষ্ঠীর বিরুদ্ধে উসকানি দিয়ে পরিস্থিতি অস্থিতিশীল করে তুলছে। রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন সংগ্রাম কমিটির সভাপতি ও উখিয়া উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান অধ্যক্ষ হামিদুল হক চৌধুরী বলেন, এনজিও এবং রোহিঙ্গাদের কর্মকান্ডে আমরা গভীর উদ্বিগ্ন। ২২ আগস্ট রাতেও রোহিঙ্গারা টেকনাফের একজন যুবলীগ নেতাকে ধরে নিয়ে গিয়ে খুন করেছে।

উখিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. নিকারুজ্জামান চৌধুরী বলেন, রোহিঙ্গাদের নিয়ে কাজ করা এনজিওগুলোর বিভিন্ন কর্মকা- নিয়ে নানা ধরনের অভিযোগ পাওয়া যাচ্ছে। সেগুলোর তদন্ত চলছে। এনজিও বিষয়ক ব্যুরোর মহাপরিচালক কে এম আবদুস সালাম বলেন, পুরনো একটি তালিকায় ৪১টি এনজিওর বিরুদ্ধে নিয়মভঙ্গসহ নানা তৎপরতা চালানোর যে অভিযোগ এসেছে, সেগুলো খতিয়ে দেখা হচ্ছে।