শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ০২:০৭ অপরাহ্ন




যে কারণে সাক্ষী থেকে আসামি মিন্নি

বরগুনা প্রতিনিধি
  • প্রকাশ: মঙ্গলবার, ৩ সেপ্টেম্বর, ২০১৯

বরগুনায় আলোচিত রিফাত শরীফ হত্যার ঘটনায় তার স্ত্রী আয়শা সিদ্দিকা মিন্নিকে সাত নম্বর আসামি করে ২৪ জনের বিরুদ্ধে গত রোববার বরগুনার জ্যেষ্ঠ বিচারিক আদালতে চার্জশিট (অভিযোগপত্র) দাখিল করেছে পুলিশ। সোমবার বিচারক চার্জশিট দেখে রেখে দিয়েছেন। মামলার মূল নথি জেলা জজ আদালতে থাকায় চার্জশিটের অনুলিপি বাইরে প্রকাশ করা হয়নি। তবে মামলার প্রধান ও প্রত্যক্ষ সাক্ষী মিন্নিকে আসামি করার পেছনে যেসব কারণ রয়েছে, তার কিছুটা জানা গেছে পুলিশের ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তার মাধ্যমে।

জেলা পুলিশের ঊর্ধ্বতন ওই কর্মকর্তা জানান, মিন্নিকে রিফাত শরীফ হত্যা মামলায় অভিযুক্ত করার পেছনে একাধিক কারণ রয়েছে। যার মধ্যে প্রথমত মিন্নি তার স্বামী রিফাত হত্যার ঘটনায় সম্পৃক্ততার কথা স্বীকার করে আদালতে জবানবন্দি দিয়েছেন। তা ছাড়া মামলায় এজাহারভুক্ত দুই নম্বর আসামি রিফাত ফরাজী, তার ভাই তিন নম্বর আসামি রিশান ফরাজী, ছয় নম্বর আসামি রাব্বি আকন এবং ১২ নম্বর আসামি টিকটক হৃদয় আদালতে দেওয়া স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিতে মিন্নির সম্পৃক্ততার কথা স্বীকার করেছে।

তিনি আরও জানান, রিফাত হত্যায় নয়ন বন্ডের সঙ্গে পরিকল্পনায় ছিল মিন্নি। ২৬ জুন ঘটনার দু’দিন আগে রিফাত শরীফ হেলাল নামে তার এক বন্ধুর মোবাইল ফোন ছিনিয়ে নেয়। হেলাল রিফাত শরীফের বন্ধু হলেও নয়ন বন্ডের খুব ঘনিষ্ঠ। তাই ছিনিয়ে নেওয়া মোবাইল ফোন উদ্ধারের জন্য নয়ন বন্ড দ্বারস্থ হয় মিন্নির। নয়ন বন্ডের অনুরোধে হত্যাকাণ্ডের দু’দিন আগে রাতে সেই ফোন রিফাত শরীফের কাছ থেকে উদ্ধার করে মিন্নি। কিন্তু এ ফোন উদ্ধার করতে গিয়ে রিফাত শরীফের মারধরের শিকার হন মিন্নি। পরে হত্যাকাণ্ডের আগের দিন নয়নের সঙ্গে দেখা করে মিন্নি সেই ফোন তার হাতে তুলে দেন। এ সময় মিন্নি তার স্বামী রিফাত শরীফের হাতে যে মারধরের শিকার হয়েছেন তার প্রতিশোধ নিতে বলেন নয়নকে। এরপর ওইদিন বিকেলে বরগুনা কলেজ মাঠের শহীদ মিনার প্রাঙ্গণে নয়ন বন্ড ও তার বাহিনীর সঙ্গে রিফাত শরীফকে মারধরের বিষয়ে সভা করেন মিন্নি। তা ছাড়া রিফাত শরীফ হত্যাকাণ্ডের আগে এবং পরে নয়ন বন্ডের সঙ্গে মিন্নির একাধিকবার মোবাইল ফোনে কথা হয়েছে।

পুলিশ কর্মকর্তা জানান, হামলার আগ মুহূর্তে রিফাত শরীফের সঙ্গে মিন্নি কলেজ থেকে বের হলেও পরিকল্পনা অনুযায়ী কলেজের সামনে তাকে মারধরের কোনো প্রস্তুতি দেখতে না পেয়ে সময়ক্ষেপণ করেন। এর জন্য মিন্নি রিফাত শরীফের বাধা উপেক্ষা করে আবার কলেজে প্রবেশ করেন। এর কিছুক্ষণ পরই নয়ন বন্ড বাহিনীর বেশ কয়েকজন সদস্য একত্র হয়ে রিফাত শরীফকে আটক করে মারধর করতে করতে কলেজের সামনের রাস্তা দিয়ে পূর্বদিকে নিয়ে যায়। পরিকল্পনা অনুযায়ী রিফাতকে মারধর করা হচ্ছে দেখেই মিন্নি স্বাভাবিকভাবে হাঁটছিলেন। তবে পরিকল্পনার বাইরে গিয়ে নয়ন বন্ড রিফাত শরীফকে মারধর শুরু করলে মিন্নি তখনই এগিয়ে আসেন।

মিন্নির আইনজীবী ও বরগুনা জেলা আইনজীবী সমিতির সাধারণ সম্পাদক মাহবুবুল বারী আসলাম বলেন, আমরা আদালতে মামলার চার্জশিটের অনুলিপি পাওয়ার জন্য অনেক চেষ্টা করেছি। কিন্তু মামলার মূল নথি জেলা জজ আদালতে থাকায় অনুলিপি দেওয়া হয়নি। তিনি আরও জানান, আজ মামলার ধার্য তারিখে চার্জশিটের শুনানি হতে পারে।

২৬ জুন হত্যাকাণ্ডের পর রিফাত শরীফের বাবা আব্দুল হালিম দুলাল শরীফ মিন্নিকে প্রধান সাক্ষী করে বরগুনা থানায় হত্যা মামলা করেন। এরপর ১৩ জুলাই রিফাত হত্যাকাণ্ডে মিন্নি জড়িত থাকার অভিযোগ এনে সংবাদ সম্মেলন করেন তিনি। পরদিন মিন্নিকে গ্রেফতারের দাবি জানিয়ে মানববন্ধন করা হয়।

image_pdfimage_print




সংবাদটি ভাল লাগলে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published.

এই বিভাগের আরো সংবাদ










© All rights reserved © 2019 notunbarta24.com
Developed by notunbarta24.Com
themebazarnotunbar8765