1

ভারতীয় সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে কাশ্মীরিদের ওপর নির্যাতনের অভিযোগ

ভারতের জম্মু-কাশ্মীরের ‘বিশেষ মর্যাদা’ বাতিলের সময় থেকে নিরাপত্তা বাহিনী অভিযানের নামে কাশ্মীরিদের ওপর নির্যাতন চালাচ্ছে বলে অভিযোগ করেছেন সেখানকার বাসিন্দারা।

কাশ্মীরের বেশ কয়েকটি গ্রামের বাসিন্দারা অভিযোগ করেছেন, সেনাসদস্যরা তাদের লাঠি ও তার দিয়ে মারধর করেছে। এমনকি তাদের ইলেকট্রিক শকও দেওয়া হয়েছে। খবর বিবিসির।

তবে ভারতীয় সেনাবাহিনী এসব অভিযোগকে ‘ভিত্তিহীন’ বলে উড়িয়ে দিয়েছে।

গত ৫ আগস্ট কাশ্মীর নিয়ে ৩৭০ অনুচ্ছেদ বাতিলের সিদ্ধান্ত ঘোষণার পর থেকেই জম্মু ও কাশ্মীরে কঠোর নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়। গত ৩ সপ্তাহেরও বেশি সময় ধরে ভারতের নিরাপত্তা বাহিনী কাশ্মীরকে দেশের অন্যান্য অংশ ও বহির্বিশ্ব থেকে ‘কার্যত’ বিচ্ছিন্ন করে রেখেছে।

জম্মু-কাশ্মীরে ফোন এবং ইন্টারনেট সংযোগ বন্ধ রয়েছে এবং বিশাল সমাবেশ করার বিষয়েও নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে।

সেখানে ৫০ হাজারেরও বেশি অতিরিক্ত সেনা মোতায়েন করা হয়। এছাড়া প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী ওমর আবদুল্লা এবং মেহবুবা মুফতিসহ ৪০ জন মূলধারার রাজনৈতিক নেতাকেও আটক ও গৃহবন্দি করে রাখা হয়েছে।

তবে কর্তৃপক্ষ বলছে, মুসলিম অধ্যুষিত অঞ্চলটির আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি ঠিক রাখতে সতর্কতা হিসেবে এসব পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে।

তিন দশকেরও বেশি সময় ধরে ভারতীয় নিরাপত্তারক্ষীরা উপত্যকাটিতে বিচ্ছিন্নতাবাদীদের বিরুদ্ধে জোর লড়াই চালিয়ে যাচ্ছে। কাশ্মীরে অস্থিরতার জন্য দিল্লি পাকিস্তানকে দায়ী করলেও ইসলামাবাদ শুরু থেকেই এ অভিযোগ অস্বীকার করে আসছে।

কাশ্মীরের দক্ষিণাঞ্চলের জেলাগুলোর কয়েকটি গ্রামে গিয়ে ভারতীয় নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যদের বিরুদ্ধে নির্যাতনের অভিযোগ পেয়েছে বিবিসি।

সেখানকার এক গ্রামের বাসিন্দারা অভিযোগ করেছে, কাশ্মীরের বিশেষ মর্যাদা বাতিলের কয়েক ঘণ্টা পর সেনাসদস্যরা ঘরে ঘরে ঢুকে নির্যাতন শুরু করে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক দুই ভাই জানান, সেনাসদস্যরা তাদের ঘুম থেকে ডেকে তুলে গ্রামের এক জায়গায় নিয়ে যায়। সেখানে আরও অনেকের সঙ্গে তাদেরও মারধর করা হয়।

দুই ভাইয়ের মধ্যে একজন বলেন, তারা আমার শরীরের সব অংশে মেরেছে। লাথি মেরেছে, লাঠি দিয়ে পিটিয়েছে, বৈদ্যুতিক শক দিয়েছে, তার দিয়ে পিটিয়েছে। তারা পায়ের পেছনে মেরেছে। যখন আমরা অচেতন হয়ে পড়তাম, তারা বিদ্যুতের শক দিয়ে আমাদের চেতনা ফিরিয়ে আনতো। মারের চোটে আমরা যখন চিৎকার করতাম, তখন তারা কাদা দিয়ে আমাদের মুখ বন্ধ করে দিত।

নির্যাতন সহ্য না করতে পেরে আমি তাদের বলেছি, আমাদের না মেরে গুলি করো। ঈশ্বরের কাছে প্রার্থনা করেছিলাম আমাকে তুলে নিতে।

তাদের কাছে নির্যাতনের কারণ জানতে চাইলে তারা বলে, অন্য কেউ যেন প্রতিবাদ করার সাহস না পায়।

গ্রামের কেউ নিরাপত্তা বাহিনীর বিরুদ্ধে কোনো ধরনের প্রতিবাদে অংশ নিলে তাদেরও এমন পরিণতি হতে পারে বলে সেনারা তাকে সতর্ক করে দিয়েছে বলেও জানান তিনি।

জঙ্গিদের তথ্য জানাতে না পারলে সেনাসদস্যরা মামলা দিয়ে গ্রেফতার করার হুমকি দিয়েছে বলেও অভিযোগ করেন এক যুবক।

সেনাদের প্রস্তাবে রাজি না হওয়ায় তাকে এমনভাবে মারা হয়েছে যে দুই সপ্তাহ ধরে তিনি ঘুমাতে পারছেন না।

তিনি বলেন, এমনটা চলতে থাকলে বাড়ি ছেড়ে পালানো ছাড়া আমার গতি নেই। সেনারা আমাদের পশুর মতো মারছে। আমাদের মানুষ বলেই গণ্য করছে না।

তবে ভারতীয় সেনাবাহিনী এসব অভিযোগ অস্বীকার করেছে।

বিবিসিকে পাঠানো এক বিবৃতিতে তারা নিজেদের ‘মানবাধিকারের প্রতি শ্রদ্ধাশীল পেশাদার সংগঠন’ বলে দাবি করেছে।

গত পাঁচ বছরে কাশ্মীরে মানবাধিকার লংঘন নিয়ে ন্যাশনাল হিউম্যান রাইটস কমিশনের (এনএইচআরসি) উত্থাপিত ৩৭টি অভিযোগের অধিকাংশই ‘ভিত্তিহীন’ প্রমাণিত হয়েছে বলেও বিবৃতিতে জানিয়েছে তারা।

দিল্লি জানিয়েছে, ১৫টি অভিযোগ খতিয়ে দেখা হয়েছে। এর মধ্যে মাত্র তিনটি অভিযোগকে তদন্তযোগ্য হিসেবে পাওয়া গেছে। যারা দোষী বলে প্রমাণিত হয়েছে, তাদের সাজা হয়েছে।

চলতি বছর কাশ্মীরের দুটি মানবাধিকার সংস্থা উপত্যকায় গত তিন দশকে হওয়া কয়েকশ’ মানবাধিকার লংঘনের অভিযোগ সম্বলিত একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে।

কাশ্মীরে মানবাধিকার লংঘন নিয়ে বিস্তৃত ও স্বতন্ত্র আন্তর্জাতিক তদন্তে সেখানে একটি কমিশন গঠনের আহ্বান জানিয়েছে জাতিসংঘের মানবাধিকার কমিশনও। ওই অঞ্চলে নিরাপত্তা বাহিনীর বাড়াবাড়ির অভিযোগ নিয়ে ৪৯ পৃষ্ঠার প্রতিবেদনও দিয়েছে তারা।

তবে নয়া দিল্লি ওই প্রতিবেদনের অভিযোগগুলো অস্বীকার করে আসছে।