1

বিশ্ব বাঘ দিবস আজ: সুন্দরবনে ৩ বছরে বাঘ বেড়েছে ৮টি

আজ ২৯ জুলাই বিশ্ব বাঘ দিবস। সুন্দরবনের বাংলাদেশ অংশে গত ৩ বছরে বাঘের সংখ্যা ১০৬ থেকে বেড়ে বর্তমানে ১১৪ টিতে। অর্থাৎ ৩ বছরে সুন্দরবনের বাঘ বেড়েছে ৮টি। চলতি বছরের ২২ মে সর্বশেষ বাঘ জরিপে সুন্দরবনে ১১৪ বাঘ রয়েছে বলে ক্যামেরা ট্রাকিং জরিপে উঠে এসেছে। সুন্দরবনে বনদস্যুদের আত্মসর্ম্পপন করে স্বাভাবিক জীবনে ফেরা ও চোরা শিকারীদের দৌরাত্ব কম হওয়ায় রয়েল বেঙ্গল টাইগার বা বাঘের সংখ্যা বেড়েছে বলে মনে করছে সংশ্লিষ্টরা। তবে, বিশেজ্ঞরা বলছেন, সুন্দরবনই হচ্ছে এশিয়ার মধ্যে রয়েল বেঙ্গল টাইগারসহ বন্যপ্রাণীর বৃহত্তম আবাসভূমি। বন বিভাগ রয়েল বেঙ্গল টাইগারের আবাসভূমিকে তাদের জন্য সম্পূর্ন নিরাপদ করতে পারেনি। সুন্দরবনকে বন্যপ্রাণীদের জন্য নিরাপদ করা গেলে দ্রুত বাঘের সংখ্যা বাড়বে।

সুন্দরবন বিভাগের দেয়া তথ্য থেকে জানা যায়, স্বাধীনতার পর ১৯৭৫ সালের জরিপে সুন্দরবনে বাঘ ছিলো ৩৫০টি এর পর ১৯৮২ সালে জরিপে ৪২৫টি ও এর দুই বছর পর ১৯৮৪ সালে সুন্দরবন দক্ষিণ বন্যপ্রাণী অভয়ারণ্যের ১১০ বর্গ কিলোমিটার এলাকায় জরপি চালিয়ে ৪৩০ থেেক ৪৫০টি বাঘ থাকার কথা জানানো হয়। ১৯৯২ সালে ৩৫৯টি বাঘ থাকার তথ্য জানায় বন বভিাগ। পরের বছর ১৯৯৩ সালে সুন্দরবনরে ৩৫০ বর্গ কিলোমিটার এলাকায় প্যাগমার্ক পদ্ধতিতে জরিপ চালিয়ে ধন বাহাদুর তামাং ৩৬২টি বাঘ রয়েছে বলে জানায়। ২০০৪ সালে জরিপে বাঘরে সংখ্যা ছিলো ৪৪০টি। ১৯৯৬-৯৭ সালের জরিপে বাঘের সংখ্যা উল্লেখ করা হয় ৩৫০টি থেকে ৪০০টি। ওই সময়ে বাঘের পায়ের ছাপ পদ্ধতিতে গণনা করা হয়। ২০১৫ সালের জরিপে সুন্দরবনের বাংলাদশে অংশে বাঘের সংখ্যা আশংকাজনক হারে কমে দাড়ায় ১০৬টিতে। হটাৎ করে সুন্দরবনের বাঘের সংখ্যা ৪০০টি থেকে ১০৬টিতে এসে দাড়ালে সারা বিশে^ হৈজৈ পড়ে যায়। চলতি বছরের ২২ মে সর্বশেষ বাঘ জরিপে সুন্দরবনে ১০৬ থেকে বেড়ে বর্তমানে বাঘের সংখ্যা দাড়িয়েছে ১১৪ টিতে।

সুন্দরবন বিভাগের তথ্য অনুযায়ী, ২০০১ সাল থেকে ২০১৮ সাল পর্যন্ত ৫০টি বাঘের মৃত্যু হয়েছে। এর মধ্যে স্বাভাবিক ভাবে মারা গেছে মাত্র ১০টি। ১৪টি বাঘ পিটিয়ে মেরেছে স্থানীয় জনতা, একটি নিহত হয়েছে ২০০৭ সালের সুপার সাইক্লোন সিডরে ও বাকী ২৫ বাঘ হত্যা করেছে চোরা শিকারীরা।

