1

মোল্লাহাটে দ’গ্রুপের সংঘর্ষে একজন নিহতের ঘটনায় বাড়ী ভাংচুর ও লুটপাট : অর্ধশত পরিবার এলাকা ছাড়া

বাগেরহাটের মোল্লাহাট উপজেলার চুনখোলা ইউনিয়নে দুইদল গ্রামবাসির সংঘর্ষে আহতদের মধ্যে চিকিৎসাধীন অবস্থায় একজন নিহতের ঘটনার জের ধরে গত এক সপ্তাহ ধরে ‘দাড়িয়ালা ও ছোট কাচনা’ গ্রামে চলছে বাড়ী-ঘর-দোকানপাট ভাংচুর ও লুটপাট। দফায়-দফায় চলমান হামলায় প্রতিপক্ষের অর্ধশত বাড়ী ভাংচুর ও লুটপাটের ঘটনা ঘটেছে। মামলা ও হামলার ভয়ে শুধু পুরুষ নয় নারীরাও গ্রাম ছেড়ে অন্যত্র আশ্রয় নিয়েছে। এই ঘটনায় এলাকায় ভিতিকর পরিশেষ বিরাজ করছে। স্থানীয় জনপ্রতিনিধিও ক্ষোভ প্রকাশ করে এলাকার সুষ্ঠ পরিবেশ ফিরিয়ে আনার দাবী জানিয়েছেন। তবে পুলিশ বরছে পরিস্থিতি তাদের নিয়ন্ত্রনে রয়েছে।
স্থানীয়রা ও পুলিশ জানায়, বাগেরহাটের মোল্লাহাট উপজেলার ‘দারিয়ালা ও ছোট কাচনা’ গ্রামে ‘মোল্লা ও হালদার’ নামের দুই দল গ্রামবাসির মধ্যে দীর্ঘদিন ধরে চলে আসা বিরোধের জেরে গত ৩ আগষ্ট বিকালে দারিয়ালা বাজারে সংর্ঘষে শুরু হয়। পরে মোল্লা গ্রুপের প্রধান সবুজ মেম্বার ও হালদার গ্রুপের প্রধান রজু হালদার গগ্রপের সদস্যরা দেশীয় অস্ত্রসহ পরস্পর সংর্ঘষে জড়িয়ে পড়ে। ওই সংর্ঘষে ২ পুলিশসহ উভয় গ্রুপের অর্ধশতাধিক লোক আহত হয়। আহতদের মধ্যে খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিসাধীন অবস্থায় গত ৮ আগষ্ট মোল্লা গ্রুপের সদস্য দোলোয়ার হোসেন মারা যান।

এই মৃত্যুর ঘটনার পর ১৫ আগষ্ট থেকে মোল্লা গ্রুপের সদসরা মৃত্যুর প্রতিশোধ নিতে হালদার গ্রুপের সদস্যদের বাড়ীঘর ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে দফায়-দফায় ভাংচুর ও লুটপাট শুরু করে। গত এক সপ্তাহ ধরে ‘দারিয়ালা ও ছোট কাচনা’ গ্রামে হালদার গ্রুপের অর্ধশত বাড়ীঘর-ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে ভাংচুর ও লুটপাটের ঘটনা ঘটেছে। ক্ষতিগ্রস্ত এসব বাড়ীর কয়েক কোটি টাকার মালামাল ও পশু লুটের পাশাপাশি অনেক আসবাবপত্র আগুন দিয়ে পুড়িয়ে দেয়া হয়েছে। এমন কি শিক্ষার্থীদের বই-খাতাও লুটে নেয়া হয়েছে। এসব পরিবারের নারী সদস্যদের গাছের সাথে বেঁধে রাখা ও শিশুদেরও মারপিট করার অভিযোগ রয়েছে। তাদের আধারের এরকম হামলায় শিশু ও নারীদের মাঝে একপ্রকার ভিতি কাজ করছে।

সরেজমিনে ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখা গেছে, হালদার গ্রুপের বাড়ীঘর কুপিয়ে ও হ্যামার দিয়ে বসবাসের অনুপযোগি করে দেয়া হয়েছে। বাড়ির ফলজবৃক্ষ কেটে ফেলা, বিদ্যুতের মিটার ভেঙ্গে ফেলা, সরকারী গভির নলকুপের মাথা খুলে নেয়া হয়েছে। ভাংচুরের হাত থেকে রেহাই পায়নি টয়লেট ও রান্নাঘরও । হত্যা মামলা এবং হামলার নারী-পুরুষশুন্য এসব বাড়ীঘর এখন ধ্বংস স্তুপে পরিনত হয়েছে। এসব বাড়ীতে একমুঠো ভাত খাবারও ব্যবস্থা এমন কি বসবাস করার কোন পরিবেশও নেই।

গৃহবধু নাজমা বেগম জানান, রাতের বেলায় প্রতিপক্ষরা তার বাড়িতে হামলা চালায়। তাকে সন্তানসহ ঘর থেকে বের করে দেয়া হয়। পরে তার ঘরে থাকা সবকিছু লুটে নিয়েছে। বাচ্ছাদের একমুঠো ভাত খাওয়ানো ব্যবস্থাও নেই। বাড়ি ছেড়ে খেয়ে না খেয়ে দিন কাটছে তাদের।
শুধু নাজমা বেগম নয় ওই এলাকার অনেক নারী, তাদের তিল তিল করে হাতে গড়া সংসারের পরিনতি দেখিয়ে সাংবাদিকদের সামনে কান্নায় ভেঙ্গে পড়ে ঘটনার সাথে জড়িতদের বিচার ও এলাকায় শান্তিপূর্ণ পরিবেশ ফিরিয়ে আনার দাবী জানান।

মোল্লাহাট উপজেলার চুনখোলা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মুন্সি তানজিলুর রহমান বলেন, পুর্ব শত্রæতার জের ধরে সংঘর্ষে আহত একজন নিহতের ঘটনার জের ধরে মামলা হয়। কিন্তু একটি পক্ষ লুটপাট ভাংচুর শুরু কওে এলাকার পরিবেশ নষ্ট করছে। এর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া জরুরী।
মোল্লাহাট থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) কাজী গোলাম কবীর জানান, আহত ব্যাক্তি চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যাওয়ায় একটি পক্ষ লুটপাট ভাংচুর শুরু করে। বর্তমানে পরিস্থিতি পুলিশের নিয়ন্ত্রনে রয়েছে।