1

‘ভিন দেশি তারায়’ উজ্জ্বল ইংল্যান্ড

নাক উঁচু জাতি হিসেবে পরিচিতি আছে ইংলিশদের। তাদের স্বার্থ, ইগোর দ্বন্দ্ব খেলার মাঠেও যে পড়ে না জোর দিয়ে বলার উপায় নেই। কিন্তু বড় লক্ষ্য ধরে এগোলে ইগোর উদ্ধে উঠতে হয়। নাক নিচে নামাতে হয়। ক্রীড়াঅঙ্গন বয়স, বর্ণ, জাত-পাতের উর্ধ্বে। প্রথমবার বিশ্বকাপ জয়ের পেছনে ইংল্যান্ডের এই ইগো জয় করার গল্পও কম-বেশি জড়িত। পাকিস্তান-জিম্বাবুয়ে কিংবা দক্ষিণ আফ্রিকা-ওয়েস্ট ইন্ডিজ বংশোদ্ভূত এক ঝাঁক ক্রিকেটার নিয়ে সেরার মুকুট পড়েছে ইংল্যান্ড। ভিন দেশি তারায় উজ্জ্বল হয়ে উঠেছে ইংলিশদের ক্রিকেট অঙ্গন। ওই ভিন দেশি তারাগুলো খেলেছে জান-প্রাণ দিয়ে।

বিশ্বকাপ দল নিয়ে ইংল্যান্ড ইগোর দ্বন্দ্বে ভুগেছে জোফরা আর্চারকে নিয়ে। ওয়েস্ট ইন্ডিজের হয়ে অনূর্ধ্ব-১৯ খেলা আর্চার ইংল্যান্ডের নাগরিকত্ব নিয়েছেন। এক বছর আগেও ইংল্যান্ডের তেমন কেউ তার নাম জানত না। এখন তিনি দেশটির বিশ্বকাপ জয়ের অন্যতম নায়ক। চলতি বছরের মার্চে অভিবাসী আর্চার ইংল্যান্ডের হয়ে খেলার যোগ্যতা অর্জন করেন। বিশ্বকাপের আগে পাকিস্তান সিরিজ দিয়ে ইংল্যান্ডের জার্সি গায়ে চাপানো। তার হাতেই ফাইনাল স্বপ্ন তুলে দেন ইংল্যান্ড অধিনায়ক। আর্চার বল হাতে সরাসরি জেতাতে পারেননি, তবে দলকে হারাননি। বাউন্ডারি ব্যবধানে শেষ অবধি চ্যাম্পিয়ন হয়েছে ইংল্যান্ড।

এই আর্চারকে বিশ্বকাপের দলে নেওয়া নিয়ে কম জল ঘোলা হয়নি। বিশ্বকাপের দলে ডাক পেয়েছেন শেষ মুহূর্তে। প্রাথমিক দলে থাকা ডেভিড উইলির জায়গায়। আর্চারের দলে অন্তভূক্তি নিয়ে খোদ বিশ্বকাপ জয়ী এই দলের এক পেসার জানান, তিনি চাননা শেষ সময়ে আর্চার বিশ্বকাপ দলে আসুক। কারণ এতোদিন যিনি দলকে টানছেন তার বাদ পড়া ভালো লাগবে না। বিশ্বকাপের মাস দুই আগে খেলার যোগ্যতা অর্জন করা একজনকে বিশ্বকাপ দলে নেওয়া ঠিক হবে না বলেও কথা তোলেন অনেক। কিন্তু ইগোর উর্ধ্বে উঠে নির্বাচকরা আর্চারকে দলে নেন। বিশ্বকাপে সুপার ওভারে তিনি জয়ী তো বটেই। বিশ্বকাপে নিয়েছেন ১১ ম্যাচে ২০ উইকেট। যৌথভাবে হয়েছেন তৃতীয় সর্বোচ্চ উইকেট শিকারি। রান কম তো দিয়েছেনই। সঙ্গে গতির ঝড় তুলেছেন। বিশ্বকাপে ইংল্যান্ডের বোলিং আক্রমণকে করেছেন সর্বসেরা।

