1

মাকে ডাক্তার দেখাতে এসে হাসপাতালে বিদ্যুৎস্পৃষ্টে ছেলের মৃত্যু

বরিশাল নগরীর সদর রোডের বেলভিউ ডায়াগনস্টিক সেন্টারে মাকে ডাক্তার দেখাতে এসে বিদ্যুৎ স্পৃষ্ট হয়ে ছেলের মৃত্যু হয়েছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।

বিদ্যুৎ স্পৃষ্ট হওয়ার পর তাকে দ্রুত চিকিৎসা না দিয়ে একটি কক্ষে দেড় ঘণ্টা আটকে রাখায় মৃত্যু হয়েছে বলে অভিযোগ নিহতের পরিবারের। এ ঘটনায় কর্তৃপক্ষের অবহেলাকে দায়ী করেছে নিহতের পরিবার।
বেলভিউ ডায়াগনস্টিক সেন্টার কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান কাজী মফিজুল ইসলাম কামাল সিটি মেয়র সাদিক আবদুল্লাহর মামা হওয়ায় তিনি প্রভাব বিস্তার করে এই ঘটনা ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্টা করছেন বলেও অভিযোগ উঠেছে।

নিহতের নাম সুমন শীল (৩৫)। তিনি ভোলার চরফ্যাশন এলাকায় জ্যাকব টায়ার সংলগ্ন এলাকার বাসিন্দা বিমল চন্দ্র শীলের ছেলে এবং ২ ছেলে সন্তানের জনক ছিলেন। জ্যাকব টাওয়ার এলাকায় একটি সেলুন পরিচালনা করতেন সুমন।

নিহতের মামা অমল শীল জানান, তার বোন দিপালী রানী দির্ঘদিন ধরে বাত ব্যাথায় ভূগছে। দিপালী রানীকে ডা. অমিতাভ সরকারকে দেখানোর জন্য তার ছেলে সুমন রবিবার রাত সাড়ে ১০টার দিকে নগরীর সদর রোডের বেলভিউ ডায়াগনস্টিক সেন্টারে নিয়ে যায়। বেলভিউর প্রধান ফটকের কলাপসিবল গেট হাত দিয়ে স্পর্শ করে ভেতরে প্রবেশের সময় বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হন মা দিপালী রানী। এ সময় সঙ্গে থাকা ছেলে সুমন মাকে ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে দিতে গিয়ে নিজে বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়। মা বেঁচে গেলেও সুমন ছিটকে পড়ে গুরুতর আহত হন।

নিহতের মা দিপালী রানীর অভিযোগ, সুমন আহত হয়ে পড়ে থাকার পর বেলভিউর লোকজন তাকে একটি কক্ষে নিয়ে প্রায় ১ ঘণ্টা আটকে রাখে। এ সময় বেলভিউর কোনও একজন চিকিৎসকও তার শারীরিক অবস্থা পরীক্ষা কিংবা চিকিৎসা দেয়নি। সুমনের স্বজনদেরও ধারে কাছে যেতে দেওয়া হয়নি। রাত পৌঁনে ১২টার দিকে বেলভিউ কর্তৃপক্ষ একটি এ্যাম্বুলেন্স (লেগুনা) যোগে সুমনকে শের-ই বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের জরুরি বিভাগে পাঠায়। সেখানে হাসপাতালের জরুরি বিভাগের চিকিৎসক ডা. নাজমুল সাকিব রাত ১২টা ৫ মিনিটে সুমনকে মৃত ঘোষণা করেন।

এদিকে সদর রোড থেকে হাসপাতালের এ্যাম্বুলেন্স ভাড়া সর্বোচ্চ ৩ থেকে ৪শ’ টাকা হলেও হাসপাতালে পৌঁছে দেওয়া বাবদ তাদের কাছ থেকে বেলভিউ কর্তৃপক্ষ ভাড়া বাবদ ২ হাজার টাকা আদায় করে বলে অভিযোগ করেন নিহতের মা দিপালী রানী।

নরসুন্দর সুমন শীলের অনাকাঙ্ক্ষিত মৃত্যুর ঘটনায় বেলভিউ কর্তৃপক্ষের অবহেলা এবং দায়িত্বহীনতাকে দায়ী করেছেন তার মা দিপালী রানী ও মামা অমল শীলসহ অনান্যরা।

বেলভিউ ডায়াগনস্টিক সেন্টারের ব্যবস্থাপক মো. নঈমুল হক মাসুদ জানান, সুমন শীলের ঘটনাটি তাদের কম্পাউন্ডের মধ্যে নয়, বাইরে হয়েছে। সে বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়নি। সে পড়ে গিয়ে মারা গেছে। আহত হওয়ার পর বরং বেলভিউ কর্তৃপক্ষ তাকে মেডিকেলে পাঠিয়েছে। মেডিকেলে পাঠানো বাবদ কর্তৃপক্ষ ২ হাজার টাকা নেয়নি, তারা কোনও দালালের খপ্পড়ে পড়তে পারে বলে দারি করেন তিনি।

কোতয়ালী মডেল থানার ওসি মো. নুরুল ইসলাম জানান, সুমন শীলের মৃত্যুর ঘটনায় বেলভিউ কর্তৃপক্ষের কোনও অবহেলা কিংবা গাফেলতি ছিল কিনা তা তদন্ত করে দেখা হচ্ছে। নিহতের লাশের ময়নাতদন্ত করে এ ঘটনায় অপমৃত্যু মামলা দায়ের হয়েছে বলে তিনি জানান।