জাতিসংঘের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, সুন্দরবনে চোরা শিকারি ও বাঘের আবাসস্থল ক্ষতিগ্রস্ত হবার কারনে হুমকির মুখে রয়েছে বাঘ। পাশাপাশি বিশ্বব্যাপী জলবায়ু পরিবর্তন ও বৈশ্বিক উষ্ণায়নে বাড়ছে সমদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা। এ অবস্থায় হারিয়ে যেতে পারে সুন্দরবনের রয়েল বেঙ্গল টাইগার। ২০৭০ সালের মধ্যে বাংলাদেশে বাঘের জন্য কোনো উপযুক্ত জায়গা থাকবে না। কেননা, বিশ্বের তাপমাত্রা ক্রমাগত বৃদ্ধিসহ উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন সুন্দরবনে টিকে থাকা কয়েক শত বাঘ বিলীন হওয়ার জন্য যথেষ্ট।

বাগেরহাটের শরণখোলায় কমিউিনিটি পেট্রোল গ্রæপের সদস্য মোঃ রাসেল আহম্মেদ বলেন, লোকালয়ে আসা বাঘ নিরাপদে ফিরাতে ব্যপক জন সচেতনতা সৃষ্টি করা হয়েছে। যার ফলে এখন আর মানুষ বাঘ পিটিয়ে মারে না।
বাগেরহাট সরকারী পিসি কলেজের সহযোগী অধ্যাপক ও প্রাণী বিদ্যা বিভাগের বিভাগীয় প্রধান ড. শিউলী রাণী সুত্রধর বলেন, সুন্দরবনে বাঘ বেড়েছে এটা নি:সন্দেহে খুশির বিষয়। বাঘের আবাসস্থল সুন্দরবনকে নিরাপদ করতে পারলে অবশ্যই বাঘের সংখ্যাবৃদ্ধি পাবে।

সুন্দরবন বিশেষজ্ঞ সেভ দ্যা সুন্দরবন ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান লায়ন ড. শেখ ফরিদুল ইসলাম বলেন, চোরা বনদস্যুদের প্রধান টার্গেট হচ্ছে বাঘ। তারা বাঘ শিকার করে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে পাচার করে থাকে। এছাড়া বন্যপ্রাণী বাঘ যাতে তার স্বাভাবিক পরিবেশে থাকতে পারে তার ব্যবস্থা করতে হবে। সুন্দরবনের পাশে যেকোন ধরনের শিল্প প্রতিষ্ঠান স্থাপন থেকে সরকারকে বিরত থাকতে হবে।
বাগেরহাটের পূর্ব সুন্দরবন বিভাঘের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা (ডিএফও) মো. মাহমুদুল হাসান জানান, ওয়ার্ল্ড হ্যারিটেজ সাইড সুন্দরবনের বাংলাদেশ অংশের আয়তন ৬ হাজার ১৭ বর্গকিলোমিটার। সুন্দরবনে বনদস্যুদের আত্মসর্ম্পপন করে স্বাভাবিক জীবনে ফেরা ও চোরা শিকারীদের দৌরাত্ব কম হওয়ায় রয়েল বেঙ্গল টাইগার বা বাঘের সংখ্যা সর্বশেষ জরিপে বেড়েছে। ইতিমধ্যেই বাঘের প্রজনন, বংশ বৃদ্ধিসহ অবাধ চলাচলের জন্য গোটা সুন্দরবনের অর্ধেকেরও বেশী এলাকাকে সংরক্ষিত বন হিসেবে ঘোষনা করা হয়েছে। বাড়ানো হয়েছে টহল ফাঁড়ি। পাশাপাশি চোরা শিকারীদের তৎপরতা বন্ধে আধুনিক প্রযুক্তি নির্ভর স্মার্ট প্রেট্রোলিং চালু করা হয়েছে। বাঘের প্রজনন মৌসুম জুন থেকে আগষ্ট এই ৩ মাস সুন্দরবনে পর্যটকদের ভ্রমন বন্ধ করতে যাচ্ছে বন বিভাগ। এতে করে প্রজনন, বংশ বৃদ্ধিসহ বাঘ অবাধ চলাচল করতে পাবে। আংকিত হবার কোর কারন নেই। সুন্দরবনকে বন্যপ্রাণীর জন্য সম্পূর্ন নিরাপদ করতে কাজ করছে বন বিভাগ।

পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের উপমন্ত্রী হাবিবুন নাহার তালুকদার বলেন, বর্তমান সরকার বাঘের সংখ্যা বাড়াতে নানামূখী পদক্ষেপ গ্রহন করেছে। সুন্দরবন দস্যুমুক্ত করা হয়েছে। যার সুফল কিন্তু দেখা যাচ্ছে। তিন বছরে ৮টি বাঘ বেড়েছে। সুন্দরবনে বাঘের সংখ্যা দিন দিন আরো বৃদ্ধি পাবে বলে তিনি মনে করেন।