খলনায়ক কিংবা ইংল্যান্ড ক্রিকেটের ব্যাড বয় ছিলেন বেন স্টোকস। এখন শুধুই নায়ক তিনি। যিনি কি-না ক্যারিয়ার দীর্ঘ করতে পারলে সর্বকালের সেরা অলরাউন্ডারদের একজন হয়ে উঠবেন। নিউজিল্যান্ড বংশোদ্ভূত ইংলিশ ক্রিকেটার বেন স্টোকস। তার বাবা ইংল্যান্ডের একজন রাগবি লিগ খেলোয়াড় ছিলেন। ২০১৬ সালের টি-২০ বিশ্বকাপের ফাইনালে তিনি দলকে হারান। এরপর নাইট ক্লাবে মারামারি করে জেল-জরিমানা খেয়ে ব্যাড বয় হয়ে যান। কিউইদের বিপক্ষে ফাইনালে হার না মানা ৮৪ রান করে ইংলিশ ক্রিকেটের স্থায়ী নায়ক হয়ে গেছেন স্টোকস। বিশ্বকাপে দারুণ অলরাউন্ড পারফরম্যান্স করেছেন। ব্যাট হাতে পাঁচে নেমে ১১ ম্যাচে ৪৬৮ রান। সঙ্গে ৭ উইকেট। দুর্দান্ত ক্যাচ ফিল্ডিংয়েরও সাক্ষী করেছেন দর্শকদের। তার আলোয় ইংলিশদের মাথায় উঠেছে সেরার মুকুট।

ইংল্যান্ড ওয়ানডে দলের অবিসংবাদী নেতা জেসন রয়। দারুণ শট খেলতে পটু এই ইংলিশ ওপেনার ইংল্যান্ডের আক্রমণাত্মক ক্রিকেটকে এগিয়ে নিয়েছেন। বছর দশেক বয়সে তিনি দক্ষিণ আফ্রিকা থেকে ইংল্যান্ডে আসেন। দারুণ ব্যাটিং দিয়ে তিনিই ইংল্যান্ডকে বিশ্বকাপ জয়ের পথ রচনা করে দিয়েছেন। ব্যাট হাতে তিনি ৮ ম্যাচে করেছেন ৪৪৩ রান। ইনজুরির কারণে তিন ম্যাচ বসে থাকতে না হলে রানটা আরও বাড়ত নিশ্চয়। সেমিফাইনালসহ চার ম্যাচে তিনি ১২৮, ১৬০, ১২৩ ও ১২৪ রানের জুটি গড়েছেন জনি বেয়ারস্টোর সঙ্গে। অনেকের তাদের জুটিকে বিশ্বকাপ ইতিহাসের সেরা ওপেনিং জুটি মনে করছেন।

বিশ্বকাপে রঙ ছড়ানোর কথা ছিল পাকিস্তান বংশোদ্ভূত মঈন আলীর। এক ম্যাচে তিন উইকেট নিয়ে নিজের প্রমাণও দেন তিনি। কিন্তু ধার ধরে রাখতে পারেননি। তার চেয়েও বড় কথা দুই স্পিনার নিয়ে খেলেনি ইংল্যান্ড। দলের প্রয়োজনে তার জায়গায় লিয়াম প্লাঙ্কেট খেলেছেন। দলে নিয়মিত সুযোগ পেলে তিনিও ভালো করতে মুখিয়ে ছিলেন। তবে পাকিস্তানী বংশোদ্ভূত আরেক তারকা আদিল রশিদ হতাশ করেনি দলকে। নিয়েছেন ১১ উইকেট। এর মধ্যে সেমিফাইনালে অজিদের তিন উইকেট নিয়ে জয়ের অন্যতম নায়ক আদিল রশিদ। ইংল্যান্ড দলে ছিলেন জিম্বাবুয়ে বংশোদ্ভূত এবং জিম্বাবুয়ে জাতীয় দলের সাবেক ক্রিকেটার কেভিন কারেনের ছেলে টম কারেনও। বোলিংয়ের সঙ্গে টুকটাক ব্যাটিং দিয়ে দলে অবদান রাখতে তিনিও মুখিয়ে ছিলেন।