1

রাজশাহীর আওয়ামী লীগ নেতার নেশা ও পেশা সম্পত্তি দখল

মুক্তিযোদ্ধা, অসহায় সংখ্যালঘু, ক্ষমতাসীন দলের নেতা কর্মী কেউ রক্ষা নেই তাদের দখলবানিজ্যের কবল থেকে। আলোচিত চরিত্রের নাম ডাবলু সরকার আর আব্দুল হামিদ সরকার টেকন। এক ভাই মহানগর আওয়ামী লীগ নেতা অন্য এক ভাই সিটি করর্পোরেশনের ওয়ার্ড কাউন্সিলর।

মানুষের ভিটে বাড়ি বা ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে তৃতীয় পক্ষকে দিয়ে সংকট সৃষ্টি করে মিমাংসার নামে তা নাম মাত্র মূল্য দিয়ে নিজেদের করে নেয়াই এখন এদের মূল নেশা ও পেশায় পরিণত হয়েছে। ডাবলু সরকার ২০১৪ সালে রাজশাহী মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক পদ পাওয়ার পরই বিস্তার ঘটে এই রমরমা বাণিজ্যের। এখন তারা শত কোটি টাকার সম্পত্তির মালিক!

কয়েক বছর আগে বিআরটিসি বাসের টিকেট বিক্রি করা ডাবলু সরকার এখন রাজশাহী শহরের দখলের সমার্থক শব্দ। অভিযোগ আছে তার পিতা আব্দুর রশিদ সরকারের মুক্তিযুদ্ধকালীন ভূমিকা নিয়েও।

শুধু দুই একজন সংখ্যালঘুই নয়, সামাজিক বা পারিবারিকভাবে দুর্বল আওয়ামী লীগ কর্মীরাও রেহাই পায় না ডাবলু সরকার ও তার পরিবারের দখল বাণিজ্য থেকে। রাজশাহী আওয়ামী লীগের ‘বিশিষ্ট কর্মী’ শাহজাহান মামা তার পৈত্রিক ভিটা রক্ষা করেছেন দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের কাছে নালিশ দিয়ে।

এই আওয়ামী লীগ নেতার দখল থেকে রক্ষা পেত সম্প্রতি প্রধানমন্ত্রীসহ সরকারের বিভিন্ন মহলে আবেদন পাঠিয়েছেন মুক্তিযোদ্ধারা। বাড়ির পেছনের ছোট একটু জমি কিনে রাজশাহীর পূঁথিঘর লাইব্রেরীর মালিক শক্তিভূতির বাড়ী নামমাত্র মূল্যে ভাগ্নে মীর ইশতিয়াক আহমেদ লেমনের স্ত্রী ফারজানা ইয়াসমিন ও আরিফুল ইসলাম সম্রাটে সাথে যৌথ মালিকানায় রেজিস্ট্রি করে নেন ডাবলু সরকার।

ডাবলু সরকারের বড় দুই ভাই আব্দুল হামিদ সরকার টেকন ও সাবু সরকার জিয়াউর রহমানের শাসনামলে চোরাচালানে জড়িয়ে যান। চোরাচালান পেশার সমালোচনা করায় হোটেল ব্যবসায়ী গৌতম ঘোষকে (১৮) আলুপট্টি মোড়েই প্রকাশ্যে কুপিয়ে হত্যা করা হয়। এরপর থেকেই টেকন সাবু শহরের প্রকাশ্য খুনি হিসেবেও পরিচিত বলে স্থানীয়রা জানায়।

নগরীর কুমারপাড়ায় সখিনা বোডিং এর জায়গা দখল নিতে সাভারের হাসিনা দৌলাকে প্রতিবন্ধকতা তৈরি করে ডাবলু, টেকন আর সাবু। পরে নামমাত্র মূল্যে তিনি তা তাদের কাছে বিক্রি করেন। সেই জমিতেই হচ্ছে ১৬ তলা উচু সরকার টাওয়ার। শিবু দায়িনি, পরিধেয় টেইলার্সের খোকন, রাজশাহী বেতারের বেহালা বাধক রঘুনাথ দাস, সুগারমিলের এক কর্মচারী, ডাবলু সরকারের পাশের বাড়ীর সংখ্যালঘু মাছচাষী পাঁচন সরকার, আইনজীবী কুনাল সরকার, রঘুনাথ, শান্তি ঘোষ, শম্ভু ও রিতা দাসসহ আরো অনেক পরিবার এই দখলবাজদের হাতে হারিয়েছেন বসত ভিটাসহ বহু সম্পত্তি।

ডাবলু সরকারের পিতা আব্দুর রশিদকে কুখ্যাত রাজাকার দাবি করে রাজশাহীর মুক্তিযোদ্ধারা প্রয়োজনীয় ব্যবস্থার জন্য আবেদন করেছেন প্রধানমন্ত্রীর কাছে।

সংখ্যালঘু আওয়ামী লীগ নেতা এবং মুক্তিযুদ্ধাদের ভিটেবাড়ি দখলে অভিযোগের বিষয়ে রাজশাহী মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ডাবলু সরকার বলেন, দলের সম্মেলনকে সামনে রেখে তার বিরুদ্ধে একটি মহলের অপপ্রচার এসব। ষড়যন্ত্রের শিকার বলেও দাবি করেন রাজশাহী মহানগরের এই নেতা।