1

ভারতীয় তরুণী তনুশ্রী আশাই করেননি আবরারকে নিয়ে তার স্ট্যাটাস ভাইরাল হবে

বাংলাদেশ প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র আবরার ফাহাদকে হত্যার ব্যাপারে উদ্বেগ জানিয়ে সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যম ফেসবুকে স্ট্যাটাস দেন ভারতের যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী তনুশ্রী রায়। সেই স্ট্যাটাসটি ভাইরাল হয়ে যাওয়ার পর বিভিন্ন গণমাধ্যমে তা নিয়ে সংবাদও হয়েছে।

পরে সেই সংবাদ শেয়ার করেছেন তনুশ্রী রায়। তাতে তিনি বিস্ময়ও প্রকাশ করেছেন। তনুশ্রী ভাবতেও পারেননি যে, তার দেওয়া স্ট্যাটাস থেকে সংবাদ হতে পারে।

তনুশ্রীর স্ট্যাটাসের নিচের কমেন্টে অনেকেই বিভিন্ন ধরনের মন্তব্য করেছেন। তাদের অনেকেরই মন্তব্যের প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন তিনি। সেসব থেকে কয়েকটি উল্লেখ করা হলো।

আতিক মুজাহিদ : আপা অবাক হওয়ার কিছু নাই! যাহা বাংলাদেশ, তাহাই ভারত, উহাই পাকিস্তান। সবাই একসূত্রে গাঁথা। আপনাদের ওখানে তো মুসলমানদের সামান্য গরু খাওয়া, ধরা, বহন করা সন্দেহে মারা হয়। সেদিন দেখলাম, প্রকাশ্যে দলিতদের বাচ্চারা পায়খানা করার অপরাধে তাদের পিটিয়ে হত্যা করা হয়েছে। এর আগে দলিত শিক্ষার্থী আত্মহত্যার খবরও দেখেছি। আখলাস, তাবরেজ তাদের কথা আর নাই বললাম। কথা হচ্ছে, এ অঞ্চলের বেশিরভাগ মানুষদের স্রষ্টা গন্ডারের চামড়া দিয়ে পাঠিয়েছেন। তাই সব সয়ে গেছে। আপনি অবাক হয়ে গেছেন এ দেশে আমরা কিভাবে বাস করি! আপনি যেমনে ওইদেশে বাস করেন আমরাও তেমনি। সবাই আমরা মোটা চামড়াওয়ালা ভীতুর জাত! আর আমাদের উপর ছড়ি ঘুরাচ্ছে অবিকল মানুষের মতো দেখতে একদল শয়তান।

তনুশ্রী রায় : পোস্ট টা ভালো করে পড়েন। আমি লিখছি। “নিজের দেশের স্বার্থ নিয়ে লিখায়”। ভারতে দেশপ্রেমের জন্য কাউকে পিটিয়ে মারা হয়নি।

