1

মুখে কালো কাপড় বেঁধে দুদক গেটে সাংবাদিকদের বিক্ষোভ

বাংলাদেশ ক্রাইম রিপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের (ক্র্যাব) দুই সাংবাদিককে দুর্নীতি দমন কমিশন- দুদকের আপত্তিকর চিঠির প্রতিবাদে দুদক কার্যালয়ের প্রধান গেটের সামনে তৃতীয় দিনের মতো প্রতিবাদ ও মানববন্ধন করেছেন সাংবাদিকরা। এসময় তারা মুখে কালো কাপড় বেঁধে অবস্থান করে। সাংবাদিকদের পক্ষ থেকে ঘোষণা দেওয়া হয় অবিলম্বে ওই চিঠি প্রত্যাহার না করলে সাংবাদিক সমাজ এক হয়ে কঠোর আন্দোলনে যাবে।

রোববার সকাল ১১টায় রাজধানীর সেগুন বাগিচায় দুদক কার্যালয়ের প্রধান গেটের সামনে প্রতিবাদ ও মানববন্ধন করে ক্র্যাবের সদস্য ও অন্যান্য সাংবাদিক সংগঠনের সদস্য ও নেতারা।

এসময় ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের (ডিইউজে) সভাপতি আবু জাফর সূর্য বলেন, পরিচালক অত্যন্ত সচেতনভাবে গণমাধ্যমকে দুদকের বিরুদ্ধে দাঁড় করানোর চেষ্টা করেছেন। দুদকের সুনাম ক্ষুণ্ন করার চেষ্টা করেছেন। আপনারা যদি গণমাধ্যমকে দুদক থেকে সরিয়ে দিতে চান, রাষ্ট্র অচল হয়ে যাবে। আপনারা নিজেরা পরিশুদ্ধ হোন, তা না হলে প্রতিষ্ঠানটির প্রতি মানুষের আস্থা নষ্ট হবে। চিঠির আপত্তিকর শব্দগুলো প্রত্যাহার করতে হবে। সুশাসন ও গণমাধ্যম মুদ্রার এপিঠ ও ওপিঠ। রিপোর্টে যদি আপনার আপত্তি থাকে প্রচলিত আইন অনুযায়ী প্রতিবাদ জানাতে পারেন।

তিনি বলেন, যত কঠিন কর্মসূচি দিতে হয়, দেয়া হবে। এ আগুন তাড়াতাড়ি নেভানোর চেষ্টা করুন।

ক্র্যাব সভাপতি আবুল খায়ের বলেন, সাংবাদিকদের কাছে সহযোগিতা চাওয়ার এটি কোনো নমুনা হতে পারে না। স্বাক্ষী না দিলে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়ার হুমকি? তার মানে কী? এ প্রতিষ্ঠানের ভেতরে একটি সরকার বিরোধী গ্রুপ আছে। যারা সরকারের বিরুদ্ধে সাংবাদিকদের মুখোমুখি করার পাঁয়তারা করছে। বৃহত্তর আন্দোলন করে প্রত্যাহারে বাধ্য করা হবে।

ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির (ডিআরইউ) সাবেক সাধারণ সম্পাদক রাজু আহমেদ বলেন, গণমাধ্যমের স্বাধীনতা ভুলুণ্ঠিত হতে দিতে পারি না। সেখান থেকে সরে আসার আবারও বিনীত অনুরোধ করছি। সাধারণ মানুষ দুদকের অনেক কর্মকর্তার অত্যাচারে অতিষ্ঠ। এখনো সময় আছে, কর্মকর্তাদের সাংবাদিকদের সাথে মুখোমুখি অবস্থান থেকে সরে আসতে অনুরোধ করুন। অবিলম্বে এই চিঠি প্রত্যাহার করে দুঃখ প্রকাশ, কর্মকর্তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে হবে। তা না হলে এই আন্দোলন চলবে।

বিক্ষোভে ডিআরইউ’র সাংগঠনিক সম্পাদক আফজাল বারী, ডিইউজের সাধারণ সম্পাদক সোহেল হায়দারসহ নেতারা উপস্থিত ছিলেন।

সম্প্রতি পুলিশের ডিআইজি মিজানুর রহমান ও দুদকের তদন্ত কর্মকর্তা বাছিরের ঘুষ কেলেঙ্কারি নিয়ে সংবাদ প্রচার ও প্রকাশের জেরে বাংলাদেশ ক্রাইম রিপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের (ক্র্যাব) সাধারণ সম্পাদক দীপু সারোয়ার এবং প্রশিক্ষণ ও তথ্য প্রযুক্তি সম্পাদক ইমরান হোসেন সুমনকে দুদকে হাজির হওয়ার নোটিশ দেয়া হয়। এছাড়াও নোটিশে দীপু সারওয়ারকে কার্যালয়ে না গেলে আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়ার বিষয়টি উল্লেখ করা হয়। এর প্রতিবাদেই এই মানববন্ধন।

এর আগে মঙ্গলবার (২৫ জুন) দুদকের পরিচালক ও অনুসন্ধান দলের প্রধান শেখ মো. ফানাফিল্যা স্বাক্ষরিত পৃথক চিঠিতে তাদের (২৬ জুন, বুধবার) সকাল সাড়ে ১০টায় দুদকের প্রধান কার্যালয়ে হাজির হতে বলা হয়।

দুদকের দুটি চিঠিতেই অভিযোগের সংক্ষিপ্ত বিবরণী হিসেবে উল্লেখ করা হয়, দুদকের পরিচালক খন্দকার এনামুল বাছিরের বিরুদ্ধে ডিআইজি মিজানুর রহমানের কাছ থেকে ৪০ লাখ টাকা ঘুষ নেওয়ার অভিযোগ প্রসঙ্গে আপনার সাক্ষ্যগ্রহণ ও শ্রবণ একান্ত প্রয়োজন।

আরও বলা হয়, ‘উল্লিখিত অভিযোগের বিষয়ে আগামী ২৬/০৬/২০১৯ খ্রি. তারিখ ১০.৩০ ঘটিকায় নিম্নস্বাক্ষরকারীর কার্যালয়ে উপস্থিত হয়ে বক্তব্য প্রদানের জন্য আপনাকে অনুরোধ করা হলো। অন্যথায় আইনানুগ কার্যধারা গৃহীত হবে।’

এদিকে দুদকের দুর্নীতি নিয়ে প্রতিবেদন করার কারণেই দুই সাংবাদিককে নোটিশ দিয়ে পক্ষান্তরে রাষ্ট্রীয় সংস্থাটি ‘হুমকি’ দিচ্ছে বলে অভিযোগ করছেন গণমাধ্যকর্মীরা। নোটিশের বিষয়টি প্রকাশ পাওয়ার পরপরই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বিষয়টি নিয়ে তীব্র প্রতিক্রিয়া শুরু হয়।