1

বিশ্বখ্যাত অল-রাউন্ডার এখন বাসস্ট্যান্ড পরিস্কার করে সংসার চালান!

বিশ্বকাপের বাংলাদেশের বিশ্বসেরা অল-রাউন্ডার সাকিব আল হাসানের পারফরমেন্স নিয়ে সাড়া পড়ে গিয়েছিল ক্রিকেটবিশ্বে। আর বর্তমানে বিশ্ব ক্রিকেটে আলোচনার কেন্দ্রে ইংলিশ অল-রাউন্ডার বেন স্টোকস। হেডিংলি টেস্ট জিতিয়ে একসময়ের বদরাগী এই ক্রিকেটার এখকন মহাতারকা। এবার একটু পেছনে ফেরা যাক। নব্বইয়ের দশকে ক্রিকেট মাতিয়ে রেখেছিলেন আরেক অল-রাউন্ডার ক্রিস কেয়ার্নস। নিউজিল্যান্ডের সাবেক এই তারকা এখন কী করছেন জানেন?

ক্রিস কেয়ার্নস নামটা শুনলেই মনে পড়ে যায় ২০০০ সালের চ্যাম্পিয়নস ট্রফি ফাইনাল। ওই ম্যাচের শুরুতে সৌরভ গাঙ্গুলীর সেঞ্চুরিতে ভারতের জয়ের স্বপ্ন দেখছিল। মনে হয়েছিল সৌরভের হাতেই শিরোপা উঠতে যাচ্ছে। কিন্তু দলীয় ২২০ রানে ‘প্রিন্স অব ক্যালকাটা’ ফিরে যেতেই নেমে আসে বিপর্যয়। যুবরাজ, কাম্বলিরা সম্মিলিত চেষ্টায় মাত্র ৪৪ রান যোগ করতে সক্ষম হন। এর প্রধান কারণ ছিল ক্রিস কেয়ার্নসের কৃপণ বোলিং। এরপর ব্যাট হাতে ১১৩ বলে ১০২ রানের ইনিংস খেলে নিউজিল্যান্ডকে প্রথম এবং একমাত্র আইসিসি ট্রফি জিতিয়ে দেন কেয়ার্নস।

ক্রিকেট বিশ্বে এক বর্ণময় চরিত্র ছিলেন এই কিউই অল-রাউন্ডার। তার কোঁকরা চুল, শক্তিশালী চেহারা ঝড় তুলেছিল নারীদের মনে। ঝড় তুলেছিলেন তিনি ক্রিকেট মাঠেও। ২০০৪ সালে ক্যারিয়ারের সায়াহ্নে দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে একটি টেস্টে দেখা যায় কেয়ার্নস ঝড়। ২৯৬ রানে শেষ হয়েছিল জ্যাক ক্যালিসদের প্রথম ইনিংস। এরপর স্কট স্টাইরিস এবং ক্রিস কেয়ার্নসের ব্যাটিং কিউইদের রানের পাহাড়ে তুলে দেয়। ১৭১ বলে ১৫৮ রান করেন কেয়ার্নস। টেস্ট ক্রিকেটে সেটাই তার সর্বোচ্চ রান। বল হাতে সেই ম্যাচে ৪টি উইকেটও নেন তিনি।

২০০৪ সালেই নিউজিল্যান্ডের হয়ে জীবনের শেষ টেস্ট খেলেন তিনি। দল না জিতলেও তিনি নেন ৯ উইকেট। ২০০৬ সালে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে টি-টোয়েন্টি সিরিজ দিয়ে ক্যারিয়ারের শেষ আন্তর্জাতিক ম্যাচ খেলেন কেয়ার্নস। যদিও সাফল্য পাননি। মাত্র ২ রান করে আউট হয়ে যান। বল হাতেও কোনো উইকেট পাননি। কিন্তু এটা তার সামর্থের পরিচয় নয়। কারণ আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে ৮২৭৩ রান রয়েছে ক্রিস কেয়ার্নসের। রয়েছে ৪২০টি উইকেট। ১৭ বছরের ক্রিকেট ক্যারিয়ারে পেয়েছিলেন বিশাল খ্যাতি। তবে এত উজ্জ্বল ক্যারিয়ারে লেগে গেছে কালির দাগ।

২০১০ সালে ইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লিগের (আইপিএল) সাবেক কর্মকর্তা ললিত মোদি টুইট করে দাবি করেন, ২০০৮ সালে ক্রিস কেয়ার্নস ম্যাচ ফিক্সিং করেছেন। এর প্রতিবাদে কেয়ার্নস ললিত মোদির বিরুদ্ধে মামলা করেন এবং ক্ষতিপূরণ হিসেবে জিতে নেন বিশাল অঙ্কের টাকা। কিন্তু সাবেক কিউই ক্রিকেটার লুই ভিনসেন্ট এবং ব্রেন্ডন ম্যাকালাম ওই সময় জানান, তাদেরকেও ফিক্সিংয়ের প্রস্তাব দিয়েছিলেন ক্রিস! পরবর্তী সময় ভিনসেন্টের নাম জড়িয়ে পরে ম্যাচ ফিক্সিং কেলেঙ্কারিতে। তাকে আজীবন নির্বাসিত করা হয়।

এরপর সব ঠিকঠাক চললেও নিজেকে শোধারতে পারেননি ক্রিস কেয়ার্নস। যে কারণে ২০১৩ সালে আবারও ম্যাচ ফিক্সিংয়ের অভিযোগ ওঠে তার বিরুদ্ধে। যথারীতি সেই আইপিএলের মঞ্চে। তার বিরুদ্ধে অভিযোগ ওঠে যে, আইপিএল দল চণ্ডিগড় লায়ন্সের হয়ে ফিক্সিং করেছেন। সেই মামলা এখনও আদালতে বিচারাধীন। কিন্তু এই মামলার জন্যই ধীরে ধীরে সব হারাতে থাকেন কিউই অল-রাউন্ডার। একপর্যায়ে বলতে গেলে নিঃস্ব হয়ে পড়েন তিনি। সংসার চালাতে এখন তিনি নিউজিল্যান্ডে বাসস্ট্যান্ড পরিষ্কার করার কাজ করেন। তার আয় ঘণ্টায় ১৭ ডলার‍!