আতিক মুজাহিদ : আপু, আমি মূলত দেশপ্রেমে ফোকাসে করে কথাগুলো বলিনি। আমার কথাগুলো (আপনি বললেন), আমরা কিভাবে এই দেশে বাস করি সেটার জবাবে বলা! দেশপ্রেম বা নিজদেশের স্বার্থ নিয়ে কথা বলায় আসলে আপনি অনেক বড় একটা বিষয় নিয়ে এসেছেন। দেখুন, আবরার সরাসরি দেশের স্বার্থ নিয়ে লেখালেখি করায় তাকে খুন হতে হয়েছে। এখন আপনি অবাক হয়েছেন ওকে! আচ্ছা, আসামের যে লোকগুলো এত বছর ভারতে থাকলো, এখন যখন এনআরসিতে নাম নেই, তারপর তারা আত্মহত্যা করলো, তারা কি ভারতকে ভালোবাসে না? হয়তো তাদের ভারত ছাড়তে হতে পারে নিজের জন্মভূমি তাই তারা এ পথ বেছে নিলো। আমি বলতে চাচ্ছি আবরারের হত্যার পেছনে যে দেশপ্রেম কাজ করেছে এখানেও সেই দেশপ্রেম টার্মটাই কাজ করেছে। আপনাদের অনেক বুদ্ধিজীবী বা ফেসবুকের অনেককে দেখলাম তারা এটাকে আত্মহত্যা না বলে হত্যাই বলেছেন। আবার, আপনাদের ওখানে নিয়মিত বিভিন্ন ছুতোয় মুসলমানদের উপর কিংবা দলিত বা প্রগতিশীলদের উপর নির্যাতন করা হয়, তাদের কি দেশপ্রেম নেই? কানহাইয়া কুমারদের কি দেশপ্রেম নেই? আপনাদের ওখানে তো কেউ সরকারের ভুল ধরলেই বা বিরুদ্ধে কথা বললেই ‘এন্টি-ন্যাশনাল’ ট্যাগ দেয়। দেশপ্রেমের জন্য আপনাদের ওখানেও মানুষ মারা গেছে। এখানে হয়তো আবরার নিজের দেশের স্বার্থের জন্য সরাসরি , আর আপনাদের ওখানে হয়তো ইনডিরেক্টলি (দেশের জন্যই) । আবার দেখেন পাকিস্তানে সেইমভাবে প্রায়ই সংখ্যালঘু হিন্দু, খ্রিস্টান বা সুশীলদের উপর হামলার খবর পাই। তারা কি দেশকে ভালোবাসে না।

আমি আসলে বলতে চাচ্ছি, বাংলাদেশ, ভারত, পাকিস্তান সবই সেম। দেশপ্রেম থাকাও সত্ত্বেও এখানের মানুষ নিজেদের আরো বড় দেশপ্রেমিক(!) দাবি করা লোকদের হাতে মার খাচ্ছে।

মাজহারুল ইসলাম নোবেল : জয় শ্রীরাম না বলায় পিটায়া মানুষ মারার দেশের মানুষজন কীভাবে অন্যের দেশের মানুষের বাস করা নিয়ে প্রশ্ন তোলে? নিজের পাছায় ত্যানা নাই অন্যের ছেড়া জিন্স নিয়া হাসাহাসি …

তনুশ্রী রায় : পোস্ট টা ভালো করে পড়েন। আমি লিখছি। “নিজের দেশের স্বার্থ নিয়ে লিখায়”। ভারতে দেশপ্রেমের জন্য কাউকে পিটিয়ে মারা হয়নি।

প্রসঙ্গত, বুয়েট শিক্ষার্থী আবরার ফাহাদকে হত্যার ব্যাপারে তনুশ্রী তার স্ট্যাটাসে লেখেন, ‘যদিও আমি ভারতীয় তারপরও বাংলাদেশের প্রতি আমার আলাদা একটা টান রয়েছে। কারণ আমার পূর্বপুরুষ বাংলাদেশেরই মানুষ ছিলেন। ৪৭’র দেশভাগের পর ভারতে চলে আসেন। বাংলাদেশের মানুষ ভালো থাকুক এটা আমি সবসময় চাই।

শুনলাম ভারত-বাংলাদেশের চুক্তি নিয়ে স্ট্যাটাস দেয়ায় একজন বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রকে হত্যা করা হয়েছে। স্ট্যাটাসটা আমি পড়লাম, নিজের দেশের স্বার্থ নিয়ে লিখার জন্য কিভাবে নিজের দেশেরই লোক একটা ছেলেকে এভাবে পিটিয়ে হত্যা করে ফেলে, এটা আমার কাছে আশ্চর্য লাগছে।

সামান্য ফেসবুক স্টাটাসের কারণে মানুষ খুন করে ফেলা হচ্ছে বাংলাদেশে। কিভাবে এমন একটা দেশে মানুষ বাস করে।’

এখন পর্যন্ত তনুশ্রীর সেই স্ট্যাটাসে প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন ১৩ হাজার জন, এক হাজার দু’শ মন্তব্য এবং তিন হাজার দু’শ জন শেয়ার করেছেন।